রেজা চৌধুরীর সাথে একটি বিকাল

স্থাপত্য ও নির্মাণ
সংলাপ
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
২১৫
রেজা চৌধুরীর সাথে একটি বিকাল

ডঃ জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রকৌশলী, অধ্যাপক, গবেষক এবং শিক্ষা আইনজীবী। তিনি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।

আমাদের দেশে একটা ভাল দিক হল স্থপতি এবং ইঞ্জিনিয়ারদের যোগাযোগ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় একটু বেশী, ইংল্যান্ডের তুলনায় বেশী বলব, কারণ, ওখানে আকিটেকচারাল ফার্ম ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম আলাদা আলাদা, তাদের কথাবার্তা হয় মিটিং এর মাধ্যমে । একই ফার্মে এই দৃশ্য খুবই বিরল যে স্থপতি এবং কাঠামো ডিজাইনার (structural engineer) একই সাথে কাজ করছেন ! আমাদের দেশে এই পরিস্থিতি অনেক ভাল, এখানে স্থপতি এবং কাঠামো প্রকৌশলী প্রথম থেকেই আলাপ আলোচনা করতে পারেন । Conceptual stage থেকেই উভয় পেশার এই সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ । একটা ভুল পদ্ধতিতে শেষ পর্যন্ত হয়ত একটা কাঠামো দাঁড় করানো সব হবে, কিন্তু তা হবে খরচ বহুল, সেজন্য প্রথম থেকেই স্থপতি এবং কাঠামো প্রকৌশলী একত্রে টিম হিসাবেই কাজ করাটাই শ্রেয় ।
অধ্যাপক প্রকৌশলী ডঃ জামিলুর রেজা চৌধুরী যিনি সচরাচর JRC নামেই বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রকৌশলীর কাছে সমধিক পরিচিত, তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসের ১০ তারিখে । সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন স্থপতি কাজী আনিস উদ্দিন ইকবাল। ছবি তুলেছেন স্থপতি শাহেদ সাজ্জাদ ।

আমরা জানি আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলির একটি সমন্বিত মাস্টার প্লান তৈরী হয়েছে, এই প্লানের উদ্দেশ্য কি?
১৯৯১ সালের ২৯-৩০ এপ্রিল যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জ্বলোচ্ছাস বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে, তাতে প্রায় ১,৪০,০০০ লোক প্রাণ হারান । এছাড়া বিপুল পরিমান পশুসম্পদও নষ্ট হয়। এই মহাদূর্যোগের পরপরই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সাহায্য সামগ্রী আসে । এসময় বাংলাদেশ সরকার উপকূলীয় অঞ্চলে আশ্রয় কেন্দ্র সংক্রান্ত একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় তিনদশক আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে _ যাতে সতর্কতা দেওয়ার পর লোকজন কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়ে জীবন বাঁচাতে পারে । কিন্তু এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো নির্মিত হচ্ছিল বিচ্ছিন্নভাবে, এর জন্য কোন পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা ছিল না। তাছাড়া এগুলির ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে সে সম্বন্ধেও কোন নীতিমালা ছিল না। ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে এই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের একটি সামগ্রীক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন ।
আপনাদের পরিকল্পনা পদ্ধতিটি কি রকম ছিল?
প্রথমেই নিরূপণ করা প্রয়োজন ছিল যে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, সমস্যার সঠিক সমাধান কিনা । প্রাথমিক পর্যালোচনায় টাস্কফোর্স দেখল যে, যেখানে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে তার আশেপাশে প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে কম । তারা সুপারিশ করল যে, এগুলির পরিকল্পনা, সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণের পদ্ধতি, ডিজাইন, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত সমীক্ষা চালানো প্রয়োজন। এর জন্য UNDP অর্থায়ন করতে সম্মত হয় এবং বিশ্বব্যাংক এই সমীক্ষার Executing agency হিসাবে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হল। তারা প্রথমে ঠিক করল অন্যান্য সমীক্ষার মত বিদেশী কনসালটেন্টরা এসে একাজটা করে দিয়ে যাবে । কিন্তু আমাদের সরকার সিদ্ধান্ত নিল যে, এ কাজের জন্য বিদেশী পরামর্শকের প্রয়োজন নাই, এর জন্য বাংলাদেশেই যথেষ্ট সংখ্যক বিশেষজ্ঞ আছেন।
পরিকল্পনা কমিশন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে জিজ্ঞেস করে যে এই সমীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ দিতে পারবে কিনা । আমাদের উপাচার্য এতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। একই ভাবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BIDS)-কে অনুরোধ জানানো হয় সমীক্ষায় আর্থ-সামাজিক বিষয়গুলির জন্য বিশেষজ্ঞ মনোনয়নের। BUET থেকে আমাকে সমীক্ষা দলের নেতা হিসাবে মনোনয়ন করা হয় এবং BIDS এর সাথে আলোচনা করে আমরা আগষ্ট, ১৯৯১ সালে আমাদের একটি প্রস্তাব টাস্কফোর্সের কাছে পেশ করি। মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য আমাদের সময় দেওয়া হয় মাত্র ছয় মাস এবং এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ Field Survey করতে হবে সেজন্য BUET-BIDS মিলে আমরা সিদ্ধান্ত নেই স্থানীয় উপদেষ্টা সংস্থা DDC Ltd. থেকে কিছু Support Services নেওয়ার। World Bank একটা শর্ত আরোপ করে যে Team Leader কে full-time কাজ করতে হবে – আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এতেও সম্মতি দেয় । আমরা ১লা ফেব্রুয়ারী, ১৯৯২ থেকে কাজ শুরু করি । আমাদের দলে বিভিন্ন পেশার সর্বমোট প্রায় ২৭ জন দেশীয় বিশেষজ্ঞ ছিলেন-এর মধ্যে প্রকৌশলী, স্থপতি, পরিকল্পনাবিদ, অর্থনীতিবিদ, জনমিতি বিশেষজ্ঞ, সমাজতত্ববিদ ও আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ছিলে । এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিশেষজ্ঞকে দলভুক্ত করি।
আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল কোথায় কোথায় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হওয়ার সন্তাবনা আছে সে এলাকাগুলি নিরূপণ করা । এজন্যে আমরা সমগ্র উপকূল অঞ্চলে একটা জরীপ শুরু করি । এর আগে যে জলোচ্ছ্বাসগুলো আঘাত হেনেছিল তার উপাত্ত বিশ্লেষণ করি এবং একটি গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাহায্যে কোন কোন এলাকায় কত উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে তা নির্ণয় করি।

তারমানে সমগ্র উপকূলই সার্ভে করা হয়েছে?
শুধুমাত্র উপকূলীয় অঞ্চল বলা যাবে না, জলোচ্ছ্বাস প্রায় ৬০. কিলোমিটার ভিতরেও চলে আসতে পারে – যেমন – উপকূল থেকে দূরে বরিশাল, ভোলার অনেক অঞ্চল। প্রথমেই আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হলাম, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের কোন নির্ভরযোগ্য মানচিত্র নেই । এজন্য আমরা ফরাসী কোম্পানী SPOT থেকে প্রাপ্ত কিছু Satellite image-এর সাহায্য নেই। সারা পৃথিবীরই তারা করে থাকে; Flood Action Plan এর জন্য তারা এগুলো সরবরাহ করেছিল। সৌভাগ্য বশতঃ ওটা আমরা ব্যবহার করার সুযোগ পেলাম, সেই imageগুলো থেকে আমরা Basic Map টা তৈরী করি । আমাদের একটা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ছিল একটা GIS ( Geographical Information System) প্রস্তুত করার, আশ্রয়কেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে হবে এবং আমাদের একটা তথ্য সরবরাহ পদ্ধতি প্রয়োজন হবে যে কোথায় কত বড় Shelter আছে। সেজন্য আমরা প্রথম থেকেই একটা Computerised Data Base তৈরী করেছি।

এটা করতে গিয়ে আপনারা কি এ অঞ্চলের বসতির ধরণ (Pattern) বা বসতি ঘনত্ব ইত্যাদি তথ্য বের করেছেন?
হ্যা, বসতি ঘনত্ব আমরা বের করেছি। একটা সুবিধা হল, ১৯৯১-এ একটা আদম শুমারী হয়েছিল, সেই ডাটাগুলো তখনও Process হচ্ছিল । সরকারীভাবে প্রকাশের আগেই আমরা এ সংশ্লিষ্ট এলাকার ডাটা নিয়ে এসেছিলাম । ঘনত্ব প্রসঙ্গে, একটা আছে মৌজা হিসাবে BBS এর পরিসংখ্যান, তারপরেও আমাদের দরকার হলো Settlement Pattern টা । সেটা আমরা বের করলাম Satellite image থেকে, উভয় তথ্য থেকে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করে আমরা আমাদের ব্যবহার্য্য তথ্য সংগ্রহ করেছি। বসতি ধরণটা দরকার ছিল, কারণ আত্রান্ত লোকজন কিভাবে আসবে এ আশ্রয় কেন্দ্রে, আমাদের Serveyor রা বাড়ী বাড়ী গিয়ে জিজ্ঞেস করেছে যে তারা কতদুরে যেতে রাজী আছে? এলাকার জনগনের প্রশ্নোত্তর, আপৎকালে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌছাবার পদ্ধতি এবং বসতি ঘনত্ব ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনায় রেখে যে মহাপরিকল্পনা তৈরী হল তাতে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ীর দূরতু সর্বাধিক এক থেকে দেড় মাইলের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

আমরা’ত জানি Cyclone Shelter আগেও তৈরী হয়েছিল, সেগুলির কি হলো?
সেগুলোর বেশীরভাগই অকেজো বা পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এগুলির প্রধান অসুবিধা যে, কোন সামগ্রীক চিন্তাভাবনার অংশ হিসাবে এগুলি তৈরী হয়নি, তাই অবস্থানেও গলদ, তৈরীতেও গলদ । ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ২৩৮ টা বানানো হয়েছিল, তার মধ্যে ২২৬টা টিকে আছে, তবে অবস্থা শোচনীয় । আমাদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল, এই আশ্রয়কেন্দ্র গুলি স্বাভাবিক সময়ে যাতে বাবহার করা যায়। এই ব্যবহারের ধরন নিয়েও অনেক option আমরা যাচাই করে দেখেছি । যেমন, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুল, হাসপাতাল বা ক্লিনিক, কমিউনিটি সেন্টার । তবে প্রাইমারী স্কুলই দেখা গেল সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য । আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে দিলেই হবে না দূর্যোগের সময়ে এটার সুষ্ঠ ব্বস্থাপনা দরকার এবং সেটা খুবই জরুরী ; এজন্য ট্রেনিং দরকার এবং ঘূর্ণিঝড় পরীক্ষিত সংগঠক দরকার। কিন্তু কবে ঘূর্ণিঝড় আসবে তারজন্য একজনকে বেতন দিয়ে রাখার কোন মানে হয় না । তাই এই আশ্রয়কেন্দ্রে ব্যবহারের ধরণের উপর ভিত্তি করে কাউকে দায়িত্ব দেয়ার এবং তাকে এই additional কাজ করার জন্য কিছু অতিরিক্ত ভাতা দেবার সুপারিশ আমরা করেছি। এতে করে দায়িতুপ্রাপ্ত লোকটি বিপদের সময়ে তার দায়িতু পালনে বাধ্য হবে কারণ সকলেই জানছে যে, তিনি এই কাজের দায়িত্ব নিয়েছেন।
আশ্রয়কেন্দ্র এর কাঠামোটি কি ধরনের?
আসলে আমরা একটা basic system উদ্ভাবন করে, এর নানা ধরনের ডিজাইনের সুযোগ রেখে দিয়েছি । আশ্রয়কেন্দ্রগুলো R.C. খুটির উপর হতে পারে যাতে জলোচ্ছাসের সময় পানি নীচ দিয়ে চলে যেতে পারে । তবে এই ধরণের আশ্রয়কেন্দ্রের সমস্যা হল Livestock এর জন্য এগুলি ব্যবহার করা যায় না। গরু-ছাগলের জন্য এর আগে বেশ কয়েকটি মাটির কিল্লা নির্মিত হয়েছে, কিন্তু, এগুলি লোকালয় থেকে বেশ দূরে, সেজন্য সেগুলি দৃযোগের সময় সঠিক ব্যবহার হয় না আর রক্ষণাবেক্ষণও হয় না । আমরা সুপারিশ করেছি কিল্লা ও আশ্রয়কেন্দ্র একসাথে করার জন্য ; অর্থাৎ আশ্রয়কেন্দ্র কিল্লার উপর নির্মিত হবে। এতে লোকজন গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসবে এবং ঘূর্ণিঝড় যখন আঘাত হানবে তখন তারা ভিতরে ঢুকে পড়বে । এতে তুলনামূলকভাবে খরচও কম পড়ে।
2
সারাদেশে যমুনা ব্রীজ প্রকল্পটি একটি বহুল আলোচিত ইস্যু পক্ষে ও বিপক্ষে নানা মতামত রয়েছে, এতদিন এটা একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রতি মূলক বিষয় হিসাবেই ধরে নেয়া হত, কিন্তু এখন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে, আপনি এই বিশাল প্রকল্পের সাথে জড়িত আছেন, প্রকল্প সম্বন্ধে কিছু বলুন।
যমুনা ব্রীজের দাবী অনেকদিন থেকে উঠছিল বিভিন্ন ফোরামে, প্রথম দাবী আসে যতদূর মনে পড়ে ৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, কিন্তু গুরুত্ব সহকারে Prefeasibility study শুরু হয় ১৯৬৯-এ। বৃটিশ একটা উপদেষ্টা ফার্ম Freeman Fox and Partners, তারা যমুনা নদীর উপরে সেতু নির্মান সম্ভব কিনা, এটা নিয়ে একটা সমীক্ষা চালায় এবং তাদের সিদ্ধান্ত ছিল এখানে সেতু করা সম্ভব, কয়েকটা স্থান তারা নির্বাচন করে। এর মধ্যে একটা ছিল সিরাজগঞ্জের দক্ষিণে । এরপরেই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল এবং এই study-র পরবর্তী কোন follow up হল না। ১৯৭২ সালে আমাদের সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জাপান সরকার রাজী হয় একটা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালাতে এবং JICA-র একটা দল এসে চার বছর ধরে Detail study চালায় , Technical feasibility econo-mic feasibility, ইত্যাদি। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে, হ্যাঁ কারিগরীভাবে সম্ভব, তারা সিরাজগঞ্জের দক্ষিনের জায়গাটাই পছন্দ করে, কিন্তু, অর্থনৈতিকভাবে তাদের মতে feasible নয়, যে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে তার Return খুবই কম আসবে এবং Internal Rate of Return যাকে উন্নয়ন প্রকল্পের মাপকাঠি (Yardstick) হিসাবে ধরা হয় তা ওদের হিসাবে খুবই অল্প আসে, মাত্র ৩% । সেজন্য এই প্রকল্পটি ১৯৭৬-এর পরে কিছু দিন বন্ধ হয়ে যায়। অনেকদিন বন্ধই ছিল, তারপরে ১৯৮৩ সালে পেট্রোবাংলা চিন্তা করল, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস নেয়া যায় কিনা, এজন্য পাইপ লাইন নিতে হবে নদী cross করে তাই সম্ভাব্যতা যাচাই এর জন্য তারা আবার একটা বৃটিশ ফার্মকে নিয়োগ করে। তারা একটা সম্ভাব্য ডিজাইন তৈরী করে, এবং সে অনুযায়ী একটা অর্থনৈতিক সমীক্ষাও তৈরী করে, দেখা গেল এক্ষেত্রেও Return খুবই কম। একটা পাইপ লাইন নিতে গেলে যে কাঠামো প্রয়োজন তাতে ২৫০- ৩০০ মিলিয়ন ডলার লেগে যাচ্ছে। যখন দেখা গেল গ্যাস লাইনে এত খরচ, তখন ভাবনা হল এর সাথে যদি একটা ব্রীজ করা যায়, তাহলে পাইপ লাইনের জন্য আলাদা কাঠামোর খরচ লাগে না। এই নতুন সম্ভাব্যতা যাচাই এর জন্য কথা উঠলে, ১৯৮৫ তে UNDP রাজী হল আবার সম্ভাব্যতা যাচাই এর কাজের জন্য টাকা দিতে । World Bank আগ্রহ দেখালো, ১৯৮৬তে কাজ শুরু হয়, কয়েকটা পর্বে ভাগ করে, পর্বগুলি ছিল, Characterstics and Configur – action Study, ব্রীজটা কোথায় হবে, হলে এর উপর দিয়ে কি ধরনের যানবাহন যাতায়াত করবে অর্থাৎ শুধু রাস্তা না রেলও থাকবে, কত লেন ব্রীজ করা প্রয়োজন, এসব বিষয় ছিল তার অন্তর্ভুক্ত। উপদেষ্টা ছিল London এর R.P.T. , Nedoco হল্যান্ডের এবং BCL বাংলাদেশের । তারা ৭টি স্থান দিয়ে ব্রীজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন, এই ৭টি corridor এর ৫টা ছিল আরিচা- বাহাদুরাবাদএর মধ্যে যমুনার উপরে আর দৌলতদিয়া আর মাওয়া এ-দু’টা ছিল পদ্মায়। এগুলো নানা দৃষ্টি কোণ থেকে, পর্যবেক্ষন করা হয়, কারিগরী দিক থেকে, ভবিষ্যতের যাতায়াতের হারের বিবেচনার দিক থেকে উপসংহারে তারা দেখায় যে, দুটো করিডোর বাকীগুলোর তুলনায় সবদিক দিয়ে বেশী আকর্ষনীয় একটা হল সিরাজগঞ্জের দক্ষিণে, আরেকটা হল আরিচা-নগরবাড়ী ; তবে আরিচা-নগরবাড়ী দিয়ে ব্রীজ করতে গেলে বেশী বিনিয়োগ দরকার, কারণ, এখানে River training বেশী জটিল হয়ে পড়ে । যাহোক, তারা একটা সিদ্ধান্ত দিল যে, রেলপথ নেয়াটা Viable না।
রেল নেয়াটা Viable নয় কেন?
এটা অনেক ground-এ । তারা প্রথমে একটা চিন্তা করেছিল ঢাকা থেকে একটা ব্রডগেজ লাইন নিয়ে সিরাজগঞ্জে যে ব্রড গেজ লাইন আছে তার সাথে সংযুক্ত করে দিবে কিন্তু এটা viable হয়নি। ওদের এই রিপোর্টের পরে দ্বিতীয় পর্বে, detail feasibility study শুরু হয় ‘৮৭তে, সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার চায় যে, এখানে রেল থাকবে, তবে যদি ব্রড গেজ সন্তব না হয়, তাহলে বর্তমানে যে মিটার গেজ আছে, আমাদের ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর-সরিষাবাড়ী দিয়ে, এই লাইনটাকে দক্ষিনে বাড়িয়ে এনে যদি অপর পারে সংযুক্ত করে দেয়া যায় তাহলে একটা মিটার গেজ রেল সংযোগ হয়। Consultant রা যে চুড়ান্ত রিপোর্ট দিল, সেখানে দেখালো যে রেলের অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যুক্তিযুক্ত, কারণ IRR যথেষ্ট উচু, কিনতু ওয়ার্ড ব্যাংক এই সুপারিশ গ্রহন করতে রাজী হল না । তাদের যুক্তি ছিল যে, রোড ব্রীজে যে Rate of return, রোড ও রেল একত্রে হলে তার থেকে একটু কম আসে, ১% মত কম । তখন তারা বলল যে, তারা শুধুমাত্র রোড ব্রীজ হলে রাজী আছে, অন্যথায় নয়। অনেক আলোচনার পর এটার একটা compromise সমাধান হল, মিটার গেজ রেল বসানোর জন্য ত্রীজের যে অধিকতর ভার বহনকারী Foundation দরকার, তাতে প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ হয়, সেই টাকাটা তারা দিতে রাজী হল। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত হল, ব্রীজ এমনভাবে ডিজাইন করা হবে যেন প্রয়োজনে এক লেন মিটার গেজ রেল বসানো যায়, আর superstructure টা এমনভাবে করা হবে যাতে পরবর্তীকালে একে কিছুটা শক্তি বাড়িয়ে রেল বসানো যায়।
Issue 07r 5

তৈরী করা ব্রীজের শক্তিটা বাড়ানো হবে কিভাবে?
Prestressing করে, গার্ডারের ভেতর দিয়ে Extra Cable দিয়ে টেনে দেয়া হবে। বাইরে থেকে কিছু বোঝা যাবে না।
যাহোক, ‘৯০ জুলাই সালের দিকে যখন এই সমাধান গৃহীত হল, তখন, মধ্যপ্রাচ্যে GulfWar শুরু হয় গেল, আমাদের Tender ডাকার কথা ছিল ১৯৯০ এর, সেপ্টেম্বর মাসে তখন World Bank বলল, আপাততঃ এই টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রী করা যাবে না। যদিও সব রকম সম্ভাব্যতা যাচাই হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তারা বলল যে তারা আরও কিছু Study করাতে চায় অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা নিয়ে, ওরা আরও Consultant নিয়োগ করে আগের Consultant এর বিশ্লেষণ ও পরামর্শ গুলো যাচাই করার জন্য ।
আপনি কি এখানের সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বে ছিলেন?
আমি ছিলাম স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের প্যানেলের চেয়ারম্যান । আমাদের সরকারের বিশেষজ্ঞদের একটা প্যানেল আছে সরকারকে এধরনের বিষয়গুলিতে পরামর্শ দেবার জন্য, এই প্যানেলে আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাতজন অধ্যাপক, আর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ (মরহুম) ডঃ আখলাকুর রহমান ছিলেন । উনি অর্থনীতির বিষয়গুলো দেখতেন। এই ছিল বিশেষজ্ঞদের প্যানেল যার চেয়ারম্যান আমি । আরেকটা বিশেষজ্ঞ প্যানেল আছে যেটা বিশ্বব্যাংককে পরামর্শ দেয়। ওটারও আমি একজন সদস্য, আমার দুটি ভূমিকা রয়েছে বলা যায় । এখন তারা যে উপদেষ্টা নিয়োগ করল তারা বলল, আগের সব হিসাব ভুল, IRR ৭% মত হবে। সুতরাং এই ব্রীজ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয় । এরপর তাদেরই আরেকজন উপদেষ্টা দেখালো যে, না, IRR প্রায় ১৪%-এর মত, বলল আগের অর্থনীতিবিদের হিসাবভুল। যাহোক বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের যে অর্থনীতিবিদ, তার এই সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়েই শেষপর্যন্ত বিশ্বব্যাংক অর্থ যোগান দিতে রাজী হয়েছে । ADB এবং জাপানও টাকা দিচ্ছে, ২০০ মিলিয়ন ডলার করে সর্বমোট ৬০০ মিলিয়ন ডলার, বাকী প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার দিবে আমাদের সরকার । আবার পূর্বযোগ্যতা যাচাই করে, টেন্ডার ডকুমেন্ট করে, এখন কাজ শুরু হয়েছে। Word order সব দেয়৷ হয়ে গেছে, চুক্তিসই হয়েছে ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে, ১৬ই অক্টোবর থেকে কাজ শুরু হয়েছে।
এখানে Interesting দিক হচ্ছে, ব্রীজে যত খরচ হচ্ছে তার থেকে বেশী খরচ হচ্ছে নদী শাসনে, ব্রীজের প্রায় ২ কিলোমিটার উজান থেকে নদীর স্রোতকে গাইড করে নিয়ে আসা হবে, দুপাশে পাথর ফেলে, গাইড বাধ তৈরী করে, ডিজাইনের দিক থেকে এট সবচেয়ে জটিল।

কিন্তু পানিই যদি না থাকে তাহলে এই ব্রীজের কি হাল হবে?
ব্রহ্মপুত্রের পানি অন্য দিকে সরিয়ে নেয়া বেশ দূরুহ কাজ। এটা করতে হলে ওদের সেই জলপাইগুড়ির ওদিক দিয়ে ঘুরাতে হবে, তাতে ওদের খুব যে লাভ হবে তা নয়, সে তুলনায় investment অনেক বেশী । ভারত এখনও, এধরনের চিন্তা করছে না, অদূর ভবিষ্যতেও করবে বলে মনে হয় না। তবে নদী তার গতি পথ পরিবর্তন করতে পারে, বা ঋতু বিশেষে পানি কম হতে পারে, আবার বর্ষা মওশুমে পানি বেড়ে যাবে।

মেঘনা ব্রীজে মনে হয় এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি, সে কারণে তার দুপাশে পরে ভাঙন দেখা দিয়েছিল, আপনি কি বলেন?
আসলে মেঘনা ব্রীজ করার সময়ে নদীর তীরের যথেষ্ট Protection নেয়া হয়নি; সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলীরা এব্যাপারে জাপানের প্রকৌশলীদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ওরা এতে খুব একটা গুরুতু দেয়নি । এখন কিছু কাজ করা হচ্ছে, কিন্তু আরেকটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। যমুনার মত বিরাট নদীকে train করা ইঞ্জিনিয়ারিং এর দিক থেকে বেশ জটিল একটা কাজ, তার জন্য মডেল টেস্ট করা হয়েছে। অনেকগুলো Physical মডেলও পরীক্ষা করা হয়েছে। আগামী ১০০ বছরে নদীর গতিপথে কি পরিবর্তন হতে পারে, সেগুলিকে হিসাবে নিয়েই আমাদের ব্রীজটা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ (affected) না হয় সেটা নিশ্চিত করে ডিজাইন তৈরী কর! হয়েছে।
আরেকটা বড় সমস্যা হল ফাউন্ডেশন । নদীর তলদেশ হঠাৎ ক্ষয় হয়ে চলে যেতে পারে, এর পরিমাণ অল্প সময়ে ৩০-৪০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে, যমুনার তলদেশে এরকম পরিবর্তন হয়ে থাকে ; সেজন্য আমাদের Pile গুলো এমনতাবে ডজাইন করা হয়েছে, যেন এরকমটা ঘটলেও আনুভূমিক কোন শক্তি বা চাপের মুখে ব্রীজটি দাড়িয়ে থাকতে পারে।
এর সাথে ভূমিকম্পের সমস্যাটিও চিন্তা করা হয়েছে, ১৮৮৫ সালে সিরাজগঞ্জে একটা ভূমিকম্প হয়, রিখটার স্কেলে ৭ এর কাছাকাছি। Liquecfation হলে, সলিড মাটি fluid এর মত ব্যবহার করা শুরু করে, অর্থাৎ কোন ভার বহন ক্ষমতা থাকবে না, তাই এই স্তরের নীচে গিয়ে Loadটা Transfer করাতে হবে। Pile এর Bottom level PWD datum থেকে প্রায় ৮০,০ মিটার নীচে, যাতে করে সমগ্র Pile এর দৈর্ঘ দাড়াচ্ছে প্রায় ৯০ মিটার । স্টিল পাইল, Capটা কনক্রিটের । Superstructure যেভাবে হতে যাচ্ছে, আমাদের দেশে এর আগে এরকম হয়নি। Precast, prestressed, segmental construction । নদীর পূর্ব তীরে একটা casting yard থাকবে । সেখানে ৪ মিটার করে করে অংশগুলি ঢালাই করা হবে। একটা Launching girden থাকবে । সেটা দিয়ে এটাকে নিয়ে ব্রীজের জায়গামত স্থাপন করা হবে। মেঘনা ব্রীজের সাথে পার্থক্য হল, ওটা ছিল cast-in-situ আর এটা হবে precast, এতে সুবিধা হল, আবহাওয়ার কারণে কাজের অগ্রগতি ব্যহত হবে না এবং মান নিয়ন্ত্রণ আরও ভালভাবে সম্ভব। ব্রীজের দৈর্ঘ প্রায় ৪.৮ কিলোমিটার । কনক্রিটের শক্তি ধরা হয়েছে ৬ হাজার P.S.I.

ব্রীজের কাঠামো কারা ডিজাইন করেছে?
এখানে একটা Interesting concept হল design and build । আমাদের যে, consultant ছিল, তারা একটা প্রাথমিক ডিজাইন তৈরী করে, এবং সে সময়ে বলা হয়েছিল যে, যারা Tender submit করবে তারা এ প্রাথমিক ডিজাইনের ভিত্তিতেই অন্তত পক্ষে একটি বিড (Bid) জমা দেবে । Consultant একটা stressed ব্রীজ আরেকটা pre-stressed ব্রীজ এর প্রাথমিক ডিজাইন করেছিল । যে কোন একটা তারা concrete করবে । আরেকটা Bid option ছিল যে, contractor যদি মনে করে এর চেয়ে ভাল সমাধান তাদের কাছে আছে, তাহলে তারা alternative ডিজাইন দিতে পারে এবংযদি দেখা যায় যে সেটা আরও ভাল এবং কম ব্যয় সাপেক্ষ তাহলে তা গ্রহন করা হবে। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। নিন্মতম দরদাতা, যে ঠিকাদার কাজটি পেয়েছে, সেইটি একটা কোরিয়ান কোম্পানী, Hyundai ব্রীজটা তাদেরই ডিজাইন, তবে খুব বড় ধরনের কোন পরিবর্তন হয়নি । পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে Pile ডিজাইন। কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে পাইলের ব্যাস ও Orientation. এর ক্ষেত্রে ; Span মোটামুটি একই অর্থাৎ ১০০ মিটার করে। বক্স গার্ডার (ডিজাইন কিছুটা পরিবর্তন করা হচ্ছে, চূড়ান্ত ডিজাইন যেটা হচ্ছে সেটা এখন Contractor এর প্রণীত। ওরা আবার (ডিজাইনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা নামকরা ফার্ম T.Y.Lin International কে নিয়োগ করেছে। নির্মাণের সময়সূচী খুবই ঠাসা ব্রীজটা শেষ হবে সর্বমোট ৩ বছরের একটু বেশী সময়ে “৯৪ এর অক্টোবরে মুল কাজ শুরু হয়েছে আর “৯৭ এর শেষ দিকে নির্মাণ শেষ হবে।

এই ব্রীজের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাদের সম্বন্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে?
দুই পাশে মিলে প্রায় ৭০ হাজারের মত লোক আছে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে । তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হল, তাদের পুনর্বাসিত করা হবে। এই পুনর্বাসনের মাত্রাটা এমন হতে হবে যেন, তারা আগে যেভাবে জীবন যাপন করত, ব্রীজ হবার পরে যেন তাদের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। তাই তাদের জমির ও সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ ছাড়াও তাদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে তাদের জীবন যাত্রা ভবিষ্যতে আরও উন্নত হয়ে ওঠে।
এই সেতুর নির্মাণ কাজ দেখার মত হবে । কারণ এটা ভারী যন্ত্রপাতি নির্ভর, বড় বড় ড্রেজার আসবে। পানির নীচে পাথরের যে “তোষক” (Mattress) বসানো হবে সেটা অত্যন্ত দূরূহ কাজ । পানির নীচে ড্রেজ করে পাথর বসানো একটা Fixed slop -এ 1:5, যেটাকে tascine mattress বলে, সেটা sink করা হবে । এর গভীরতা হবে PWD-১৮ মিটার । আসলে খুব কম ঠিকাদার পাওয়া গিয়েছিল যারা পানির নীচের এই কাজটি করতে পারে | এই কাজটা পেয়েছে Dutch Contractorরা । এখানে মূলতঃ কাজ চারটি, কিন্তু কাজ পেয়েছে তিন ঠিকাদার, ব্রীজের কাজ পেয়েছে কোরিয়ানর হাইউন্দাই, তার contract হল ২৪৭ মিলিয়ন ডলার, River training যেটা সবচেয়ে বড় কাজ (২৭৬ মিলিয়ন ডলার), এটি পেয়েছে, ডাচ Ham van Oord ACZ. বলে একটা Joint venture আর approach road, টাঙ্গাইলের একটু উত্তরে এলেঙ্গ থেকে ব্রীজের পূর্ব পরাস্ত পর্যন্ত আর ওদিকে পশ্চিমে, ব্রীজের পশ্চিম প্রান্ত থেকে নলকা ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা, মাঝে ছোট ছোট ব্রীজ আছে, এগুলো মিলে ৫৭ মিলিয়ন ডলার, এই কাজটাও কোরিয়ানরা পেয়েছে ‘সামোয়ান কর্পোরেশন” । আমরা আশা করছি যে, harbor, jetty ইত্যাদি contractors’ facilities যেগুলি আছে, অফিস এবং অন্যান্য সুবিধাদি, আগামী চার-পাঁচ মাসের ভিতর হয়ে যাবে। ফেব্রুয়ারী-মার্চে সব কার্যক্রমই ব্রীজ সাইট থেকেই পরিচালিত হবে যা এখনও ঢাকা থেকে চালানো হচ্ছে। প্রথম কাজ যেটা অক্টোবরেই শুরু হয়েছে সেটা হল Reclamation of land এখন আছে প্রায় ১২ মিটার elevation সেটাকে আরও প্রায় ৪ মিটার উচু করা হবে।

এখানে কি Road and Highways এর পক্ষ থেকে কোন ভূমিকা রাখা হবে?
না, পুরাটাই যমুনা বনুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম, যার চেয়ারম্যান মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী, একজন কার্যনির্বাহী পরিচালক (সচিব পর্যায়ের) আছেন এবং সেতু কর্তৃপক্ষকে আরও ক্ষমতা দেবার কথা হচ্ছে যাতে সরাসরি দিদ্ধান্ত গ্রহন করা যায়। Road and Highways এর সাথে এই প্রকল্পের আপাততঃ কোন সম্পর্ক নেই। তবে R&H এর প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য বটে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে তার কোন দায়ীত্ব নাই । R&H, BWDB ও Railway-র প্রকৌশলীরা সেতু কর্তৃপক্ষের কারিগরী বিভাগগুলোতে কর্মরত আছেন।

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই, আমাদের দেশের Structural Design করেন সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা, কিন্তু, structural engineer রা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আসলে দায়ীত্বটা কার?
এখন একটা কথা হল যে, বর্তমান যুগটাই specialization এর যুগ । এক সময়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সাধারণভাবে সবকিছুই একাই করতে পারতেন, সে water resource Engineering, Transportation Engineering, Structural Engineering, যা কিছু হোক । বিশ্ববিদ্যালয় বা BIT গুলোতে যে কোর্স চালু আছে তাতে করে, একজন যদি B.Sc Engineering পাশ করে, তাহলে মোটামুটিভাবে আমরা যে প্রধান ৫টি শাখার কথা বলি তার সব শাখারই একটা ভিত্তি তাকে রে দেয়া হয়। একটা কথা বলে রাখি, আমাদের এখানে যা পড়ানো হয়, বিশেষ করে structure এ, অন্যান্য ভাল ভাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও অনেকগুলো বিষয় বেশী পড়ানো হয়। একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী নিয়ে যদি পাশ করে, সে যদি ঠিকমত আমাদের এই কোর্সগুলো অনুশীলন করে থাকে, তাহলে Ordinary structure ডিজাইন করা তার পক্ষে কঠিন হওয়ার কথা না। তবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিন্তু Practical design detail শিখানোর কথা নয়: অন্যান্য দেশে যেটা করে, পাশ করার পরে Aprentisship করতে হয়, কোন প্রতিষ্ঠিত উপদেষ্টা ফার্মে এবং কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে; ইংল্যান্ডে যেমন এক বছর থাকতে হয় ডিজাইন অফিসে, এক বছর থাকতে হয় সাইটে । এই সময়টা তার পুথিগত বিদ্যার সাথে বাস্তব জ্ঞানের সমন্বয় ঘটানোর কাজে লাগে । দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে এখন সেই বাস্তব জ্ঞান নেবার সুযোগটা এখনও সৃষ্টি হয় নাই। যার জন্য অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে সরাসরি স্বাধীনভাবে ডিজাইন করা শুরু করে । এটা না হলেই ভাল হত । যদি কোন অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে বছরখানেক কাজ করে তাহলে ভাল হয়। কারণ ডিটেইলিং খুবই গুরুতৃপূর্ণ, সেই ডিটেইলিংটা অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই আসে । এজন্য বলা হয় “Art of detailing”, আমরা structural design কে বিজ্ঞান বলতে পারি । কিন্তু ডিটেইলিং কিছুটা অভিজ্ঞতালন্ধ জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল ।
তবে, একথা ঠিক যে structural design এ কিছু বিশেষ বিশেষ সমস্যা, যেমন সুউচ্চভবন (high rise building) ডিজাইনের বিষয়গুলি under graduate এ পড়ানো সম্ভব নয়। আমরা Masters এ পড়াই, আলাদা কোর্সই আছে, কিন্তু under graduate পাশ করেই সরাসরি একটা সুউচ্চ ভবন ডিজাইন করতে যাওয়া খুব দুরূহ হবে।

আজকাল structural design এর জন্য যেসব Software বেরিয়েছে তাতে করে একটা Solution পাওয়া খুবই সহজ হয়ে পড়েছে। একজন structural Engineer এর কাছে যাবার প্রয়োজনও কমে গেছে বলে মনে হতে পারে। সে সম্বন্ধে আপনি কি বলেন?
যেটা বললে যে, structural design এর software পাওয়া যাচ্ছে, কম্পিউটার ব্যবহার করে, অনেকেই পারে ডিজাইন করে নিতে। তবে আমার ধারনা, structural Engineer এর involvement স্থপতির সাথে প্রথম থেকেই অথাৎ conceptual পর্যায়ের থেকেই খুবই প্রয়োজন । আমাদের দেশে একট। ভাল দিক হল স্থপতি এবং ইঞ্জিনিয়ারদের যোগাযোগ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় একটু বেশী, ইংল্যান্ডের তুলনায় বেশী বলব, কারণ, ওখানে আর্কিটেকচারাল ফার্ম ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম আলাদা আলাদা, তাদের কথাবার্তা হয় মিটিং এর মাধ্যমে ।
একই ফার্মে এই দৃশ্য খুবই বিরল যে স্থপতি এবং কাঠামো ডিজাইনার (structural engineer) একই সাথে কাজ করছেন। আমাদের দেশে এই পরিস্থিতি অনেক ভাল, এখানে স্থপতি এবং কাঠামো প্রকৌশলী প্রথম থেকেই আলাপ আলোচনা করতে পারেন । Conceptual stage থেকেই উভয় পেশার এই সমন্বয় খুবই গুরুত্তপূর্ণ। একটা ভুল পদ্ধতিতে শেষ পর্যন্ত হয়ত একটা কাঠামো দাঁড় করানো সম্ভব হবে, কিন্তু তা হবে খরচ বহুল, সেজন্য প্রথম থেকেই স্থপতি এবং কাঠামো প্রকৌশলী একত্রে টিম হিসাবেই কাজ করাটাই শ্রেয়। কম্পিউটারে যাবার আগে আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আছে যাকে বলে structure idealisation, এখনও যে সব software আছে তাতে যে সব কলাম, বীম, শ্লাব আছে সে সম্বন্ধে তথ্য দিতে হয়, idealise করতে হয় । এসময়ে অনেক বিবেচনার প্রয়োজন হয় । কোথায় fixed support ধরতে হবে, কোথায় hinge হবে। কোন elementটা আপাততঃ Nonstructural করে বাদ দেয়া যায় । এসব চিন্তা-ভাবনা বা সিদ্ধান্ত দেয়া যে কোন একজন ব্যক্তির পক্ষে দূরূহ বিষয় । কিছুটা বিবেচনা প্রয়োজন যেটা এখনও কম্পিউটার দিচ্ছে না। কম্পিউটার থেকে ডিজাইনের ফলাফল হিসাবে কিছু তথ্য বেরিয়ে আসবে, তাকে ব্যাখ্যা করার জন্যও আবার কিছু অভিজ্ঞতা এবং বিবেচনা প্রয়োজন। সেজন্য আমার মনে হয় যে, structural design অভিজ্ঞতার এখনও অনেক দাম আছে।

প্রায়ই একটা অভিযোগ শোনা যায়, আমাদের প্রকৌশলীরা পাশ করার পর চাকুরীতে ঢুকে পেশার চর্চা অব্যাহত রাখেন না, পেশাগত দক্ষতা নিম্নমানে এসে দাঁড়ায়। পেশায় এসে দক্ষতা ধরে রাখার জন্য কোন পরীক্ষা কি তাদের দিতে হয়?
সরকারী চাকুরীতে ঢুকতে গেলে পরীক্ষা দিয়ে ঢুকতে হয় । যেমন , P.W.D. তে গেলে বি.সি.এস. দিতে হয় । বি. সি. এস এর প্রাথমিক পরীক্ষায় তাদের Engineering subject এ কিছু পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু তার পরে চাকুরীরত অবস্থায় তাদের জ্ঞান uptodate আছে কিনা সে বিষয়ে যাচাই করার জন্য আর কোন পরীক্ষা হয় না। Institute of Engineers থেকে আমাদের সুপারিশ ছিল প্রমোশনগুলো এধরনের পরীক্ষার উপর নির্ভর করে করা হোক, পরবর্তী উচ্চতর পর্যায়ে যাবার জন্য যে যোগ্যতা দরকার তা আছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হোক। শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং নয় অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়েও পরীক্ষার মাধ্যমেই যাচাই করা যেতে পারে ।
আরেকটা কথা বলা দরকার । সবকিছু যেমন under graduate-এ পড়ানো সম্ভব নয়, এর জন্য মাষ্টার্স কোর্স আছে, সেটা বিশেষজ্ঞ তৈরীর পর্যায় । কিন্তু সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এই কোর্সগুলোতে ছাত্ররা আসতে চায় না। তার কারণ হল যে, M.Sc. করলে চাকুরীতে তার কোন স্বীকৃতি নেই। প্রমোশনের ক্ষেত্রে এর জন্য কোন সুবিধা হয় না। অথচ আমার ধারণা এটা হওয়া উচিত ছিল। সরাসরি যারা M.Sc. করে চাকুরীতে যোগ দেয়, তারা চাকুরীতে জুনিয়ার হয়ে যায়। তাদের কিছুটা Seniority-র সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।

নতুন প্রকৌশলীদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?
আমাদের একটা অভিযোগ শুনতে হয়। আমাদের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে গেলে আর পড়াশুনার চর্চা রাখে না। হালকা ভাবে বলতে গেলে অনেকে নাকি খাতা-পত্র বেচে দিয়ে চলে যায় । আমার ধারনা, যে বইগুলো পড়ানো হয় তা পরবর্তী জীবনে অনেক কাজে লাগে। জ্ঞানকে নিয়মিতভাবে সাম্প্রতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে হয়।
এই প্রথম বারের মত আমরা একটা জাতীয় বিল্ডিং কোড (National Building Code) তৈরী করেছি। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে। ভবিষ্যতে সরকার এটা একটা আইন হিসাবে গ্রহন করতে যাচ্ছে। তা যদি হয়ে যায়, তাহলে প্রতিটি ডিজাইনই এ কোড অনুযায়ী হতে হবে। প্রত্যেক প্রকৌশলীকেই কোড সম্বন্ধে ওয়াকেবহাল ও এর ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কোড সম্বন্ধে পড়ানো হবে?
আমরাও আমাদের কোর্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করব, আমরা ACI ও অন্যান্য কোড পড়াতাম এখন আমাদের বাংলাদেশ কোড পড়াতে পারব । এ বিষয়ে বিভিন্ন পেশাজীবিদের যে সংগঠনগুলো আছে যেমন, IEB, IAB, BIP এদের কিছু workshop করা প্রয়োজন, বিদেশে তাই করে । ৩দিন, ৫দিন, ৭দিনের workshop করে সকলকে অবহিত করা দরকার যাতে করে কোডের একটা সমন্বিত রূপ দাঁড়িয়ে যায়। এখন আমাদের দেশে এ দিক থেকে এক নৈরাজ্য চলছে। এখানে যে দেশ থেকে টাকা আসে তারা বলে “আমাদের কোড অনুযায়ী হবে” জাপানের টাকা হলে জাপানি কোড, জামার্ন ফান্ডে কাজ হলে জামান কোড, বৃটিশ হলে বৃটিশ কোড-এই অসামন্তাস্য দূর করতে হবে । আমার পরামর্শ থাকবে সকল শ্রেণীর প্রকৌশলীদের প্রতি, তারা যেন এই কোডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন এবং তা যেন কার্যক্ষেত্রে যথাযথ প্রয়োগ হয় তা লক্ষ্য রাখবেন।
মান নিয়ন্ত্রণ (quality control) সম্বন্ধে আমাদের একটা দূর্বলতা আছে। এটা কাটিয়ে উঠতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে উন্নতির জন্য প্রয়োজন হবে প্রচুর infrastructure development রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ, বিল্ডিং এগুলো প্রচুর পরিমাণে নির্মাণ হবে । এখন সংখ্যায় বেশী না হলেও কিছু কিছু শোনা যাচ্ছে structural failure এর কথা, ভবিষ্যতে মান নিয়ন্ত্রন না করতে পারলে এরজন্য প্রকৌশলীদের জবাবদীহী করতে হবে। অন্যান্য দেশে কিন্তু এসব ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিই আছে জবাবদীহীর। আমাদের প্রকৌশলী এবং স্থপতিদের সৌভাগ্য যে এ দেশে এখনও সেরকম কোন আইন নাই, এটা হলে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এখন সুউচ্চ ভবন নির্মাণের প্রতিযোগীতা চলছে, এমনকি মালয়েশিয়াও সবচেয়ে উচু ভবন বানানোর উদ্যোগ নিচ্ছে শুনেছি, জাপানে নাকি একটা Vertical city-ই তৈরী হবে, এ সম্বন্ধে আপনার কি মন্তব্য?
জাপানে একটা vertical city তৈরী করার কথা শুনেছি- এটা এখনও conceptual planning পর্যায়ে আছে বলা যায়, তারা চিন্তা করছে যে, সকলেই অনুভব করেন যে, ১০- ১৫ তলার উপরে গেলে অন্যান্য কিছু সমস্যা এসে যায়, স্থাপত্য বা প্রকৌশল তত্ত্বের কথা বাদ দিলেও বাসীন্দারা সকলেই মাটির কাছাকাছি থাকতে চায়। এই সমস্যাটিকে সমাধান করার জন্য সহজ পন্থা হল, একটা শহরের মাঝারি উচ্চতার বিন্ডিংগুলো যদি কেটে একটার উপর আরেকটা তুলে দেয়া যায় তাহলে একটা মাঝারি উচ্চতার বিল্ডিংএর একটা সিরিজ তৈরী হয়। এভাবে তুলতে গিয়ে তারা খুবই শক্ত platform এর কথা ভাবছে। ওরা ভেবেছে ১০০০ মিটার উচু হবে এই আকাশ নগরটি, এর মধ্যে ১৪টি plateau থাকবে । নাম দিয়েছে sky plateau এগুলোর এখনও ডিটেইল কাঠামো ডিজাইন হয়নি ।
তবে এই platform গুলো কনক্রিট এবং স্টিল মিলেই তৈরী হবে যার উপর মাটি ফেলবে । তার অর্থ এই যে প্রতি ৬০- ৭০ মিটার পর পর একটা মাটির কৃত্রিম স্তর থাকছে। এর উপর থেকে তখন আবার বিল্ডিং উঠতে থাকবে Express elevator থাকবে। প্রতিটি plateau-তে পৌছে গেলে মনে হবে মাটিতে পৌছে গেলাম, পাশ দিয়ে আকাশ দেখা যাবে প্রায় ৪০০ মিটার ব্যাসের একটা কাঠামো হবে । উপরে ক্রমশঃ কমে আসবে, ১৬০ মিটারের মত ব্যাসে গিয়ে শেষ হবে। এর Outer surface দিয়ে উচ্চগতি সম্পন্ন monorail থাকবে। Total floor area হবে ৮০০ হেক্টর, আবাসিক জনসংখ্যা হবে ৩৫,০০০; দিনের বেলা আরও এক লক্ষ লোক আসবে কাজ করতে । এই ডিজাইন কাজ অর্থাৎ conceptual design এর কাজ ‘৮৯ এ শুরু হয়েছে, এখনও চলছে। ওদের অবশ্য এরকম floating city, under water city নানারকম চিন্তাভাবনাই অনেকদিন ধরেই চলছে, যদিও তারা বলেছে যে, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ তারা কাজ শুরু করতে চায়, কিন্তু মনে হয় আরও সময় লাগবে।

আমাদের কনক্রিট তৈরীর ক্ষেত্রে যে দূর্বলতা রয়ে গেছে তা কিভাবে উন্নত করা যায়?
আমার মনে হয় এর জন্য প্রকৌশলীদের দুর্বলতার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল Building industry-তে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে, এবং কর্মীদের কাজের মানও খারাপ হচ্ছে। আমাদের দেশে এদের কাজের জন্য কোন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা নাই। একদিকে অবশ্য আমি তাদের credit দেই, প্রায় অশিক্ষিত হয়েও তারা মোটামুটি ড্রইং বুঝতে পারছে এবং সে অনুযায়ী কাজও চালিয়ে যাচ্ছে । এদের যদি আরেকটু শিক্ষা দেয়া যেত তাহলে আমাদের যে ঘাটতি আছে তা পূরণ হতে পারত। কলক্রিট তৈরীতেই এদের সবচেয়ে দুর্বলতা, আমরা হয়ত Specify করলাম ২৫০০/ ৩০০০/৪০০০ PSI. কনক্রিটের শক্তি হতে হবে । প্রকৌশলী খিনি সাইটে আছেন তিনি বলছেন এরজন্য সিমেন্ট, বালি ইত্যাদির অনুপাত কি হবে। কিন্তু তারপরে সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা-এই তদারকীটা আমাদের দেশে চালু নেই। সাধারণ বাসা-বাড়ীতে হয়ই না, ৯০% বাড়ীঘরই বাড়ীর মালিক নিজেই তদারকী করেন, ফলে মিন্ত্রী যা বলে তিনি তাই শুনেন । আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই দেখি, সারাদিন ধরে যে কনক্রিট ব্যবহার হবে সকালেই পানি দিয়ে সেটি মেশানো হয়। সারাদিন ধরেই একটু একটু পানি ঢালতে থাকে, এতে ক্ষতি হচ্ছে, একই মাল-মশলা ব্যবহার করে তিনি খুবই অল্প শক্তির কনক্রিট পাচ্ছেন । এটা বিপদজনকও হতে পারে । বেশী পানি দিলে অনেক সময় ১০০০-১৫০০ PSI শক্তি সম্পন্ন কনক্রিট পাওয়া যায় । যা স্বাভাবিক ভাবেই ফাটল ধরবে । এবং স্টিলে মরিচা ধরে এ ভবনটি একটি বিপদজনক পর্যায়ে পৌছে যেতে পারে । আরেনকটি দূর্বলতা হল স্টিল বা রড বাধায় । বেশীর ভাগ সময়ই clear cover ঠিক মত রাকা হয় না। যার জন্য কয়েক বছরের মধ্যেই কংক্রিট খসে পড়ে যায়।

এ সমস্যা অনেকটা সমাধান হতে পারত Prefabrication হলে, Prefabrication জনপ্রিয় হল না কেন?
Prefabrication পশ্চিমাদেশগুলোয় খুব জনপ্রিয় তার কারণ, যেমন ইউরোপে বছরের একটা বড় সময় ধরেই বরফের জন্য বাইরে কাজ করা যায় না। অথচ তাদের ফ্যাক্টরিতে করলে সারা বছরই কাজ করা যায়। কিউরিংও সহজ হয়, প্রিফেব্রিকেশন করলে সাইটে লেবার কম লাগে । একটা বড় বিল্ডিং সাইটে দেখা যাবে চার-পাঁচজন লোক এ ক্রেইন চালাচ্ছে, Prefabrication জিনিসগুলো লাগাচ্ছে; শ্রমিকের মুজরীও সেখানে বেশী । আরেকটি কারণ হল, নির্মাণের গতি এতে অনেকগুণ বেড়ে যায় । আমাদের এখানে বৃষ্টির সময় নির্মাণের কোন কোন পর্যায়ে একটু অসুবিধা হয় Cast-in-situ পদ্ধতিতে এখানে খরচ কম হয়। প্রিফেব্রকেশন যদি বড় বড় অংশের জন্য করা দরকার হয়, তাহলে যে সব যন্ত্রপাতি দরকার হয় তা খুবই ব্যয় সাপেক্ষ । আমাদের দেশে বড় বড় কন্ট্রাক্টর ছাড়া কেউ এটা ব্যবহার করতে পারবে না।

Ready mix-concrete তৈরী করে গাড়ীতে করে নিয়ে গিয়ে site-এ করা হচ্ছে, তাতে কি কোন সুবিধা হবে?
এটা cast-in-situ কে আরেকটু সুবিধাজনক করার জন্য, এতে মান নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে । তবে এখনও এটা ব্যাপকভাবে চালু হয়নি। হলে কনক্রিটের সঠিক শক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

আজকাল আমাদের শহরগুলোতে সুউচ্চ ভবন নির্মাণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তবে এপর্যন্ত ৩০ তলার উপরে নির্মিত হয়নি, আমাদের এখানে ৫০ তলার উপরে ইমারত তৈরীর সম্ভাবনা কতটুকু?
আমার মনে হয় না সমস্যা হবে, structural engineering দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে ফাউন্ডেশন এবং উপরি কাঠামোতে কোন সমস্যা হবে না । তবে বর্তমান সময়ে করা যুক্তিযুক্ত কিনা সেটা ভাবতে হবে, কারণ, আমাদের service গুলো মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। সুউচ্চভবনে আরও support service লাগে যেমন, water disposal, water supply, এগুলি যথাযথ নিশ্চয়তা না পেয়ে আমাদের সুউচ্চভবনে যাওয়া ঠিক হবে না । ইতিমধ্যে ৫০ তলা ভবনের একটা চিন্তাভাবনা হচ্ছিল সোনারগাঁও হোটেলের উল্টো দিকে, জানিনা এখন কোন পর্যায়ে আছে। এক সময়ে জহুরুল ইসলাম সাহেব আমার সাথে আলাপও করেছিলেন এ বিষয়ে, এখন আপাততঃ বন্ধ মনে হয়।

আপনার মতামত দিন

কমেন্ট

Logo
Logo
© 2024 Copyrights by Sthapattya o Nirman. All Rights Reserved. Developed by Deshi Inc.