লোকজ চিত্রকলা: কালীঘাট পটচিত্র

স্থাপত্য ও নির্মাণ
শিল্পকলা
৪ জুন, ২০২৫
১৭
লোকজ চিত্রকলা: কালীঘাট পটচিত্র

পটচিত্র নিয়ে আলোচনায় উল্লেখ করেছিলাম কালীঘাটের পটচিত্রের কথা, বলেছিলাম এই বিশেষ ঘরানাটি নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করা উচিত।

এই চিত্রকলা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে কেন তার একটি সরল উত্তর হবেনা। ‘কালীঘাটের পটচিত্র’ শুধুমাত্র ভারতবর্ষের আরেকটি লোকচিত্র নয়, ভারতের একটি সময়কালের সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য সমাজ চিত্র এবং ট্রেডিশনাল ভারতে জনমানুষের মাঝে চর্চিত চিত্রকলার উপরে বাজার অর্থনীতির প্রভাব কিভাবে কোন নতুন দিক উন্মোচন করেছিল বা তার অবলুপ্তি ঘটিয়েছিল তার ঐতিহাসিক প্রমানও বটে। 

 

2

লেখক কাজী আনিস উদ্দিন ইকবাল

 

ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা লোকচিত্রের চর্চা হাজার হাজার বছর আগে থেকে প্রচলিত ছিল। স্থানীয়ভাবে কোনো উপজাতি, জনগোষ্ঠি, কোনো সামাজিক বর্ণের মানুষেরা শিল্পের চর্চা করেছে। এসব চিত্ররীতির মধ্যে যেমন মিল আছে তেমনি পার্থক্যও যথেষ্ট। ছবির করনকৌশলে বা বিষয়বস্তুতে ঘনিষ্টতা থাকলেও প্রকাশভঙ্গিতে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য খুবই স্পষ্ট।

পটচিত্রে সাধারণত পৌরানিক কাহিনী আঁকা হত। তাঁতে বোনা মোটা দীর্ঘ কাপড়কে নানা ধরণের প্রলেপ দিয়ে ছবি আঁকার উপযোগী করে তার উপর পর পর নানা ছবি দিয়ে একেকটা কাহিনী বর্ণনা করা হত। এই পটচিত্র ছিল প্রদর্শনীর আইটেম, প্রদর্শনীর সাথে আরও কিছু আয়োজন থাকত। এই দীর্ঘ পট (যে কাপড়ের উপরে ছবি আঁকা হয়) গুটিয়ে অথবা ভাঁজ করে রাখা হত স্থানান্তরের জন্য। এই ভ্রাম্যমান প্রদর্শনীর বিষয়টি পটচিত্রের স্বরূপ বুঝতে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যারা এই ছবি আঁকতেন তারা পটুয়া নামে পরিচিত হতেন। এটা তাদের পারিবারিক পেশা এবং বংশানুক্রমে পরিবারের প্রায় সকলের অংশগ্রহনে এই ছবিগুলি পূর্ণতা পেত। পূর্বের ‘পটচিত্র’ লেখাটিতে পটুয়াদের সম্বন্ধে আরও বিশদ বর্ণনা করেছি। বৃহৎ বঙ্গ এবং উড়িষ্যায় পটচিত্রের প্রচলন ছিল বেশী, তবে বঙ্গদেশে (বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা) ছবির বিষয় ধর্মের চৌকাঠ পেরিয়ে নানা জনপ্রিয় লোককাহিনীকেও গ্রহন করেছে, উড়িষ্যায় হিন্দু ধর্মের পৌরানিক কল্পকথাই ছিল প্রধান। বাংলাদেশের পটুয়ারা অনেকেই ছিলেন মুসলমান, এসব ছবি তারা ধর্মীয় আবেগে যে আঁকতেন না সেটা অনস্বীকার্য। পটচিত্র কিন্তু শুধু ছবি নয় গল্পছবি, দীর্ঘ ছবির মধ্যে পর পর ফ্রেমে একটা ধারাবাহিক কাহিনী থাকে। ছবি টানিয়ে তার সাথে গান, কবিতা এবং অভিনয়ের মাধ্যমে সেই গল্প বুঝানোর একটা বহুমাত্রিক প্রচেষ্টা। এসব  করে দর্শক-শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করতে পারলে তারা খুশী হয়ে এদের কিছু অর্থ উপহার দিলেই তাদের সংসার খরচ উঠত।

83 20 7 13 4 52 27mআনোয়ার চিত্রকর-এর আঁকা কালীঘাট পটচিত্র

The Tarakeshwar Murder Elokeshi Offers a Betel–leaf to the Seated Mahant, Watercolour Drawing With Silver.তারাকেশ্বর হত্যাকান্ডের এলোকেশী উপবিষ্ট মহন্তকে একটি পান-পাতা প্রদান করছেন_ছবি উৎস: Kalighat paintings by W.G.Archer 

A Courtesan Arranging a Flower in Her Hair, India, C. 1800s, Gouache on Paperএকজন গণিকা তার চুলে ফুল সাজিয়েছেন (ভারত, আনুমানিক ১৮০০-এর দশক)_ছবি উৎস: Kalighat paintings by W.G.Archer 

 

 

এই ছবিগুলি কোন প্রতিষ্ঠানের অর্ডারে তৈরী না, বরং সাধারণ দর্শক-শ্রোতার চাহিদা মোতাবেক রূপায়িত। গ্রামীন জনপদের মানুষেরা এককভাবে একটা ছবি ক্রয় করতে আগ্রহী হতেন না, কারণ ছবিগুলো হ’ত দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল। এ দিক থেকে ব্যতিক্রম ছিল  ‘চৌকা পট’, আকারে ছোট এবং বিষয় কোন ধারাবাহিক গল্পের বদলে সুনির্দিষ্ট কোন গল্পের চরিত্র যেমন, কোন দেব-দেবী, বা বিশেষ পবিত্র প্রাণী, ফুল বা কোন প্রতীকী উপস্থাপনা। চৌকাপট ছোট বিধায় ক্রমশ গৃহস্থের সংগ্রহের তালিকায় স্থান পেতে লাগল। এই চৌকা পটই আমাদের আলোচ্য কালীঘাটের পটের পূর্বসূরি।

 

কালীঘাট পটচিত্র 

১৮০৯ খৃষ্টাব্দে বড়িশার সাবর্ণ জমিদার শিবদাস চৌধুরী, তাঁর পুত্র রামলাল ও ভ্রাতুষ্পুত্র লক্ষীকান্তের উদ্যোগে আদিগঙ্গার তীরে বর্তমান কালী মন্দির নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে মন্দিরটি ৯০ ফুট উচুঁ। তবে ১৫ শতকের মনসার ভাসানে এবং ১৭ শতকের চন্ডী মঙ্গলে কালীঘাটের উল্লেখ আছে, সে হিসাবে এই মন্দিরের একটি প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে।

 
 

 

১৮৩০-১৯৩০ সালের মধ্যে কালীঘাটের মন্দিরের পত্তন হয়ে কলকাতা নগরীর প্রধান তীর্থ স্থানে পরিনত হয়। বৃটিশ শাসনকালে প্রথম যুগে কলকাতা ছিল তাদের রাজধানী, ফলে এই নগরী যেমন আয়তনে দ্রুত বেড়ে উঠছিল তেমন জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। হিন্দু ধর্মাচারণে ‘কালী’ খুব শক্তিশালী দেবী হিসাবে বিবেচিত হয়, ভক্তরা মন্দির দর্শনে পূণ্য লাভের আশায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। মন্দিরের প্রবেশপথে পূজার নানা সামগ্রীর পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য রকমারী স্মারক পণ্য বিক্রির পশরা সাজিয়ে বসে একদল মানুষ।

পূজা-পার্বনে বাংলাদেশের গ্রামে মন্দির প্রাঙ্গণেও মেলা হয়ে থাকে। সেইসব মেলায় নানা রকম মজার মজার খাবার যেমন বিক্রি হয় তেমন পটুয়ারাও কোনো গাছ তলায় তাদের গল্প-ছবির প্রদর্শনী করতেন, গান-বাজনাও চলত। এই কালীমন্দিরের প্রাথমিক যুগে পটুয়াদের সেসব আয়োজনের কথা ঘটা করে ইতিহাসে লেখা না থাকলেও সহজেই অনুমান করা যায়

এখানে ‘গ্রাম্য মেলার’ সাথে স্থায়ী মন্দিরের পার্থক্যটা খেয়াল করতে হবে, সেই সাথে যুগের পটভূমিটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।

 

কালীচরণ ঘোষের আঁকা কালীঘাট পটচিত্র - গণিকার চুল সাজানো_ছবি উৎস: Kalighat paintings by W.G.Archer Courtesan Dressing Her Hair , by Kali Charan Ghosh, Kalighat.png

 

Y

কলকাতা ঔপনিবেশিক বৃটিশ সরকারের প্রধান শহর, সেখানে ব্যবসা-বানিজ্য অন্যান্য অনেক বিষয়ের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। নগরকেন্দ্রিক একটা মধ্যবিত্ত শ্রেনী গড়ে উঠছে এবং চাকরিজীবী শ্রেনীর হাতে মাসিক নগদ অর্থ আসছে যা কৃষিজীবী সমাজে সম্ভব ছিল না। কৃষি নির্ভর মানুষের কাছে নগদ অর্থ আসে ফসল বিক্রি করে, যা কিনা বছরের কয়েকটি সময়ে হতে পারে। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের সকল প্রকার চাহিদা তৎক্ষণাৎ না মিটিয়ে জমিয়ে রাখতেন ওরকম অর্থ পকেটে আসার জন্য। নগর জীবনের সাথে এখানেই গ্রামীন জীবনের সবচেয়ে বড় পার্থক্য। শহরে থাকতে হলে প্রতিদিনই কিছু না কিছু খরচ হবে, সেজন্য শহরের বাজার সবসময় ক্রেতায় গমগম করে। 

 
 

Kalighat Painting 8শিব, একজন মহান তপস্বী (১৮৬৫-১৮৭০)_ছবি উৎস: Kalighat paintings by W.G.Archer 

কলকাতার পূর্বে বাংলাদেশের যেসব শহর ছিল সেগুলি ছিল প্রধানত প্রশাসনিক, কিন্তু কলকাতার শুরুই হয়েছে বানিজ্য থেকে। বৃটিশরা তাদের প্রশাসন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগ এবং নিয়মিত অফিস টাইম অনুসারী চাকরিজীবীদের মাধ্যমে এক নতুন নগর সংস্কৃতির সূচনা করে। এই সংস্কৃতির মূলে থাকে ভোগবাদ, ইংরেজীতে বললে Consumerism। 

শহরে মানুষ অকারনেও অর্থ ব্যয় করে, বাজারে সুসজ্জিত দোকানগুলি সর্বক্ষণ তাদের প্রলুব্ধ করতে থাকে। কলকাতায় বিশাল চাকরিজীবী কেরানীকুলের পাশাপাশি ছোট বড় স্থানীয় ব্যবসায়ী শ্রেনী বসবাস করতে শুরু করে। এই শেষোক্ত শ্রেনীর সাথে ইংরেজ শাসককুলের সখ্যতা গড়ে উঠবার ফলে বিদেশী শাসকবিরোধী মনোভাব অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল।

 

কৃষিজীবী বঙ্গীয় সমাজে প্রচলিত ধর্মের অনুসারী হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ কেউই ভোগবাদী ধারার জীবন যাপন করতেন না, তারা ত্যাগের মহিমা প্রচার করতেন। ভোগ-বিলাস করবার জন্য যথেষ্ট অর্থও তাঁদের থাকত না, ওগুলো ছিল রাজা-বাদশাহ বা তাদের আমীর ওমরাহদের বা ধনী ব্যবসায়ীদের বিষয়। ইংরেজ শাসকদের কৃপাভাজন ব্যবসায়ী এবং জমিদারি প্রথা চালু হবার সূত্রে বাঙালি নব্য ধনী শ্রেনী গড়ে উঠছিল, এরা কলকাতা শহরে ঘর বাড়ি বানিয়ে থাকা শুরু করেন, যারা মফস্বলে থাকতেন তারা নিয়মিত কলকাতা শহরে আসতেন।

 

নব্য ধনী পরিবারের পুরুষেরা ইউরোপের অনুকরণ করতে চাইতেন কিন্তু মুখে তেমন ইংরেজি বুলিও ফুটত না আবার সাজপোষাকে সম্পূর্ণ প্রভুদের মত হতে চাইলে ঠিক মানাত না, ওদিকে রাজা বা নবাবদের চাল-চলনে যে আভিজাত্য ছিল তা অর্জন করাও তাদের পক্ষে কঠিন ছিল। তাই নবাবী যুগের এবং বিলাতী রসনার সাথে মিশেল দিয়ে এক জগাখিচুড়ি সাজ-পোষাক ও আচার আচরনের রীতি দাঁড়িয়ে যায়। এদের এই অদ্ভুত ব্যবহার শুধুমাত্র ইংরেজদের মাঝে হাস্যরসের উদ্রেক করত না, দেশের মানুষও এসব উন্নাসিকতা মোটেও সুনজরে দেখত না।

Balarama Standing With Krishna, Kalighatকৃষ্ণের সঙ্গে দাঁড়িয়ে বলরাম_ছবি উৎস: Kalighat paintings by W.G.Archer 

22হুক্কা হাতে একজন বাবু

বাংলাদেশে হিন্দু পুরুষ মানুষকে সম্মান করে ‘বাবু’ বলা হয়, এতে তার সামাজিক মর্যাদা রক্ষা হয় বলে একটা ধারণা প্রচলিত ছিল। কলকাতা কেন্দ্রিক অর্থবান লোকদের সাথে সদ্ভাব রক্ষা করার জন্য ইংরেজরাও তাদের ‘বাবু’ ডাকত। ফলে তাদের অসংগতিপূর্ণ চাল-চলনকে তারা ‘বাবু কালচার’ নাম দিয়ে দিল। ইংরেজ শাসনের মধ্যযুগে কলকাতার উচ্চবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সমাজে এই বাবুদের প্রভাব খুব বেশী ছিল।

 

বাংলা ও উড়িষ্যার আবহমান কালের পটচিত্রের বিষয়বস্তু দুটি রাজ্যে দুই দিকে ঝুঁকে পড়ে। উড়িষ্যায় মন্দির কেন্দ্রিক প্রদর্শনীর সুযোগ বেশী থাকায় হিন্দু পৌরানিক কাহিনীগুলো বেশী চিত্রিত হতে থাকে, তাছাড়া তালপাতা ব্যবহার করায় পটগুলি আকারে ছোট এবং সহজে বহনযোগ্য হিসাবে টিকে যায়। অন্যদিকে বাংলার পটুয়ারা বেশীরভাগ মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন, সেজন্য তাদের দেব-দেবীর চিত্রাংকনের প্রতি তেমন নিষ্ঠা ছিল না, তারা প্রচলিত গল্পকথা, গাজীর গান,  মনসা মঙ্গল, কারবালার নৃসংশতা ধরনের গল্পও সহজেই তাদের গল্পচিত্রের তালিকায় যোগ করে নিয়েছিলেন।

  কলকাতার এই মন্দিরে এসে পটুয়ারা উপলব্ধি করলেন শহরের মানুষের দীর্ঘ পটুয়া গীত শোনার অবসর নেই, তারা মন্দিরে পূজা দিতে এসে খরচ করতে কার্পণ্য করে না, এমনকি ফেরৎ যাবার সময়ে আশে পাশের দোকান থেকে কিছু স্মারক কিনে নিয়ে যায়। তাদের ‘চৌকা পট’ আকারে ছোট এবং ধারা বর্ণনামুক্ত হওয়ায় বিক্রিও হয়ে যায়। ২৪ পরগনা এবং মেদিনিপুরের পটুয়ারা কালীমন্দিরে ভীড় জমালেন। এরা গ্রামীন সমাজের আটপৌরে চিন্তার দাস নন, ভক্তদের জন্য দেবী কালী, রাম-লক্ষণ, হনুমান বা রাধা-কৃষ্ণের ছবির পাশাপাশি পোষ্য প্রাণী যেমন বিড়াল, পাখী, মাছও আঁকলেন। শিল্পীর চোখে সমাজের অসংগতিও সহজেই ধরা পড়ল, তাদের পটে উঠে এল সাংসারিক ঝগড়া-ঝাটি, বাবু মশায়ের হুক্কা বিলাস, মেয়েদের কেশচর্চার মত অতীতে অবহেলিত বিষয়।
 

Kalighat Patachitra 2

  বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিল্পীর এমন স্বাধীনতা ভারতবর্ষের লোকজ শিল্পে এর আগে ছিল না বলা চলে। ‘কালীঘাটের পটচিত্রের’ আয়ুষ্কাল ছিল মোটামুটি দেড়শ বছর, নিম্নবর্গের মানুষের আঁকা ছবি হিসাবে এই উপধারাটি লোকচিত্র হিসাবে গণ্য হয় কারণ, এই ছবির ভিত্তি আবহমানকালের ‘পটচিত্র’ এবং সেই পটুয়ারাই বা তাদের বংশধরেরাই কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়ে এই মাধ্যমটির সূচনা করেছিলেন।

পটুয়াদের ছবি আঁকা ছিল পারিবারিক কাজ অর্থাৎ পরিবারের প্রায় সকল সক্ষম মানুষই এই চিত্র নির্মাণে অংশগ্রহন করত। কালীঘাটের পটচিত্রও এই নিয়মের ব্যাতিক্রম ছিল না, সবচেয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মানুষটি প্রথমে ড্রইং করতেন এরপর পর্যায়ক্রমে কেউ চারিপাশের বর্ডার আঁকতেন, কেউ পটভূমিতে দরকার হলে কিছু কাজ করতেন, কেউ ফিগারের রং ভরাট করতেন, কেউ মোটা বা চিকন রেখায় কাপড়ের বা চুলের ডিটেইল করতেন, এক কথায় একটা ফ্যাক্টরির ‘লাইন প্রোডাকশন’। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, প্রায় শত বছর ধরে আঁকলেও ‘কালীঘাটের পটচিত্র’ কিন্তু বিপুল সংখ্যক মৌলিক চিত্র হতে পারেনি। যেমন, একটি রাধা-কৃষ্ণের ছবি যদি জনপ্রিয়তা পায় তাহলে সেটিই হাজার বার কপি করা হবে। এমন বেশ কিছু চিত্র পটুয়ারা প্রমিত করে নিয়েছিলেন, সেই আদর্শ ছবিটির অনুকরণে পরিবারের দক্ষ মানুষটি নতুন ছবিটি একে দিলেই পরবর্তী কাজগুলি শুরু হয়ে যেত।

Water Snake Swallowing a Fishজলজ সাপ (ঢোঁড়া) মাছ গিলে ফেলছে_ছবি উৎস: Kalighat paintings by W.G.Archer 

70168751 2390163044392922 6677766923633033216 Nমেদিনীপুরের পটুয়াদের আঁকা পটচিত্র_ছবি উৎস: Tejas Art Gallery

Fw১. ময়ূর এবং গোলাপ হাতে লক্ষ্মী দেবী  ২. আনোয়ার চিত্রকর-এর কালীঘাট পটচিত্র

 

ছবি আঁকার কাজটি করতে হত খুবই দ্রুতগতিতে। সেজন্য তারা অনেক ছবি অর্ধসমাপ্ত করে রাখত অর্ডার পেলে যাতে দ্রুত কাজ শেষ করে দিতে পারে। এমনও হত অনেক সময় যে, ক্রেতা মন্দিরে প্রবেশের সময়ে অর্ডার দিয়ে পূজা শেষে ফেরৎ যাবার সময়ে ছবি নিয়ে যেতেন।

 

ইউরোপের শিল্পচর্চায় শিল্পীর ব্যক্তিসাতন্ত্র প্রাধান্য পায়, কালীঘাটের সময়কালে ইউরোপে শিল্পীরা পুরানো ও ধর্মীয় শৃঙ্খলা বর্জন করে, নতুন যুগের সূচনা করছিলেন। শিল্পের জগতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিল্পীদের কাজ ও চর্চা শিল্পবোদ্ধাদের বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করে। ইউরোপীয় শিল্পবোদ্ধাদের আগ্রহে সে পর্যায়ে ভারতবর্ষে হারিয়ে যাওয়া বা অবহেলিত অনেক শিল্পের পুনর্জন্ম হয়। সার্ভে করতে গিয়ে পুূনরুদ্ধার হয়েছে অজন্তা-ইলোরা খাজুরাহোর মত চিত্রকলা, ভাস্কর্য ও স্থাপত্য।

 
কালীঘাটের পটচিত্রও তাদের নজর এড়ালোনা। বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে পটুয়াদের বৈচিত্র্য তাদের আকর্ষণ করল। এই স্বল্পমূল্যের অথচ দক্ষ ড্রইং নির্ভর ছবিগুলো তারা সংগ্রহ করা শুরু করলেন। কালীঘাটের পটচিত্রে সমকালীন সমাজের যে বিদ্রুপাত্মক চিত্র প্রকাশ পেত তা রীতিমত ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে গন্য করা হয়। মালিকদের আগ্রহ দেখে স্থানীয় উচ্চ ও মধ্যবিত্তের মধ্যে এই ছবি সংগ্রহে বিশেষ উৎসাহ দেখা দিল। কলকাতায় তখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে পেইন্টাররা অর্থ উপার্জনের আশায় এসেছিলেন, তারা উচ্চপদস্থ ইংরেজ রাজ কর্মচারী এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের ছবি আঁকতেন, ইউরোপীয় ধারায়, বাঙালি জমিদাররাও তাদের দরবারে নিজেদের গৌরব বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে ওদের ফরমায়েশ দিতে লাগলেন। এসব তৈলচিত্র ছিল খুবই ব্যয়বহুল। ইউরোপীয় আর্টিস্টরা যেসব পোর্ট্রেট আঁকতেন সেগুলোতে ব্যক্তির চেহারা ফুটে উঠত, কিন্তু পটচিত্রে সে সুযোগ নাই, গড়গড়াসহ একজন বাবু কোন ব্যক্তিবিশেষ নয়। তবুও এই ‘বাবু’ জনপ্রিয় হল। শিল্প বিচারে পোর্ট্রেটের চেয়ে এই বাবুদের প্রতীকী চিত্র মোটেও কমদামী নয়। ঔপনিবেশিক বাংলায় এই নতুন শ্রেনীর উত্থান বাঙালি জাতির চিন্তা চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। পটচিত্রে তৎকালীন সমাজের ধনী লোকদের হাস্যকর ক্রিয়াকলা চিত্রায়িত করা ছাড়াও শিল্পীরা দৈনন্দিন জীবনের অনেক ছবি আঁকতেন যা আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও খুঁটিয়ে দেখলে বেশ অবাক হতে হয়। এসব পটচিত্রে ছবির চরিত্রগুলি সরাসরি মুখোমুখি আঁকা হয়নি, ইষৎ কৌনিকভাবে উপস্থাপিত, এই ড্রইং এর কৌশলটি বেশ উচ্চমার্গীয়, অজন্তার গুহাচিত্রে পাওয়া যায়। কালীঘাটের পটচিত্রে পটভূমিতে কোন রং দেয়া হত না, ছবির মূল ফিগার ফুটে উঠত কালো মোটা বা চিকন রেখায়, ফিগারের গায়ে বা পোষাকে জলে গুলানো রং দেয়া হত, সেই রং প্রকৃতির থেকে আহরিত। কালীঘাট পটচিত্রে ব্যবহৃত রঙগুলি ইষদচ্ছ। হলদে রঙের উৎস আমরা রান্না করার জন্য যে হলুদ ব্যবহার করি, অপরাজিতা ফুলের পাপড়ি থেকে নীল রং, কালো রং আসত ভূষা কালি থেকে। এমনিভাবে লাল, খয়েরি বা সাদা নানা স্থানীয় উপাদান থেকে সংগ্রহ করা হত। সারা ভারতেই এই ধরনের উৎস থেকে রং তৈরির কৌশল চালু ছিল। অবশ্য পরবর্তীকালে ইউরোপ থেকে আসা রং সেই স্থান দখল করেছে। 

D9314ceffd6ff2d623abd6e03e8812baযামিনী রায়ের আঁকা পটচিত্র 

 

কালীঘাটের পটের মৌলিকত্ব তার উজ্জ্বল রঙে, ঢেউয়ের মত রেখার গতি আর সরাসরি উপস্থাপনায়। কাগজে আঁকা সাদা পটভূমিতে নানা ধরনের ফিগারের আউটলাইন আঁকতে খুবই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন পটুয়ারা। শুধু আউটলাইন নয়, ফিগারের ভিতরে ছোট ছোট সূক্ষ্ম রেখা দিয়ে ছবিটির মধ্যে একটি সামঞ্জস্য তৈরী করা হত। রং দেবার বেলায় ভারতীয় ঐতিহ্যগত প্রথায় শুধুমাত্র একটি রং ব্যবহার করতে দেখা যায়, সেটা না করে তারা হালকা শেড ব্যবহার করেছেন ত্রিমাত্রিক ভাব আনার জন্য। এই ধারনাটি হয়ত পশ্চিমা প্রভাবের ফল। ছবির চরিত্রগুলিকে কিছুটা কৌনিকভাবে উপস্থাপন যেমন ভারতীয় আদর্শ থেকে এসেছে তেমনি বিপরীতে সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ ছবিতে তুলে ধরা এমনকি বিদ্রুপাত্মকভাবে হলেও, সেটা কলকাতার পশ্চিমা প্রভাব বলা যায়।

Capture১. বিবি চুল সাজাচ্ছেন ২. একজন গণিকা তার প্রশংসাকারীর সাথে ৩. হুক্কা হাতে একজন গণিকা ৪. বিবি ঝাড়ু হাতে বাবুকে মারছেন ৫. একজন মহিলা তার পোষা প্রাণীকে খাবার দিচ্ছেন

 

India, Kalighat Painting, 19th Century   Two Aspects of Kali  Kali Enshrined   1980.216.b   Cleveland Museum of Artকালীর দুটি দিক (ঊনিশ শতকের কালীঘাট পটচিত্র)_ছবি উৎস: Kalighat paintings by W.G.Archer 

কল্পনার পিছনে অভিজ্ঞতা কাজ করে। বাস্তবের সাথে কল্পনার মিশেল দিয়েই শিল্পী স্বপ্ন আঁকেন। ঘোড়া আমরা বাস্তবেই দেখি কিন্তু পঙ্খিরাজ ঘোড়া আঁকতে পাখির ডানা জুড়ে দিলে দোষ কি? দেবী কল্পনায় অনেকগুলি হাত থাকলে তার নানাবিধ শক্তির প্রতীকী উপস্থাপন হয়। ভারতবর্ষের ধর্মীয় আবহে এই রূপদানের প্রথা দীর্ঘকালের চর্চার মধ্যদিয়ে এতটা দৃঢ় শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল যে কোন দেবতাকে প্রকাশ করতে কি কি চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে বা একটা গল্প ছবির ফ্রেমে কে কতটা গুরুত্ব পাবে সবই পূর্ব নির্ধারিত। সেই দিক থেকে বাংলার পটচিত্র অনেকটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, কালীঘাট পর্বে এসে পটুয়ারা কিন্তু আরও স্বাধীন হলেন, তারা সমসাময়িক বিষয় আঁকলেন, সমাজের অসংগতি তুলে ধরলেন।

 দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের পুরোহিত তখন স্বাধীনতা প্রচার করছেন, ‘যত মত তত পথ’, মন্দিরে ভীড় করছেন নিম্নবর্ণের মানুষরাও। নগর জীবনের প্রভাবে তাদের কাছে দেবতা শুধু আরাধ্য নয়, ভালবাসারও, তার ছবি শুধু পূজার জন্য নয় গৃহের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যেও। এভাবে ছবি একটা সংগ্রহের আইটেমে পরিনত হল। বৃটিশ ভদ্রলোকেরা কালীঘাটের পটচিত্র আগ্রহের সাথে সংগ্রহ করে তাদের দেশের যাদুঘরে স্থান দিলেন। নতুন ব্যাখ্যা চলে এল, ‘পটুয়ারা ভারতবর্ষের সনাতনী ধ্যান-ধারনার অনুসারী মানুষদের চেয়ে অনেক আধুনিক ও বাস্তববাদী’। শিল্পকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এনে একটা ছবি বিক্রির বাজার প্রতিষ্ঠা করেছেন। কালীঘাটের পটুয়ারা ইউরোপীয় উজ্জ্বল রং এবং ছবি সমাপ্ত হলে তার উপর গ্লেইজ দেয়াও শুরু করলেন।

Kalighat Patachitra 17 Anwar Chitrakarআনোয়ার চিত্রকর-এর আঁকা কালীঘাট পটচিত্র

 

3 in a Row১. রাধা-কৃষ্ণের কালীঘাট পটচিত্র ২. তবলা, বীণা হাতে দম্পতি ৩. মাছ খেতে থাকা বিড়াল

 

সারা ভারতেই তাদের ছবি ছড়িয়ে পড়ল, বিদেশেও যাচ্ছে, আরও বেশী উৎপাদন করার তাগিদে এক ধরনের ছাপচিত্রের পদ্ধতি চলে এল।(ব্লক প্রিন্ট ভারতবর্ষে অজানা ছিল না, কলকাতায়ও ‘বটতলার ছবি’ নামে একরকম ব্লক প্রিন্ট সেসময়ে পাওয়া যেত) ফলে জনপ্রিয় বিষয়গুলি নির্ভূলভাবে হাতে ড্রইং করার দরকার নেই, এতে সময় কম লাগছে, কিন্তু বিপদ এল অন্যদিক থেকে, জার্মানীর সুচতুর ব্যবসায়ীরা পটচিত্রের জনপ্রিয়তা ও বাজারের আয়তন হিসাব কষে এসব ছবির ছাপচিত্র তৈরী করে ফেললেন। আরও ভাল টেকসই চকচকে কাগজে প্রিন্ট করে ভারতের বাজারে ছাড়া হল। এই প্রতিযোগিতায় কালীঘাটের পটুয়ারা হার মানল, পটুয়াদের সন্তানরা পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিল।

 

বিশ শতকের গোড়ার দিকে এভাবে বাংলার এই ক্ষণস্থায়ী লোকজ চিত্রধারাটি অবলুপ্ত হয়। তবে এই ধারার নানা সম্ভাবনা নিয়ে ভারতবর্ষের কয়েকজন শিল্পগুরু কিছু আঙ্গিক ধরে রেখে আধুনিক ভারতের শিল্পধারা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, তাদের সেই ধারা সম্বন্ধে কিছুটা আলোকপাত করা দরকার।

ছবিতে ফিগারের শেড দিয়ে কিছুটা ত্রিমাত্রিকতা আনার চেষ্টা হয়ত কালীঘাটের পটের পূর্বেও ভারতবর্ষের ছবিতে করা হয়েছে, যেমন রাজপুত কাহিনীর ইলাস্ট্রেশনে (১৬৯০ সন) এই ধরনের কৌশল ব্যবহৃত হয়েছে। চতুর্থ শতাব্দীতে গুপ্ত রাজাদের সময়ে তৈরী মন্দিরে দেয়ালচিত্রেও সুন্দরী অপ্সরাদের পরিধেয় সিল্কের বস্ত্র আঁকতে ওরকম শেড ব্যবহার করা হয়েছে।

 

Aoi Kalighat Jamini 009যামিনী রায়ের আঁকা চৌকা পট 

কালীঘাটের পটচিত্রের উত্থান ও তার স্রোত শুকিয়ে যাওয়ার সময়কালটুকু মোটামুটি ৩টি পর্বে ভাগ করা যেতে পারে।

 

১৮০০ সাল থেকে এই চিত্রধারার শুরু এবং তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো পরিপক্ব হয়ে ওঠা এবং ২য় পর্বে, অর্থাৎ ১৮৯০ নাগাদ এই ছবিতে নানা ধরনের বিষয়, ফর্ম এবং নতুন নতুন রঙের ব্যবহার নিজস্ব পরিচয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে এবং শেষ পর্ব ১৯০০-১৯৩০ সময়কালে কালীঘাটের পটচিত্রের ক্রমশ শুকিয়ে যাওয়ার করুণকাল।

যামিনী রায় আধুনিক ধারায় প্রশিক্ষিত ভারতবর্ষের বিখ্যাত শিল্পী, তাদের মতো কয়েকজন শিল্পী পশ্চিমা স্রোতে গা না ভাসিয়ে ভারতের নিজস্ব ধারা সৃষ্টির পথ অন্বেষণ করছিলেন। যামিনী রায়, বাংলার আনাচে কানাচে নানা শিল্পরূপ প্রগাঢ় পর্যবেক্ষণ করে, বিশেষ করে বাঙলার আবহমানকালের পটচিত্র অনুশীলন করে কালীঘাটের পটচিত্রের পাশাপাশি নতুন ঘরানার ছবি আঁকা শুরু করলেন।

 

তার ছবিতে পটচিত্র থেকে আহরিত কিছু নির্যাস থাকলেও উপস্থাপনায় অনেক পার্থক্য। প্রথমত যামিনী রায় বাংলার মাটির রঙের পটভূমি তৈরী করলেন, পটচিত্রের কৌনিক উপস্থাপনা বজায় রইল না, কালীঘাটের চিত্রের সরাসরি বাস্তব এবং কৌতুকপূর্ণ ও মেয়েদের বলিষ্ঠ বা সক্রিয়তার ছবির বদলে এক ধরনের চিরন্তনতার প্রকাশই মুখ্য করে তুললেন। তাঁর ছবিগুলো নিম্নর্বগের মানুষের বহুযুগের ধারাবাহিক দক্ষতার অগ্রযাত্রা নয় বরং সেগুলো ‘যামিনী রায়ের ছবি’। তাঁর রেখাগুলো প্রশিক্ষিত এবং সারা দুনিয়ার রেখাঙ্কনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, তাঁর ফিগারের চোখ সরাসরি দর্শকের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং এই চোখকে তার নিজের স্টাইল হিসাবেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তার অনুসারী শিল্পীরাও কালীঘাটের বিষয় সমকালীনতাকে পরিহার করেছেন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী কামরুল হাসানও নিজেকে ‘পটুয়া’ পরিচয় দিতেন, তার ছবিতেও যামিনী রায়ের ছায়া খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়।

Three Pujariansযামিনী রায়ের আঁকা 'তিন পূজারিণী'

 

 

যামিনী রায় প্রতিষ্ঠিত শিল্পী, তিনি ছাপচিত্রের প্রবল চাপে ক্ষয়িষ্ণু কালীঘাটের পটচিত্রের অবলুপ্তি হয়ত অনুমান করেছিলেন, তাই তিনি পটচিত্রের কিছু আঙ্গিক নিজের কাজের মধ্যে আত্মস্থ করে নতুন প্রকাশভঙ্গির সূচনা করলেন। দেড়শো বছরের এই চিত্ররীতি যামিনী রায় এবং তার অনুসারীরা ভিন্ন প্রকৃতিতে রূপ দেবার চেষ্টা করলেন, নাকি ঐ ধারাটিকে শেষ করে দিলেন তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। 

 

 

আপনার মতামত দিন

কমেন্ট

Logo
Logo
© 2025 Copyrights by Sthapattya o Nirman. All Rights Reserved. Developed by Deshi Inc.