সার্ক ফোয়ারা

স্থাপত্য ও নির্মাণ
শিল্পকলা
৮ নভেম্বর, ২০২৩
১,৭৫৫
সার্ক ফোয়ারা

তথ্য সংগৃহীত : "স্থাপত্য ও নির্মাণ" (১ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, অক্টোবর '৯২)

নির্মাণ সময়কাল : ১৯৮৫

লেখক : প্রকৌশলী মনীষ পাল

 

প্রকৌশলী মনীষ পাল
সপ্তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে হোটেল সোনারগাঁও-র মোড়ে নির্মিত করা হয় দৃষ্টি নন্দন সার্ক ফোয়ারা। মাত্র ৪২ দিনের সল্প সময়ে এই নির্মাণ চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সাথে অতিক্রম করে সংশ্লিষ্ট সকলেই সাধারণের প্রশংসা ও ধন্যবাদ কুড়িয়েছিল। পান্থপাথ, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ও সোনারগাঁও সড়কের আন্তসংযোগস্থলে এই ফোয়ারা নির্মিত করা হয়। দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা ট্রাফিক সমস্যা সমাধানই ছিল এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য নিয়েই প্রথমত নগরীর বিভিন্ন সংযোগস্থলের সড়কগুলোর উন্নয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে সার্ক সম্মেলনকে সামনে রেখে নগরের সৌন্দর্যবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সংযোগ সড়কগুলোর কেন্দ্রস্থলে ফোয়ারা নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।0f90a999 E1dd 4690 86d9 Fcecac9701b5
F074458c D526 443f 8e19 4fdb388c656a৩২ ফুট উঁচু ফাঁপা স্টেইনলেস স্টিল এর পিলার আকৃতির সাতটি কাঠামোর প্রতিটিতে একটি করে প্রজাপতির পাখা সদৃশ সাতটি কৌণিকভাবে হেলানো প্রলম্বিত অংশ রয়েছে যা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সাত জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতির নিদর্শন বহন করে। এই অংশটুকু প্রথিতযশা ভাস্কর নিতুন কুণ্ডুর সৃষ্টি। এই ভাস্কর্যটির বৃত্তাকার পদমূল তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। একেবারে ভেতরের বৃত্তটির ব্যাস ২১ ফুট যা কিনা একটি উল্টানো থালার মতো , এর উপর দিয়ে পানি উপচিয়ে পড়ে। এটি কংক্রীটের এবং মার্বেল পাথর দিয়ে cladding করা, নীচে দিয়ে আলোর ব্যবস্থা থাকায় ঝরে পড়া পানি আলোকিত হয়ে উঠে। পরের বৃত্তটি ৪২ ফুট ব্যাসের একটি জলাধার। এখান থেকে পিচকিরীর মত পানি ছিটে ভাস্কর্যের গায়ে আবার কোথাও পানি অল্প উপরে উঠে ভেঙ্গে পড়ছে আপন ভারে। জলাধারটির কাঠামো নির্মাণে ব্যবহার করা হয় রিইনফোর্সড সিমেন্ট কনক্রিট এবং তার উপরিভাগে নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য বসানো হয় সিরামিক গ্লেইজড্ টাইলস্।

জলাধারের ভেতরে ছোট বড় মিলিয়ে মোট ২১ টি নাজ্ল পানি ছিটানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। জলাধারের বাইরের প্রান্তসীমা ঘেঁষে চোদ্দটি বাতির সাহায্যে লাল, সবুজ, হলুদ তিন রঙের আলো পানির প্রবাহ পথে যেন ছড়িয়ে পড়ে তার ব্যবস্থা করা আছে। কিছুক্ষণ তিনটি একসাথে জ্বলবার পর প্রথমে হলুদ এবং পরে সবুজ বাতিগুলো আস্তে আস্তে নিভে যায়। এভাবে একটি চক্র সম্পূর্ণ হয়। অবিরাম জ্বলতে থাকা লাল বাতিগুলোর ওপরে সবুজ ও হলুদের পরপর উপরিস্থাপনে পরবর্তী আলোকচক্র শুরু হয়। স্বনিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এই চক্র চালু থাকে। পরবর্তী এবং সবশেষ বৃত্তটি ১০৫ ফুট ব্যাসের চত্বর যা ষড়ভুজাকৃতির নতুন বাজারজাত পেভমেন্ট টাইলস দিয়ে আচ্ছাদিত। চত্বরের উচ্চতা খুব বেশি নয়। এর ভেতরে চারপাশে গুচ্ছগুচ্ছ গাছের চারা লাগিয়ে তৈরি করা হয় সাতটি ‘সবুজ বলয়’। এই চত্বরের পরিসীমার খাড়া দিকটিতে দেয়া আছে কনক্রিটের ঝালর (edging)। সোনারগাঁও রোড, পান্থপথ এবং কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ এর যে পাঁচটি সড়ক সংযোগ স্থলে এসে মিশেছে সেগুলোর ফুটপাথ এবং ডিভাইডার এর মধ্যে বকুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, রেইনট্রি ইত্যাদি গাছের চারা রোপণ করা হয়।

সার্ক ফোয়ারা নির্মাণে আনুমানিক এক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ভাস্কর্যটি এবং ফোয়ারাটির যাবতীয় বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সরঞ্জামাদি সরবারহ করে অটবী। ফোয়ারার বাদবাকী নির্মাণ কাজ করেন মেসার্স রুপায়ন প্রকৌশলী। এর স্থাপতিক ডিজাইনে স্থাপত্য অধিদপ্তরের এবং রাজউকের স্থপতিরা অবদান রাখে, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেন শহীদুল্লাহ এসোসিয়েটস লিঃ।


 

আপনার মতামত দিন

কমেন্ট

Logo
Logo
© 2024 Copyrights by Sthapattya o Nirman. All Rights Reserved. Developed by Deshi Inc.