প্রকল্পের নাম: কুটির শিল্পে বিসিকের ভূমিকাকে পুনরায় চিন্তা করা ও বাংলার কুটির শিল্পের পুনঃপ্রচার
শিক্ষার্থীর নাম: ফরিদ উদ্দিন সোহাইল
প্রকল্পের নাম: কুটির শিল্পে বিসিকের ভূমিকাকে পুনরায় চিন্তা করা ও বাংলার কুটির শিল্পের পুনঃপ্রচার বিভাগীয় প্রধান নাম: ডঃ নওরোজ ফাতেমি বিশ্ববিদ্যালয়: ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক |
ছবি: বাংলাদেশের কুটিরশিল্পের মানচিত্র |
বাংলাদেশের হস্তশিল্প বা কুটির শিল্পের হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতা, যথাযথ প্রচারণা বা ব্র্যান্ডিংয়ের অভাবে বহু বছর ধরে এই শিল্প অবহেলিত। এ শিল্পের গৌরব ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হলেও এর প্রভাব প্রয়োজনের তুলনায় কম। যে প্রতিষ্ঠানটি বাংলার কুটির শিল্প বা হস্তশিল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি সক্ষমতা রাখে তা হল "বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বা বিসিক"। তবে এটা বলা যেতে পারে যে, বিসিকের তৎপরতা অনেকটাই ছোট শিল্প শহর ও প্লট বরাদ্ধ ভিত্তিক। যেখানে কারুশিল্প বা কুটির শিল্পের কার্যক্রম অনেকটাই অবহেলিত। তাই বিসিকের কুটির শিল্প কেন্দ্রিক দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে বিসিকের মাধ্যমে কুটির শিল্প বা কারুশিল্পের ব্র্যান্ডিং বা প্রচারের মাধ্যমে এর গৌরবময় অধ্যায় ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। |
এছাড়াও, প্রকল্পের আরেকটি উদ্দেশ্য হল বাংলার নৈপুণ্য নিয়ে কাজ করছে এমন বেসরকারি সংস্থা বা বিপণন সংস্থাগুলির প্রচারের আউটলেট বা ভবনগুলির স্থাপত্যকে প্রশ্ন করা এবং বিসিকের মাধ্যমে একটি মডেল তৈরি করার চেষ্টা করা। বাংলার কারুশিল্পের ব্র্যান্ডিং আউটলেটের স্থাপত্য কেমন হতে পারে। এবং বিসিক-এর আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ের অফিসগুলির কুটির শিল্পকেন্দ্রিক কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং সারা বাংলায় কুটির শিল্পের বাজার ছড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা যাচাই করা। একই সঙ্গে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি সংস্থার অফিস ভবনগুলোর স্থাপত্যের মডেল কী হওয়া উচিত। উপরোক্ত সমস্যা গুলো থেকে ধারনা পাওয়া যায়, বর্তমানে এই কুটির শিল্প এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যা থেকে উত্তরনে সরকারী, বেসরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সমাজের বুদ্ধিজীবী ও স্থপতিদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আর সেই দায়িত্ববোধ থেকেই এই থিসিস প্রজেক্টের শুরু… |
ছবি : বিশ্বের কুটিরশিল্পের সময়রেখা |
ছবি : বাংলার কুটিরশিল্পের সময়রেখা |
কুটির শিল্প এনালাইসিস: কুটির শিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম বাহক।এর সঙ্গে মিশে আছে হাজার বছরের গ্রামবাংলার মানুষের রূপ, বৈচিত্র, আবেগ, অনুভূতি। বাংলাদেশের অঞ্চলভিত্তিক পরিবেশের বৈচিত্র্য, কাঁচামালের প্রাপ্যতা, মানুষ ও সমাজের চাহিদা, জীবনের বৈচিত্র্যের ওপর ভিত্তি করে এ শিল্প যেমন গড়ে উঠেছে, তেমনি মিশে আছে বাংলা ও বাঙালির স্বকীয়ত, যা শুধুমাত্র বাংলার প্রতিনিধিত্ব করে। একই সঙ্গে এটা আমাদের গর্বের এবং এর নির্মাণ কৌশলে বাংলা ও বাঙালির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। |
সমস্যা সমাধানে যারা কাজ করে থাকেন : বাংলাদেশের কুটির ও কারুশিল্প নিয়ে সাধারনত দুই ধরনের সংস্থা কাজ করে থাকে। ১। বেসরকারি সংস্থা : আড়ং, দেশী দশ, যাত্রা, কারিকা, কারুপন্য ইত্যাদি। যদিও এই সংস্থাগুলোর বর্তমান সময়ে কুটির শিল্পকে প্রমোট করেছে, তবে সরেজমিন অনুসন্ধান ও কুটির ও কারুশিল্প গবেষক ও লেখক ‘আহমেদ তোফায়েল’ এর মতে “অতিরিক্ত বাণিজ্যিকিকরনের ফলে এদেশের কুটির শিল্পের মৌলিকতা ও বৈশিষ্ট্যগুলো হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে”। ফলে এদের মাধ্যমে কুটির শিল্পের সাময়িক আর্থিক লাভ হলেও, দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঐতিহ্য একেবারেই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ব্যপক। ২। সরকারী সংস্থা: বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রনালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন ইত্যাদি। সরকারী সংস্থাগুলো সাধারনত সেবামুলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সাময়িক সামষ্টিক লাভের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও সামগ্রীক লাভেই আগ্রহ বেশী তাদের। ফলে কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও সমস্যা দূরীকরণে সবচেয়ে বেশী সক্ষমতা রাখা সরকারী সংস্থা “বিসিক”-কে আমার ক্লায়েন্ট হিসেবে বেছে নিই। এবং প্রশ্ন করি ও জানার চেষ্টা করি... |
ছবি : কুটিরশিল্পের প্রচার |
ছবি : বিসিক |
বিসিক এনালাইসিস : বিসিকের লক্ষ্যগুলো হচ্ছে - |
ছবি : 'বিসিক'-এর ধারণা |
সবচেয়ে বেশী সক্ষমতা রাখা সত্ত্বেও বিসিক কেন কুটির শিল্পের উন্নয়নে যথাযথ ভুমিকা রাখতে পারছে না? বিসিকের প্রকাশনী থেকে জানা যায়, কাজের সুযোগ : |
রিসার্চ কোশ্চেন : সাইট : |
ছবি : সাইট বিশ্লেষণ |
ছবি : বিসিক |
ছবি : ধারণাগত অঙ্কন |
কনসেপ্ট : এখানে |
১. ক্রাফটস - ক্রাফট মানুষকে ট্রেডিশনাল ফিল দেয়, সে জন্য আমাদের ট্রেডিশনাল জানালা ‘খরখরি’কে ডিজাইনের ফেনেস্ট্রেশন হিসেবে আনা হয়েছে। - ক্রাফট সাস্টেইনেবল কথা বলে, খরখরি ও ভবনে যথাযথ আলো বাতাসের ব্যবস্থা করে ভবনটিকে সাস্টেইনেবল করতে ভুমিকা রাখে। - ক্রাফট লোকাল ম্যাটেরিয়ালের তৈরি, খরখরিও লোকাল ম্যাটেরিয়াল। - তাছাড়া খুলনার ইট ও টালি দেশে বিদেশে বিখ্যাত, সেই হিসেবে ব্রিকটাকে লোকাল ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। |
২. বিসিক শহুরে মানুষ প্রশাসনিক মানুষ প্রান্তিক মানুষ |
ছবি : কুটিরশিল্পের প্রদর্শনী | ৩. সাইট - এই সাইটিই কেনো আমার কনসেপ্ট ও ডিজাইন মডিউলটির জন্য উপযুক্ত তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে। - খুব অল্প যায়গাতে পাবলিক গ্যাদারিং ও অফিসিয়াল এন্ট্রিকে আলাদা করতে সাহায্য করেছে। - এটি একটি ডেভেলপমেন্ট কমার্শিয়াল প্লাস ইকোনোমিক্যাল এরিয়া। ফলে সাইটের দুপাশের ভবন গুলোর উচ্চতা এখন কম থাকলেও, ভবিষ্যতে সেই ভবন গুলোর উচ্চতা বাড়লে সেটি আমার ভবনের উপর কেমন ইমপ্যাক্ট ফেলবে, সেটি পর্যালোচনা করে ডিজাইন ডিসিশন নিতে সাহায্য করেছে। - ভবনটিতে পর্যাপ্ত পরিমান আলো-বাতাস ও ভিউ-ভিস্তা আনতে সাহায্য করেছে। |
ছবি : বিসিক |
ছবি : ইনস্টিটিউট |
এছাড়াও, - ন্যাচারাল লাইট ও ভেন্টিলেশনের সাহায্যে ভবনটিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ভবন হিসেবে তৈরি করা হয়েছে । - পর্যাপ্ত পরিমানে ভিউ ও ভিস্তা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। - এক স্পেস থেকে অন্য স্পেসে যাওয়ার জন্য এট্রাকটিভ ট্রানজিশন তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। - ম্যাটেরিয়াল ও কালারের সমন্বয়ে ভবনটিতে একটি ক্রাফটি লুক আনার চেষ্টা করা হয়েছে। - সর্বপরি ভবনটিকে খুলনা শহরের একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ডিজাইনের চেষ্টা করা হয়েছে। যা এই প্রজেক্টের প্রধান উদ্দেশ্য “বিসিককে মানুষের সামনে নিয়ে আসার পাশাপাশি কুটির শিল্পকে রি-ব্র্যান্ডিং” করতে সাহায্য করবে। |
ছবি : মাস্টারপ্ল্যান |
ছবি : ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি : ছেদচিত্র |
জুরি বোর্ডের মন্তব্য : স্থপতি প্রিন্স। স্থপতি সাইকা ইকবাল মেঘনা |
সম্পাদনায় : স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ নির্ণয় উপদেষ্টা লিমিটেড, পান্থপথ |