এলাকাবাসীদের মধ্যে ধর্ম, পেশা, শিক্ষা বয়সের যত ভিন্নতা থাকবে তত প্রাঞ্জল পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব । হবে দ্বিতীয় মেরুতে স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদগণ তাদের অভিজ্ঞতা আর শিক্ষার আলোকে বিচক্ষণতার সাথে এলাকা উন্নয়ন পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন এলাকাবাসীদের নিকট থেকে এবং অন্যান্য কেস ষ্ট্যাডি (Case Study) করে তারা সুচিন্তিত পরামর্শ দেন। এলাকা উন্নয়নে তাদের ভূমিকা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এলাকাবাসী বিশেষজ্ঞদের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারেন। তারা এলাকাবাসীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা আর প্রয়োগ প্রযুক্তির মধ্যে মিলন সৃষ্টি করেন।
তৃতীয় মেরুতে অবস্থান করেন সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহ (Service Sector যাঁরা পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ করবেন। তিন মেরুর প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পরিপূরক । একটা সুন্দর স্বাস্থ্যসম্মত এলাকা পরিকল্পনায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। আর এই সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য চাই প্রচার বা পাবলিসিটি যার ফলে এলাকাবাসীর যেন প্রথম থেকেই ব্যাপারটা সম্পর্কে অবগত হতে পারেন । তাদের মতামত প্রদান করতে পারেন। এর ফল বহুবিধ; প্রথমত যারা সংশ্লিষ্ট অথচ অবগত নন তারা জানতে পারবেন। এক এলাকার পরিচিতির সঙ্গে অন্য এলাকাও এই ধরনের কার্যক্রম সম্বন্ধে সচেতন হবে । বিচক্ষণতার সঙ্গে পর্যালোচনা হবে, ফলশ্রুতিতে পর্যায় ক্রমে একটা test case mJ model case সৃষ্টি হতে পারে ।
আর সব কিছুকেই অদৃশ্য পর্দার ন্যায় সামগ্রিক অর্থনীতি ব্যাপারটাকে জড়িয়ে আছে এবং থাকবেই। অর্থসংকট যেমন অনেক কার্যক্রমকে সীমিত করে রাখতে পারে তেমনি সেই একই কার্যক্রমকে আরও cost efficient করে তুলতে পারে । অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিকল্পনাবিদদের একটা অভিপ্রায় থাকে অসাধারণ কিছু সৃষ্টির । স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদ এবং Client সবাই অসাধারণ একটু কিছু আশা করে। বিপদ আসে যখন কাজটা শেষ হল আর ফল আশানুরুপ হয় না। এলাকাবাসী এবং নক্সাকারী, দুই পক্ষই অসস্তুষ্ট, ফলে ভবিষ্যতে এই ধরনের কার্যক্রমে তাদের সংকোচ আসে, অথচ একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে সাধারণের মধ্যে অসাধারণ লুকিয়ে থাকে । এলাকা পরিকল্পনার মতন বড় কাজে যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতির বিস্তর ব্যবধান, পেশার বৈচিত্র, বয়সের অমিল, সেখানে সাধারণ দুই একটা জিনিসের মধ্যে অসাধারণ বৈচিত্র্য বা স্বাতন্ত্রবোধ গড়ে উঠে । হয় সুন্দরে- অসুন্দরের মিলন, আসে পরিণত চিন্তা- আসে আগ্রাসন আসে অংশগ্রহণ-আসে তর্ক, আলোচনা আর পাল্টা তর্ক এবং পর্যালোচনা । এক ঘেয়েমী সরে গিয়ে আসে ভিন্নতা । যে কোন এলাকা উন্নয়নে একটা রুচিসম্মত পরিবেশ তৈরি করার জন্য তাই চাই এই ত্রিভুজের মধ্যে পারম্পরিক যোগযোগ । পূর্ণ সহযোগিতা এবং বিশ্বাস, বিশেষ করে একে অনোর সথে আলোচন করে বর্তমান পরিস্থিতির পূর্ণ অনুধাবন বিশেষ প্রয়োজনে ভবিষাৎ পরিকল্পনা জন্য। চিন্তা করতে হবে বর্তমানে যে জমি আছে তা কিভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে তা সমাধান করতে হবে । আসবে রাস্তা-ঘাট-স্কুল-মন্দির, মাদ্রাসার পরিসর ও অবস্থান ।
এক্ষেত্রে পূর্বের বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করতে হতে পারে । সাথে সাথে স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদদের যোগযোগ রাখতে হবে সার্ভিস শিল্পের দিকে । এই তৃতীয় মেরুর অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা (limitation) থাকতে পারে- বিশেষ করে যখন পয়-নিষ্কাশন, রাস্তা, বিদ্যু, গ্যাস, পানি সরবারহের কথা ওঠে। পদে পদে তাদের সাথে আলোচনায় মিলিত হতে হবে। প্রয়োজনবোধে সমীক্ষা/জরীপ করে পরিসংখ্যান করতে হবে । ইমারতের উচ্চতা, ধরন, রাস্তার দিকে ইমারতের সম্মুখভাগ (Alignment), খেলার মাঠ, পুকুর, বাজার এর অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে । সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি হবে গ্রয়োজনাবোধে নক্সার পর নক্সা মডেল ইত্যাদি তৈরি করে ঠিক করতে হবে। এইসব কাজের জনা অর্থনৈতিক সংকট অন্তরায় হলেও ইচ্ছা থাকলেই এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বা এলাকার সমবায়ের মাধ্যমে একটা ব্যবস্থা করা যায়। প্রতিবারে অবশাই এলাকাবাসীদের চাওয়া পাওয়ার একটা ন্যায্য হিসাব রাখা প্রয়োজন । যাতে তা সময় সময়ে মিলিয়ে নেওয়া যায়।