আটঘর-কুরিয়ানা ভাসমান পেয়ারা বাজারসমূহের পরিকল্পনা : পর্যটন বৃদ্ধির একটি পন্থা - পিরোজপুর, বরিশাল

স্থাপত্য ও নির্মাণ
শিক্ষার্থীদের প্রকল্প
২১ অক্টোবর, ২০২৫
আটঘর-কুরিয়ানা ভাসমান পেয়ারা বাজারসমূহের পরিকল্পনা : পর্যটন বৃদ্ধির একটি পন্থা - পিরোজপুর, বরিশাল

প্রকল্পের শিরোনাম: আটঘর-কুরিয়ানা ভাসমান পেয়ারা বাজারসমূহের পরিকল্পনা : পর্যটন বৃদ্ধির একটি পন্থা - পিরোজপুর, বরিশাল

শিক্ষার্থীর নাম: আসিফা ওয়াসিমা বাঁশরী

প্রকল্প বর্ষ: ২০২৪

সুপারভাইজার: স্থপতি ইফতেখার রহমান,সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

বিভাগীয় প্রধান: স্থপতি ইফতেখার রহমান,সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

বিশ্ববিদ্যালয়: শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Imageআসিফা ওয়াসিমা বাঁশরী

প্রকল্প বিবরণ:

বাংলাদেশ এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা দেশ, যেখানে নদী ও খালের জালের মতো বিস্তার ঘটেছে। দক্ষিণাঞ্চলে, এই জলপথের আশেপাশের উর্বর ভূমিতে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী পেয়ারা বাগান, যা এই অঞ্চলের গ্রামীণ সৌন্দর্যে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে।

ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ), ঝালকাঠি সদর ও বানারিপাড়া উপজেলায় এই পেয়ারা চাষ ব্যাপকভাবে দেখা যায়। বিশেষভাবে বিখ্যাত ভিমরুলি, আটঘর ও কুড়িয়ানার ভাসমান পেয়ারা বাজার, যা নদী-খাল ঘেরা পরিবেশে গড়ে উঠেছে। তবে, এই অসাধারণ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ঐতিহ্য এখন হুমকির মুখে-চাষে জটিলতা, উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে। এই প্রকল্প তাই একটি গুণগত পর্যটন কৌশল প্রস্তাব করে, যার ভিত্তি স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ।নদী-খাল ও প্রাকৃতিক জলপথের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২.৮ কিমি দীর্ঘ কুড়িয়ানা খালপথকে ঘিরে থাকা বাজার, মন্দির, বাগানসহ স্থানগুলোকে পুনর্জীবিত করার মাধ্যমে পর্যটন উন্নয়ন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে টেকসইভাবে ক্ষমতায়ন করাই এর উদ্দেশ্য।

 

1 Site Locationসাইট লোকেশন

2 Research Questions and Scopeগবেষণা-প্রশ্ন এবং সুযোগসমূহ

ভাবনার সৃষ্টি:

এই ধারণার সূচনা হয় খালটির দ্বৈত পরিচয় উপলব্ধি থেকে—একদিকে এটি একটি কার্যকর বাণিজ্যিক জলপথ, অন্যদিকে এটি ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর এক সাংস্কৃতিক করিডোর। প্রতিদিনের ভাসমান পেয়ারা বিক্রেতা, মৌসুমি নৌকা বাজার এবং গ্রামীণ মন্দিরসমূহের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের মাধ্যমে এখানকার অজানা সম্ভাবনার খোঁজ মেলে।

3 Research Framework & Survey Catagoriesগবেষণা কাঠামো এবং জরিপ

স্থানীয় মানুষের মতামত ও অংশগ্রহণ জানায়—তারা কৃষিভিত্তিক পর্যটন, হস্তশিল্প ও স্থানভিত্তিক বিকল্প আয়ের খোঁজে আগ্রহী। সেই অনুযায়ী নৌপথ, সংস্কৃতির গল্প এবং মৌসুমি পেয়ারা অর্থনীতিকে মিলিয়ে তৈরি হয় এক নতুন ধরণের পর্যটন কাঠামো। এতে অতি সামান্য হস্তক্ষেপের মাধ্যমে স্থানটির বিদ্যমান ঐশ্বর্যকেই তুলে ধরা হয়েছে। স্থানীয় কিংবদন্তি, ধর্মীয় রীতিনীতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পথ ধরে এক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতা গড়ে তোলা হয়েছে, যা পরিবেশবান্ধব এবং ঐতিহ্যের প্রতি সম্মানজনক।

 

ডিজাইনের ধারণা:

ভাসমান জীবনের পথচলা – জল, মানুষ ও সংস্কৃতির মিলন

এই ডিজাইনে পেয়ারা বাগান, ভাসমান বাজার, খালনির্ভর গ্রামীণ জনপদ ও হালকা ওজনের স্থাপত্যচর্চার মাধ্যমে এক অনন্য ভাসমান বাস্তবতার অংশ হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে—যেখানে জল, মানুষ ও সংস্কৃতি একে অপরের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিশে থাকে।

‘ভাসমান জীবনের পথচলা’ মূলত গ্রামীণ জীবনের ছন্দ এবং পানিনির্ভর গতিময়তা থেকে অনুপ্রাণিত। জলপথ, ফলবাগান, বাজার ও ধর্মীয় স্থানসমূহ একত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে সংবেদনশীল ও সাইট-উপযোগী স্থান পরিকল্পনার মাধ্যমে। হালকা, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কাঠামো পুরো প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করে কিন্তু তার আধ্যাত্মিক শান্তি ও সাংস্কৃতিক প্রাণ বজায় রাখে। এই ভাসমান জীবন এক জীবন্ত ঐতিহ্যের নিদর্শন, যেখানে ভূমি, জল ও জীবন মিলে গড়ে ওঠে এক চলমান সংস্কৃতি।

 

7 Conceptডিজাইনের ধারণা

 

4 Mapsমানচিত্রসমূহ

5 Site Infosসাইটের তথ্যসমূহ

6 Pictorial Analysisচিত্র-বিশ্লেষণ

 

  মাস্টারপ্ল্যান:

9 1

9 39 2

২.৮ কিমি দীর্ঘ কুড়িয়ানা খালজুড়ে বর্তমান ও সম্ভাব্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, যেমন - ভাসমান বাজার, প্রতিদিনের হাট, আন্দাকুল হরির মন্দির, কালী মন্দির, আদাবাড়ি দুর্গা মন্দির এবং ১৯৭১ স্মৃতিস্তম্ভ ইত্যাদি। এসব কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ডের আম্ফাওয়া ফ্লোটিং মার্কেটের উন্নয়ন কৌশল থেকে ধারণা নেওয়া হয়েছে।

10 Primary Intervention 1প্রাথমিক প্রক্রিয়া_১

11 Primary Intervention 2প্রাথমিক প্রক্রিয়া_২

12 Secondary,tertiary Interventions and Araat Modulesমাধ্যমিক এবং তৃতীয় প্রক্রিয়া, আড়ত মডিউল

13 113 213 3

16 Vizualization 4 and Conclusion

মূল অবকাঠামোগুলোর মধ্যে রয়েছে: নৌকা ঘাট, ওয়াচ টাওয়ার, ফুড কোর্ট, ক্যাম্পিং সাইট, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আড়ত (পেয়ারা কেনাবেচার স্থান) এবং পাবলিক স্যানিটেশন সুবিধা ইত্যাদি। পুরো প্রকল্পের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা চারটি থিম রুটের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে— "ফার্ম টু টেবিল রুট" (খামার থেকে খাবারের টেবিল), "সেক্রেড রুট" (ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী পথ), "ওয়াটারওয়ে ট্রেইল" (নৌভ্রমণপথ),"পেয়ারা এক্সপ্লোরেশন ট্রেইল" (পেয়ারা চাষ ও সংস্কৃতির রুট)। প্রতিটি রুটের লক্ষ্য হলো-কৃষি, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি-ভিত্তিক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করা এবং দীর্ঘমেয়াদী, স্থাননির্ভর ও সম্প্রদায়-ভিত্তিক পর্যটনের মাধ্যমে জীবিকা উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

15 Vizualization 3(tourist Map)পর্যটন মানচিত্র

জুরি মন্তব্য:

▪  ডঃ শেখ সিরাজুল হাকিম বড় স্কেলের প্রকল্প হিসেবে প্রশংসা করেছেন এবং আরও বলেন যে, বিভিন্ন স্কুলে তিনি যে প্রকল্পগুলি পর্যালোচনা করেছেন তার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে উন্নত কাজগুলির মধ্যে একটি

 

 শিক্ষার্থীটি অবশ্যই শুরু থেকেই প্রকল্পের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত ছিল - অন্যথায়, এত গভীরতা এবং পরিধি অর্জন করা সম্ভব হত না। প্রকল্পটির উপস্থাপনা এবং বাস্তবায়ন প্রশংসার যোগ্য।

 

 ছাত্রটি ব্যাপক কাজ করেছে এবং অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে প্রকল্পটি পরিচালনা করেছে। বিশাল স্থানের এলাকা সত্ত্বেও, ডিজাইনে প্রকল্পটির ঐতিহ্যকে ধরে রেখেই কাজ করা হয়েছে।

17 Model Images 1প্রকল্পের মডেলের ছবি

পুরষ্কার:

-BSRM সেরা থিসিস পুরস্কার (প্রশংসা পুরষ্কার)-২০২৫

-UDL থিসিস প্রকাশনা-২০২৪ (শীর্ষ ৪০)

-মনোনীত, ডিজাইন পুরস্কার, স্টুডিও-এক্স (থিসিস), DEXPO-, DOA, SUST (২০২৫)

 


প্রতিবেদক: স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ

আপনার মতামত দিন

কমেন্ট

Logo
Logo
© 2025 Copyrights by Sthapattya o Nirman. All Rights Reserved. Developed by Deshi Inc.