স্থপতি শামসুল ওয়ারেস

স্থাপত্য ও নির্মাণ
সংলাপ
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩
২২৯
স্থপতি শামসুল ওয়ারেস

স্থপতি শামসুল ওয়ারেস বর্তমানে এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য অনুষদের ডীন, তার সাথে স্থাপত্য ও নির্মাণের পক্ষ থেকে সম্পাদক স্থপতি কাজী আনিস উদ্দিন ইকবালের এই সাক্ষাতকারটি পত্রিকার ১০ম সংখ্যায় (১৯৯৯) ছাপা হয়েছিল, স্থাপত্য পেশার আলোকে আলোচনার বহুলাংশ এখনও সমভাবে প্রাসঙ্গীক। সাক্ষাতকারটি সকলের জন্য বর্তমান ওয়েব ফরম্যাটে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।  স্থপতি শামসুল ওয়ারেসের চিন্তাধারার স্বারক হিসাবেও এই সংগ্রহটি অনেকের কাছে আকর্ষনীয় হবে বলে মনে করি।

সাক্ষাৎকারটি টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে পরে অনুলিখন করা হয়েছে সেজন্য কিছু অংশ অস্পষ্টতার কারণে বাদ পড়ে গেছে, তবুও আমরা মূলধারাটিকে সংরক্ষণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। রেকর্ডার থেকে শুনে অনুলিখনের দায়িত্ব পালন করেছেন আরিফ মাহমুদ ইকবাল।

স্থপতি শামসুল ওয়ারেস দেশের একজন সুপ্রতিষ্ঠিত স্থপতি। এদেশের অধিকাংশ কর্মরত স্থপতি তাঁর ছাত্র।শ্রেণী কক্ষে তার শিক্ষাদান পদ্ধতি, ছাত্রদের প্রতি তার আন্তরিকতা, সর্বোপরি স্থাপত্যের জন্য তার ভালবাসা সকলেরই মনোযোগ আকর্ষণ করে। এদেশের স্থপতিদের নানা সমস্যা নিয়ে, পেশার সমস্যা নিয়ে, তিনি সবসময়ই সোচ্চার এবং তার সমাধানে উদ্যোগী, স্থপতি হিসাবেও তার বেশ কিছু কাজ যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। মাথায় ঝাকড়া চুলের ছোট খাট এই মানুষটি কথা বলেন অনর্গল, কখনও কখনও এমনও হয়েছে তিনি বিকাল বেলা ডিজাইন ক্লাসে আলোচনা শুরু করেছেন আর শেষ করছেন রাত ১০টায়, অথচ কোন ছাত্রছাত্রী একটু উসখুসও করছেনা, মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছে। আলোচনা তার থেমে থাকে না, স্থাপত্য থেকে চিত্রকলা, চিত্রকলা থেকে ভাস্কর্য বা দর্শন। আলোচনার এই বহমান ধারায় তার শ্রোতা আবিষ্কার করে স্থাপত্য এমন একটি শিল্প যার ব্যপ্তী অপরিসীম। স্থাপত্য শিল্পের সমালোচক হিসাবে তার বিশ্লেষণ, তার দৃষ্টিভঙ্গী সব সময়ই কৌতুহলোদ্দীপক।

স্থাপত্য ও নির্মানের পক্ষ থেকে তার এই সাক্ষাতকারটি যখন নেয়া হয় তখন তিনি ছিলেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি, কিন্তু আমাদের গাফিলতিতে প্রকাশনা পিছিয়ে যায়। আলোচনায় স্থাপত্য ও নির্মানের পক্ষ থেকে অংশ গ্রহণ করেছেন পত্রিকার সম্পাদক ওরই ছাত্র কাজী আনিস উদ্দিন ইকবাল। 

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আপনি বাংলাদেশের স্থপতিদের ইনস্টিটিউটের সভাপতি ছিলেন অল্পকিছুদিন আগেও, এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকান্ড সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।

ওয়ারেস : বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট যে ধরনের প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ প্রফেশনাল স্থপতিদের প্রতিষ্ঠান সারা পৃথিবীতেই আছে। UIA হচ্ছে সকল ইনস্টিটিউটের আবার একটি প্রতিষ্ঠান, প্যারিসে তাদের কেন্দ্রীয় অফিস এবং সেখানে আমরা অনেকেই মেম্বার হয়ে আছি এবং UIA- এর নিয়মকানুন কিন্তু মোটামুটিভাবে সকল ইনস্টিটিউট মেনে চলছে। আমাদের ইনস্টিটিউটও অন্যান্যগুলির মত একটা নিয়মকানুনের মধ্যেই চলে। যেহেতু স্থাপত্য শিল্প একটা আর্টফর্ম সেজন্য এর একটা বিশেষ দিক আছে। আবার যেহেতু এটা একটা পেশা, যে পেশার মাধ্যমে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করা যায় এবং সাধারণ মানুষেল ভাল, মন্দ এবং ক্ষতি করতে পারে; যেমন ধরুন, বিল্ডিং ভেঙ্গে যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর বিল্ডিং তৈরী করা, তেমনি উল্টোদিকে সুন্দর বিল্ডিং নির্মাণ করা, অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরী করা ইত্যাদি ভাল বা মন্দ হতে পারে, সে জন্য নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন আসে। আবার যেহেতু এটা একটি শিল্প সে জন্য একে পুলিশি নিয়ন্ত্রণের মত করা সম্ভব নয়, করতে গেলে ফল ভাল হবে না। অর্থাৎ ইনস্টিটিউট একটা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা রাখবে, কিন্তু তা পুলিশের মত নিয়ন্ত্রণ নয় এটা হল একটা ভদ্র সমাজের একটা শিক্ষিত পরিবার বা সিভিল সোসাইটিতে ন্যুনতম যে ভদ্রতা থাকে তার উপর ভিত্তি করেই এই নিয়মকানুন অর্থাৎ যেটা ভাল সবাই সেটা মানবে। যেমন পেইন্টাররা বা শিল্পীরা, তাদেরও একটা আর্ট ইনস্টিটিউট থাকে, কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে এত নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটা আসে না, যেহেতু তারা সাধারণভাবে মানুষের বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করেনা। ইনস্টিটিউট এর মূল শক্তি হচ্ছে স্থপতিরা, একটা দেশের সমস্ত স্থপতিরা মিলে একটা ইনস্টিটিউট তৈরী করে যাতে করে এর মাধ্যমে কিছু অন্যায়কে প্রতিহত করা যায়, আবার তাদের কিছু সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা যায় এবং পেশার উন্নতি সাধন করা যায়। একজন স্থপতিকে তার কাজের স্বীকৃতি দেয়া, তার কাজকরার সুযোগ তৈরী করে দেয়া, সবকিছুর সাথে স্থপতি সমাজের ভাল সম্পর্ক করা, একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, আবার কিছু বিষয় আছে যেমন লোকে সমাজে বুঝতে পারছে না আর্কিটেকচারটা কি সেখানে আর্কিটেকচারকে জনপ্রিয় করা ইত্যাদি ভূমিকা অবশ্যই স্থপতি ইনস্টিটিউট এর আছে। স্থপতিদের উন্নতির জন্য শিক্ষা এবং তার পেশা পরিচালনার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা, তার বই কেনা বা লাইব্রেরী গড়া এবং বিভিন্ন information access তৈরী করা, অন্যদিকে রয়েছে, স্থপতি যেন সমাজের ক্ষতি করতে না পারে অথবা অন্য স্থপতিদের ক্ষতি না করতে পারে, তার কাজে একটা মান বজায় রাখে, কাজে সে হেলাফেলা না করে বা তার নিজস্ব গাফিলতির জন্য স্থপতি সমাজের ক্ষতি না হয় অথবা আমাদের সমাজের সাধারণ মানুষের ক্ষতি না হয় সে জন্য এটা একটা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। 

স্থাপত্য ও নির্মাণ : IAB বাংলাদেশের Institute, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তারা কাজ করছে, সেজন্য বাংলাদেশের জন্য আলাদা কোন ধরনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে কি IAB চিন্তা করছে? 

ওয়ারেস : অবশ্যই। মূলনীতি কিন্তু সারা পৃথিবীতে একই হতে পারে। তবে বিশেষ বাস্তব কারণে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক এবং শিক্ষার যে স্তর তার সঙ্গে অবশ্যই সমঝোতা করতে হবে। যেমন ইনস্টিটিউটের সদস্য, উন্নত দেশগুলিতে একজন গ্রাজুয়েট আর্কিটেক্ট ইনস্টিটিউট এর মেম্বার হতে হলে তিন চারটি পরীক্ষায় পাশ করতে হয়।তিনটার মধ্যে যেটা তৃতীয় পরীক্ষা সেটা অত্যন্ত কঠিন হয়। অনেকের ১০/১২ বছর লেগে যায় এ পরীক্ষায় পাশ করে ইনস্টিটিউট এর সদস্য হতে। অথচ আমাদের এখানে প্রথম যখন আমরা মেম্বার হলাম তখন অটোমেটিকালি মেম্বার হয়ে গেলাম পাশ করার সাথে সাথে, এটা অনেকদিন ধরেই চলছে, এখন আমরা একটা দরখাস্ত করতে বলি এবং কিছু রীতি নীতি করেছি। ইদানিংকালে আমরা বলছি যে, দুবছর অন্তত কোন সদস্য স্থপতির সাথে কাজ করে একটা সার্টিফিকেট না আনলে সে সদস্য হবার যোগ্য নয়। আমাদের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতেই কিন্তু এ ব্যবস্থা। হয়ত দশ বছর পর মেম্বার হতে হলে যথেষ্ট কঠিন একটা পরীক্ষা দিতে হবে এবং আমাদের ইনস্টিটিউটের সংবিধানেও সে রকম একটা নির্দেশনা আছে।

S

ছবি: স্থপতি শামসুল ওয়ারেস

স্থাপত্য ও নির্মাণ : যারা বর্তমানে সদস্য আছেন তাদের যোগ্যতা যাচাই এর কি ব্যবস্থা আছে? ধরুন একজন একসময় সদস্য ছিলেন, তিনি চর্চা করেননি অনেক দিন ধরে ফলে, তার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে কি করা যায়?ওয়ারেস দুটো বিষয় আছে যে, একজন স্থপতি নীতিগতভাবে নীতিভ্রষ্ট, আরেকজন আছেন যিনি আদতেই অত ভাল স্থপতি নন। স্থপতিদের মধ্যে কিছু খুব ভাল স্থপতি থাকবে, আবার কিছু থাকবে বেশ ভাল কাজ করে আর কিছু স্থপতি আছেন যারা অত ক্রিয়েটিভ না, সব শিল্পের বেলায়ই এমন হবে। একজন যদি খুব ভাল কাজ না করতে পারে তাহলেও আমাদের সদস্য থাকার ব্যাপারে কোন নীতিগত অসুবিধা দেখছিনা। কিন্তু তার ন্যুনতম একটা মান থাকা দরকার। যদি প্রমাণ করা যায় যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ কাজ করছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে, অন্যায় করে নীতি বিরোধী কোন কাজ করছেন সেক্ষেত্রে একটা ব্যবস্থা নেবার কথা ওঠে। আর্কিটেক্ট অ্যাক্ট যদি চালু থাকে, যেটা আমাদের এখনও হয়নি, তাহলে সদস্য পদ প্রত্যেক বছর রিনিউ করতে হবে। কারও যদি পারফরমেন্স ভাল না হয় তাহলে কাউন্সিলে যারা থাকবেন তারা প্রত্যেকটি কেসকে আলাদা করে দেখবেন এবং যদি দেখেন যে তাকে নবায়ন করা যায় না বিপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে, অবশ্যই এই বিবেচনারও কিছু নিয়মকানুন থাকবে। এ ধরনের নিয়মকানুনসহ আমরা একটা আইনের খসড়া করেছি বহুদিন আগে এবং বর্তমানে তাকে আইনে পরিণত করার কাজ অনেকটা এগিয়ে এসেছে। সরকারও চাচ্ছেন এটা করতে, তবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা এব্যাপারে যথেষ্ট প্রতিবাদ করেছে তাই সেটা নিয়ে এখন একটু সমস্যা যাচ্ছে। কিন্তু আশাকরি আমরা সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব। তবে যখন আর্কিটেক্ট অ্যাক্ট হবে তখন কিন্তু লাইসেন্স নিতে হবে, আর ইনস্টিটিউটের সদস্য না হলে আপনি রেজিস্ট্রেশন কাউন্সিলে আবেদন করতে পারবেন না। এটা এমনভাবে জড়ানো আছে যে একটার সাথে অন্যটি অত্যন্ত সম্পর্ক যুক্ত। আপনাকে প্রথমত ইনস্টিটিউটের সদস্য হতে হবে এবং তা একটা পরীক্ষার মাধ্যমে হবে বর্তমানে যা অত কঠিন নয়। সদস্য হওয়ার পর রেজিষ্ট্রেশন কাউন্সিলে আবেদন করবেন, রেজিষ্ট্রেশন কাউন্সিল থেকে আপনার লাইসেন্স পাবেন এবং প্রত্যেক বছর নবায়ন করতে হবে এবং আপনার কাজের মূল্যায়নের উপর সেটা হবে, তখন কিন্তু আইনের প্রশ্নটা আরও শক্তভাবে আসবে। বর্তমানে যেহেতু রেজিষ্ট্রেশন কাউন্সিল নাই তাই আমাদের শাস্তির ব্যবস্থা কার্যকর করা যাচ্ছেনা।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আমরা তো দীর্ঘদিন ধরে শুনছি যে আর্কিটেক্টদের ইনস্টিটিউটের রেজিষ্ট্রেশন সরকারী স্বীকৃতি পাবে অর্থাৎ এটা একটা আইন হিসাবে পাশ করা হবে কিন্তু ......

ওয়ারেস : এটা সংসদে একটা বিল হিসেবে যাবে এবং সেখানে পাশ হলেই তা আইনে পরিণতহবে, যে কোন একজন মন্ত্রী ইচ্ছা করলেই এ কাজটি করে দিতে পারেন। 

স্থাপত্য ও নির্মাণ :  এই প্রক্রিয়াটি তো অনেকদিন ধরে চলছে। তাহলে এখন পর্যন্ত কখনও এটা সংসদে কেন ওঠেনি?

ওয়ারেস : আসলে দেশে আমরা গণতান্ত্রিক সরকার বেশী পাইনি সেটা একটা কারণ, অবশ্য এটা একটা প্রেসিডিন্সিয়াল অর্ডারেও হতে পারত। সেটা অনেক সময় পরে কার্যকর থাকে না, তো ভাল উপায় হচ্ছে সংসদে আইন হিসেবে পাশ করা। সেটার জন্য দুটো ব্যাপার আছে, একটি হল সরকারকে বোঝানো, সেটা আমরা অনেক সময় করতে পেরেছি, তবে সরকার এধরনের একটা আইন করতে গিয়ে অনেক সময় ভেবেছেন যে হয়ত
এতে করে গুটিকয়েক স্থপতিদের অনেক সুবিধা হবে এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য একটা গোষ্ঠির হয়ত অতটা সুবিধা হল না বা অসুবিধা হতে পারে। একটা আইন পাশ করতে গিয়ে আবার কোন তরফের কোন ক্ষতি হতে পারে কিনা এ ধরনের একটা বিবেচনা সরকার ও আইন মন্ত্রনালয় দু একবার তুলেছে। এইবার যখন আমরা যথেষ্ট
এগিয়ে গিয়ে ছিলাম, হয়ে যাবে সব ঠিকঠাক, তখন কিভাবে যেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা আবার লিখিত আপত্তি জানিয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমরা তিনবার বসেছি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে, কথা বলেছি এবং তাদের বলেছি আপনারা যে অবজেকশনগুলি দিচ্ছেন তার যৌক্তিকতা কোথায়? ওরা প্রথমে বলেছিল এটা একটা কালো আইন, এতে কারও লাভ হবে না। এ আইন শুধুমাত্র কয়েকজন স্থপতির স্বার্থে এবং আমরা যারা মিডলেভেলের আর্কিটেক্ট হিসাবে কাজ করি আমাদের ভাত মারা যাবে এবং আমরা বিপদে পড়ে যাব। তাদের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি, আমরা বলছি এটা ঢালাও ভাবে খারাপ হতে পারে না, কারণ এটা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা সব জায়গায়
আছে এবং এসব দেশের পরিস্থিতি অনেকটা আমাদের দেশের মতই। সে কারণে এখানে কেন এই আইন হবেনা তা আপনাদের যুক্তি দিয়ে দেখাতে হবে। তো ওরা প্রথমে যুক্তি দেখাতে চাচ্ছিল না, এখন অনেকটা তারা যুক্তিতে আসছে। আমার মনে হয় যে ওদের একটা সেকশান বিশেষ করে ডিপ্লোমা আর্কিটেক্টরা কিন্তু এখন আর বেশী অবজেকশন দিচ্ছে না, কিন্তু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা এখনও অনমনীয়।

558672 584729878219003 250275054 N

ছবি: ভ্যাকেশন হাউস, গাজীপুর

স্থাপত্য ও নির্মাণ :  ওরা হয়ত ভাবছে এখন স্থপতিদের বদলে অনেক ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু স্থপতির সংখ্যা বাড়লে এমনিতেই তাদের সুযোগ কমে যাবে, ওদের কাজের জন্য ভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে, তাদের সেখানেই কাজ করা উচিত, তবে ওদের মধ্যে কারও বিশেষ যোগ্যতা থাকলে সেও স্থপতি হিসাবে স্বীকৃতি পেতে পারে। এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন আসে, IAB মেম্বারশিপ এর জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রি নেয়া কি আবশ্যকীয় শর্ত?

ওয়ারেস : একটা সময় ছিল যখন অন্য লেভেল থেকে অনেক ভাল কাজ করলে একটা এন্ট্রির ব্যবস্থা ছিল। আমাদের যে আইন আছে তাতে কমপক্ষে ১০ বছর কাজ করলে সে সদস্য হবার জন্য আবেদন করতে পারে। তার কাজ যদি সেরকম উঁচু মানের হয় এবং আমাদের ইনস্টিটিউট যদি তা মেনে নেয়, তাহলে তাকে সদস্য করতে বাধা নেই। সেটা একটা খুব ছোট পারসেন্টেজ হবে হয়তো। যেহেতু এটা আর্টের ব্যাপার এবং তার একটা মান আছে, সেহেতু মানটাকে নিশ্চিত করার জন্য সে কাজ করবে প্রথমতঃ কারও অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। সহকারী হিসেবে কাজ করতে করতে তার সিনিয়র তাকে স্বীকৃতি দিবে। তারপর সেটা ইনস্টিটিউটে বিবেচনা করা হবে। যেমন ‘তাদা আন্ডো’ জাপানের, তাদা আন্ডোর কোন ডিগ্রী নাই, এখনও অন্য আর্কিটেক্টের সাথে কাজ করতে হয়, সে কিন্তু ইনস্টিটিউটের সদস্য নয়। যদিও তিনি পৃথিবী বিখ্যাত, তার উপর হার্ভার্ডে ছয়দিনের একটা সেমিনার হয়েছিল, অর্থাৎ টপ দশ জনের মধ্যে পড়ে সে এখন। অনেকের মতে এখন ইন্টেলেকচুয়ালি হি ইজ দ্যা টপমোস্ট। তারপরও তাকে সদস্য করা হয়নি। আবার গতবার জাপানে গিয়ে দেখলাম তিনি প্রফেসর হয়ে গেছেন অথচ আর্কিটেকচারের পেশাগত ইনস্টিটিউটে তাকে সদস্য এখনও করা হয়নি। তো এ সমস্যাগুলো থাকে তবে, আমাদের এখানে এধরনের বিষয় বিবেচনার দিকটি পুরোপুরি বন্ধ না, অবশ্য এটা খুব যে সহজ তাও না।

স্থাপত্য ও নির্মাণ :  আর্কিটেক্টদের রুলস সম্পর্কে আপনি মোটামুটি বলেছেন। একটা প্রসঙ্গ প্রায়ই আসে সেটা হল, আর্কিটেক্টদের শিক্ষানবিসী। শিক্ষানবিসী না করেই তারা হঠাৎ করে পুরো প্রফেশনাল হয়ে অনেকরকম বিপদ ঘটাচ্ছে। আবার শিক্ষানবিসী করতে গেলে আমাদের মত এত দরিদ্র দেশে নতুন পাশ করা স্থপতির অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হয়ে উঠে। পাশ করবার পরে তারও তো কিছু সামাজিক দায় দায়িত্ব আছে, নিজের মৌলিক প্রয়োজন যেমন খাওয়া দাওয়া বা থাকার একটা ব্যবস্থা তাকে করতে হবে। যিনি এর একটা সন্তোষজনক ব্যবস্থা করতে পারবেন না তিনি শিক্ষানবিস হিসেবে কাউকে নিতেও পারবেন না, এরকম কি কোন নিয়ম করা যায় না? আমার কাছে যদি একটা ছেলে এসে বলে, আমি আপনার সাথে কাজ করতে চাই অথচ আমি তাকে সে ফ্যাসিলিটিটা দিতে পারলামনা, আমি তাকে ঠিকমত অ্যাটেন্ডও করতে পারলামনা যে, তুমি কি কাজ করছ দেখি, অথচ আমি দাবি করছি যে সে শিক্ষানবিস হিসাবে আমার সাথে কাজ করুক। এই Contradiction এর সুরাহা কিভাবে হতে পারে?

ওয়ারেস : এখন অবশ্য আমরা আইন করে ফেলেছি যে, ইনস্টিটিউটের সদস্য হতে হলে আপনার কারও অধীনে দুবছর কাজ করতে হবে। কিন্তু এখনও আমরা কিছুটা শিথিলভাবে নিয়ম প্রয়োগ করছি, এভাবে যে, কেউ একবছর কারও অধীনে কাজ করেছে, পরে নিজে কাজ করেছে। তার নিজের কাজগুলিকে আমরা জমা দিতে বলেছি এবং যার সঙ্গে কাজ করেছে তার সার্টিফিকেট চাচ্ছি। অনেক সময় দেখা গেছে যে, একজন স্থপতি দুবছর যে কোন একটা ফার্ম, যেখানে একজন স্থপতি প্রতিষ্ঠানের মালিক সেধরনের একটা ফার্মে কাজ করে, অথচ অনেক সময় তার মনে হচ্ছে যে, যার অধীনে কাজ করছে তিনি হয়ত সময় দিতে পারেন নাই। এত কিন্তু বেশী ক্ষতি নাই কারণ, সে অফিসে যাচ্ছে আসছে এবং কাজ কিভাবে হচ্ছে দেখছে। যখন নিজেই সে ব্যবসা পরিচালনা করবে তখন ওই সময়টা কিন্তু খুব কাজে লাগে। ওই সিনিয়র স্থপতি তাকে সময় যদি খুব কম দিয়ে থাকেন তাহলেও কিন্তু এটা হয়, আর যদি সময় দেন তাহলে তো খুবই ভালো। এটা ঠিক একজন ব্যস্ত স্থপতির পক্ষে হয়ত সময় দেয়া সম্ভবও না। কিন্তু, এতে কোন ক্ষতি হয় না। দুবছর সে’ত কিছু না কিছু রিসিভ করছে। আসলে শিখতে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমরা পাঠাইনা; স্থাপত্য পেশার যে বিভিন্ন দিক আছে সেটা সম্পর্কে তাকে সচেতন করা দরকার এবং তা সে ওখানে আসা যাওয়া করলেই অনেকটা শিখতে পারে। তাকে যদি একদম বসতেই না দেয়া হয় তাহলে অবশ্য আলাদা কথা, সে যদি আসা যাওয়া করতে পারে, দুবছর একটা কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, ওয়ার্কিং ড্রয়িং করলে বা সাইটে গেলে সে কিন্তু দেখতে পাচ্ছে কিভাবে কাজটা করা হচ্ছে। আর সে যদি ঐ দুবছরে শিখতে না পারে, তার ভেতরে শেখার ব্যাপারগুলি না থাকে তাহলে দশ বছরেও তার পক্ষে শেখা কষ্টকর।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : সে যদি ওখানে না শিখতে পারে তাহলে যার সঙ্গে কাজ করত তিনি তাকে সার্টিফিকেট দিবেন কিভাবে, এখানে তার পেশার প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্নটা চলে আসে না কি? 

ওয়ারেস :  আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছে এবং আমার সুপারভিশনে কাজ করছে একথা তাকে বলতে হবে এবং সুপারভিশন মানে যে প্রত্যেকদিন তাকে আধাঘন্টা দিতে হবে এমন কোন কথা নেই, তিনি তার সুযোগ মতই তাকে পেশাগত কাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : ধরা যাক, আমার সাথে একটা ছেলে কাজ করছে সে দেখল যে, আমার ব্যবহার ভাল না আর বিশেষ করে আমাদের এখানে মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যেমন, হতে পারে সে আমার অফিসে আসলো, পরে দেখা গেল যে আমার অফিসটা সেরকম না। অথবা একটা মেয়ে স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারে আমি ঠিক সেরকম লোক না। তখন তার যে সময় নষ্ট হয়ে গেল, তাকে অন্য কোন অফিস খুঁজে পেতে হবে, এ ধরনের অনেক সমস্যা হতে পারে। এ সমস্ত ব্যাপারগুলি আপনারা কি বিবেচনা করেছেন? 

ওয়ারেস : আসলে এই দুবছর সে বাস্তব জগতে যাচ্ছে। যখন সে নিজে নিজে কাজ করবে তখন কিন্তু মেয়েদেরই বলেন অথবা একেবারে ফ্রেশ একজন ছেলে আর্কিটেক্টেরও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। যদি ওরকমই সমাজ হয় তাহলে তো সে রাস্তাঘাট, বাস, ট্রেন প্রত্যেক জায়গায়ই আমাদের জন্য সমস্যা আছে। আপনি যে সমস্যাটা বললেন সেটা কিন্তু শুধু স্থাপত্য পেশার সমস্যা না। ব্যক্তিগতভাবে কেউ দুষ্ট হয়, ব্যবহার ভালো যদি না করে সেটা একটা সামাজিক সমস্যা। এখানে তো ইনস্টিটিউট খুব একটা কিছু করতে পারবে না, করা কঠিন। ভদ্র সমাজের মিনিমাম লেভেলটুকু যদি না থাকে তো সবই ফেইল করবে। সবাই আমরা আর্কিটেক্ট, সবাই ইঞ্জিনিয়ার, সবাই আমরা শিক্ষিত তারপরও দেখবেন যে এমন হয়, এখানে ব্যাপারটা হচ্ছে যে, একটা মানুষ আর একটা মানুষের সাথে ভদ্র ব্যবহার করবে, এটা সামাজিক একটা ভারসাম্যের বিষয়। অন্যায় একদিন করা যায়, দুইদিনের দিন কিন্তু একটা প্রতিবাদ আসে, সে জন্য, ওটাও কিন্তু একটা শেখার ব্যাপার। আমার মনে হয় যে এখানে যে মহিলা বা পুরুষ স্থপতি কাজ করবেন তার এই দুবছর একটা কষ্টকর পিরিয়ড, এটা কিন্তু কিছুটা স্বীকার করে নিতে হবে। এটা part of the game বা Training system যেটা বলবেন এবং সেটার মধ্যেই, সে যদি কিছুতেই না খাপ খাওয়াতে পারে তাহলে অনেকেই ছেড়ে দেয়, যেমন, আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়ার দুবছর পরও দেখা গেছে যে অনেকেই চলে যায়। আবার কেউ কষ্ট করে পাশ করেও ছেড়ে দিতে পারে। তো আর্কিটেক্টদের একটা ড্রপআউট হবে কিন্তু সে লস্ট হবে না। অনেককে দেখছি গার্মেন্টস করছে, অনেক আর্কিটেক্ট বিভিন্ন কাজে চলে যাচ্ছে, তারা ওখানেও ভালো করছে। যেহেতু তার একটা ক্রিয়েটিভ ফ্যাকাল্টি আছে, তার একটা শিক্ষা আছে, সে কাজে লাগছে। সামগ্রীকভাবে সমাজের কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে না। তবে আপনি যেটা বলছেন যে প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্র ইনস্টিটিউট তৈরী করে দেবে অথবা করতে পারবে কিনা, আমার মনে হয়, কোন ছাত্রকে ফেল করিয়ে দেয়। ছাত্রদের সাথে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে, কিন্তু কোন প্রতিবাদ হয় না, কারণ ঐ টিচার আবার হয়ত এতই ভাল। সাধারণত বাজে ব্যবহার যারা করে তাদের আবার একটু কোয়ালিটি থাকে। এটা আবার সোসাইটিতে একটা ব্যালেন্স রাখে। কোন কোয়ালিটি নাই, অথচ খারাপ ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ হয়। আমরা উৎসাহ দিচ্ছি যে শুধু ইউনিভার্সিটির পড়া দিয়েই যেন তুমি নিজেকে স্থপতি মনে না কর, পৃথিবীটাকে দেখ। তবে সেটা দেখতে গিয়েই ওইযে বললেন সব যে সুন্দর দেখবে না সেটাও কিন্তু আমার মনে হয় ভেরী ইম্পর্টেন্ট। এ পৃথিবীটা যে পুরো ওদের নয়, সেটা দেখার জন্যও কিন্তু এই অভিজ্ঞতাটা লাগে। আমাদের এই সব মিলিয়েই উঠতে হবে এবং সেখানে দু একজনের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। আপনি বোধহয় জানেন যে ইদানিং একটা রিয়েল এস্টেট অর্গানাইজেশন, তারা তিনজন আর্কিটেক্টকে হঠাৎ করে একদিনেই নোটিস দিয়ে চাকুরীচ্যুত করে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ কাজ করছে না, তারা আপাতত সমস্যায় আছেন। তাদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে, আশাকরি এর সুরাহা আমরা করতে পারব। অতএব, কেউ এরকম করলে ইনস্টিটিউট প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করছে। আমরা আর্কিটেক্টরা যদি একত্রিত থাকি, তাহলে কোন সমস্যাই না, আমরা যদি ইনস্টিটিউট থেকে বলতাম কেউ কাজ করবে না এবং সবাই সে কথায় পাত্তা না দিয়ে কাজ করত তাহলে তো আমরা কিছুই করতে পারতাম না। এই সমস্যাটা শেষ হোক, চিরকালের জন্য আমরা না করছি না, তো এখন তারা বুঝতে পারছে যে ইনস্টিটিউটকে বাদ দিয়ে এটা পারা যাবে না। সে জন্য তারা আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমাদের সমাজটা যদি একটা মিনিমাম লেভেলে থাকে এবং আর্কিটেক্টরা যদি একত্রে থাকে তো আমার মনে হয় অনেক অড সিচুয়েশনেও আমরা সুন্দর সুন্দর সলিউশন দিতে পারব। রাতারাতি বিরাট কিছু করা যাবে না। কিছু নবীন স্থপতি আছে তারা এত ভালো যে পাশ করেই তারা ফার্ম খুলতে পারে, কিন্তু তবু আমরা তাদের দুবছর চাচ্ছি এজন্যে যে, ভালো ডিজাইনার হলেও ডিজাইনটা যে সবকিছু নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ইউনিভার্সিটি থেকে যারা সবচেয়ে ভালো ডিগ্রী নেয় তারা যে সবাই প্রফেশনে ভালো তাতো নয়। অনেকে অনেক নীচের দিক থেকেও ভালো করে। এদের সামগ্রীকভাবে বাস্তব জগত ও পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে ধারনা এবং সমাজের চলার জন্য বৈষয়িক বুদ্ধি অনেক বেশী আছে। ফলে তার সৃজনশীলতা এবং বৈষয়িক বুদ্ধির সংমিশ্রনে অনেক রেজাল্ট বেশী পাচ্ছে সে। এজন্যই এই শিক্ষানবিসিটা দরকার এবং এতেকরে বেশ কিছু লোকের অসুবিধা হবে এটা বলা যায়, আমরা স্বীকারও করি। এমন কোন আইন নাই যে প্রত্যেককে সুবিধা করে দেবে। আগে কিছুই লাগতো না, আবেদন করলেই হত। আমরা হয়ত বলতাম রেজাল্ট ভালো কি ভালো না, ভালো না হলে কিছু পরামর্শ দিতাম। আসলে ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্য নয় একজন আর্কিটেক্টকে বাদ দেয়া, উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন আর্কিটেক্টক সে যদি অত ভালো আর্কিটেক্ট না হয় তাকে যেন শুধরিয়ে আমাদের মধ্যে রাখতে পারি।

স্থাপত্য ও নির্মাণ :  ইনস্টিটিউটের আরও যে সমস্ত আইন কানুন আছে, যেগুলো প্রয়োগের সমস্যা হতে পারে যেমন আর্কিটেক্টকে কাজ কমিশন করার নিয়ম, ইনস্টিটিউট হয়ত বলবে যে একজন স্থপতিকে সরাসরি কাজ দিয়ে দিতে পার অথবা প্রি কোয়ালিফাই করে দিতে পার অথবা ওপেন কম্পিটিশন কর। কিন্তু যখনই কম্পিটিশান ডাকা হয় তখনই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের অবস্থানটা জানা দরকার।

ওয়ারেস : ডিজাইন কম্পিটিশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে করে নবীন, প্রতিভাবান, এরকম কোন স্থপতিকে কাজ দেয়া যায়। অন্যদিক থেকে যারা ভাল এবং সুন্দর একটা প্রজেক্ট করতে চাচ্ছেন কিন্তু স্থপতি নির্বাচন করতে পারছেননা সেরকম ক্লায়েন্ট যোগাযোগ করলে বা আমরা যদি জানতে পারি কোনভাবে তাহলে অনেক সময় ইনস্টিটিউটের তরফ থেকে আমরা তাদের কাছে বলি যে ডিজাইন কম্পিটিশন করলে একটা ভাল প্রজেক্ট হবে। যারা ভালো স্থপতি, তাদের কাছে তো যাওয়াই যায়, তবে একটা ডিজাইন কম্পিটিশনের মাধ্যমে মাঝে মাঝে নতুন একজন অচেনা স্থপতিকে নিয়ে আসা যায়। যেমন, আপনার টোকিয়ো কম্পিটিশনটা হল কয়েক বছর আগে, সে উরুগুয়ের এক আর্কিটেক্ট নিউউয়র্কে এসে কাজ পেয়ে গেল এবং ওই কম্পিটিশনে সে ফার্স্ট হয়। এর আগে ছোট একটা জিমন্যাসিয়াম ডিজাইন করেছে সে অথচ এই একবারেই সে ফেমাস হয়ে গেছে। তো এই পদ্ধতি চালু রাখতে, হবে তা না হলে দেখা যায় কি শুধু কয়েকজন স্থপতিই কাজ পাচ্ছে। তার বাইরে ডিজাইন কম্পিটিশনের যেটা প্রবলেম সেটা হল আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠান বা ক্লায়েন্ট যারা ডিজাইন কম্পিটিশন নিজেরাই ডাকে, সেখানে আমাদের ইনস্টিটিউট এর নীতি একেবারে স্পষ্ট, ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে কোন ডিজাইন কম্পিটিশন না হলে সেটা থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক স্থপতি অবশ্য বিরত থাকেন না, তবুও বিরত থাকতে বলা হয়। যদি স্থপতিরা বিরত না থাকেন তাহলে সমস্যা হয় এবং ঐসব ডিজাইন কম্পিটিশনে দেখা যায় যে নিয়ম কানুনের কোন ঠিক থাকেনা। শুধু তাই নয়, এমনও দেখা গেছে কোন স্থপতি কাজ পাওয়ার জন্য একটা সাজানো ডিজাইন কম্পিটিশন করে অথচ তাকেই কাজ দেয়া হবে। এই অসাধু প্রাকটিসটা কিছু আছে। এটা খুব দুঃখের ব্যাপার এবং এটা যদি না থাকত তবে আমাদের সুন্দর সুন্দর প্রজেক্ট হতে পারত। তবে এর মধ্যেও আমরা যেমন চবড়ঢ়ষবং ওহংঁৎবহপব এর একটি কাজ করেছি, তারপরে যে বর্তমানে স্বাধীনতা স্মৃতি সৌধ, দুবারে করলাম, একবারে ভালো প্রজেক্ট করা যায় নাই তাই দুবারে করা হলো। কিছু কিছু কাজ আমরা করে যাচ্ছি ইতোপূর্বে সাভার স্মৃতিসৌধ আমাদের ইনস্টিটিউটের ডিজাইন কম্পিটিশনের মাধ্যমে এসেছে। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক বিল্ডিংটাও আমাদের ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে, ওয়াপদার বিল্ডিংটাও, এভাবে কতগুলি ভদ্র ও ভালো বিল্ডিং হয়েছে। এসব কর্মকান্ড, যদিও এখানে ফ্রাসটেশন আছে, তবু যেখানে আমরা করতে পেরেছি মোটামুটি ভালো রেজাল্ট পেয়েছি। পাশাপাশি স্থপতিরা কিছু ডিজাইন কম্পিটিশন করছেন বা ক্লায়েন্ট কিছু নিজেদের খুশিমত লোক দিয়ে, তাদের একটা কমিটি করে, সেখানে মাঝে মাঝে দেখা যায়, একজন দুজন স্থপতিও জুরী হিসেবে উপস্থিত থাকেন, সেটা খুবই অন্যায়। যেহেতু আমাদের এখানে আর্কিটেক্ট অ্যাক্ট এখনও পাশ হয় নাই, সরাসরি তাদের কিছু বলা যায় না, তবে আমরা আজকাল নিন্দা প্রস্তাব করছি, নিন্দা জানানোর চেষ্টা করছি, তো সেভাবে হয়ত একটা কাজ করা যাবে।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আমাদের দেশে কিছু বিদেশী স্থপতি কাজ করে থাকেন, তাদের কাজ করার বিষয়ে ইনস্টিটিউটের বক্তব্য কি ?

ওয়ারেস : বাইরের যারা স্থপতি কাজ করেন সে বিষয়ে ইনস্টিটিউটের নীতিমালার যে খসড়া আমরা দিয়েছি সেখানে লেখা ছিল বাইরের কোন স্থপতি বাংলাদেশে কাজ করতে পারে। তবে তাকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং সেটা হচ্ছে সাময়িক লাইসেন্স। তাছাড়াও লোকাল কোন আর্কিটেক্ট এ্যাসোসিয়েট করতে হবে। যে সমস্ত প্রজেক্ট ফাইনান্স বাইরে থেকে হয় সে সব প্রজেক্ট অনেক সময় বাইরে থেকে স্থপতি আসে, কোন কোন প্রজেক্ট আছে সেখানে আমাদের দেশের আর্কিটেক্টের এক্সপার্টিস হয়তো নাই, সে সব ক্ষেত্রে বাইরে থেকে স্থপতি নিশ্চয়ই আসতে পারে। তো তাকে লোকাল একজন আর্কিটেক্ট এর সাথে কাজ করতে হবে এবং টেম্পোরারি লাইসেন্স নিতে হবে। একেবারে লাইসেন্স ছাড়াই, ছাড়পত্র ছাড়াই কাজ করছে এটা হবে না। 

স্থাপত্য ও নির্মাণ : বিদেশী স্থপতিদের আসার প্রসঙ্গে একটা বিষয় লক্ষ্য করছি যে, আমাদের এখানে কয়েকটি কোম্পানিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যারা বাইরের আর্কিটেক্টদের দিয়ে ডিজাইন করিয়ে এনে তা প্রচারের বিষয়বস্তু করে তুলছে এবং তা এমনভাবে করা হচ্ছে যেন আমাদের স্থপতিরা অতটা যোগ্যতা সম্পন্ন নন।
ওয়ারেস : দুইভাবে প্রতিবাদ করা যায়। একটা হতে পারে আমরা ঐ সমস্ত প্রতিষ্ঠানে যেতে পারি বলতে পারি, কাজটা ঠিক হয় নি। আরেকটা হল, আমাদের দেশের স্থপতিদের কাজ ভালো করা, তাহলে এই মনোভাব কিন্তু বেশীদিন টিকবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু ঘটনা জানি যেখানে দেখা গেছে বাইরে থেকে কাজ করিয়ে আনার পরেও ওটা বাতিল করে আবার এখানে করিয়েছে। আমাদের ক্লাইমেট, আমাদের কালচার, আমাদের ব্যবহার এসবের সাথে তারা পরিচিত না। আমেরিকা, জার্মান বা ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের আর্কিটেক্ট হলেও এসব জায়গায় তারা যথেষ্ট ভুল করে। অবশ্য Five star হোটেল বাইরে থেকে ডিজাইন করিয়ে আনছে এটা কিন্তু খুব বেশী অন্যায় নয়। কারণ Five star হোটেলের ডিজাইন করার যে বিভিন্ন ধরনের দিক আছে এরকম বিশেষজ্ঞ এখানে দূর্লভ, ওদের সাথে কাজ করতে করতে দেশেও তা পিক আপ করবে। ভারতে আজকাল Five star হোটেলগুলি লোকাল আর্কিটেক্টরা করছে, কিন্তু বেশ সময় নিয়েছে। প্রথমদিকে বাইরের আর্কিটেক্টরা করে গেছেন। ভারতে এখন বেশ কিছু বিদেশী আর্কিটেক্ট স্থায়ীভাবে বসবাস করে কাজ করছেন। আমাদের এখানে লুই কা‘ন কাজ করে গেছেন, সে একটা সময় ছিল, এখন কাজ করতে হলে আমাদের ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আসতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা রাজউককে জানিয়েছি এবং মিনিস্ট্রিতে আলাপ করেছি এবং সরাসরি বিদেশ থেকে নকশা করিয়ে রাজউক থেকে পাশ করা যাবে না, এরকম একটা আলাপ আলোচনা আমরা করেছি এবং অন্তত:অ্যাক্ট পাশ হওয়ার আগে রাজউকের মাধ্যমেই তা করতে হবে আর রাজউক ইনস্টিটিউটের মেম্বারশিপ না থাকলে ওটা পাশ করবে না, এরকম একটা কথা চলছে এবং এটুকু কনভিন্স করতে পেরেছি যে একে সাময়িক আইন হিসেবে আমরা চালু রাখতে পারব। 

স্থাপত্য ও নির্মাণ : কম্পিটিশন প্রসঙ্গে আরেকটি কথা, সরকারি P.W.D- র পক্ষ থেকে অনেক সময়ে সরকারী বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজাইন কম্পিটিশন আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে ইনস্টিটিউটের ভূমিকা ছিল গৌন, এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি ?

ওয়ারেস : আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে অনেক আর্কিটেক্ট আছেন, তারা অনেক কম্পিটিশন অর্গানাইজ করেছে, তারা নিজেরাই জুরী বোর্ডে থেকে একটা আপাত: সরকারী ভূমিকা পালন করেছে। এরশাদ সাহেবের সময়ে এরকম কিছু কাজ হয়েছে। অনেক কম্পিটিশনে দেখা গেছে যে এরশাদ সাহেবের সাথে সরকারি প্রধান স্থপতি সাহেবকে দেখা গেছে সিলেকশন কমিটিতে আছেন। আমাদের বুয়েটে আর্কিটেক্টকচার ডিপার্টমেন্টের প্রধান এবং ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের চীফ আর্কিটেক্টকেও অনেক সময় অনেক জায়গায় কম্পিটিশনে একক স্থপতি জুরার হিসেবে একটা কমিটির মধ্যে নিয়ে, একটা ডিজাইন পাশ করিযে নিয়েছে যা আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিন্দা করেছি এবং আমরা অনেকবার আলাপ আলোচনা করেছি, কিন্তু এত সিনিয়র লোক যুক্ত থাকায় আমরা শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। কারণ ইনস্টিটিউটকে শক্ত হতে হবে আগে, শক্ত হতে হলে আরও সদস্য বাড়াতে হবে। এখন তো আমাদের ৫০০ আছে, ৮০০-৯০০ আর্কিটেক্ট হলে নানা রকম কর্মকান্ড যেমন ধরেন, আপনি ম্যাগাজিন করছেন, তো লোক বেশী পাবেন একটি সুন্দর ম্যাগাজিন দাঁড়িয়ে যাবে, তারপর ধরেন আপনার ইনস্টিটিউট চালানোর জন্য কিছু লোক পাওয়া যাবে, তারপর এইযে নিন্দা এবং শাস্তি দেয়ার ব্যাপারটাও আরেকটু বেশী প্রয়োগ করা যাবে। ব্যাপার হচ্ছে যে, যখন আপনার ইনস্টিটিউট খুব ছোট অল্প কয়েকজন মাত্র, তখন কিন্তু আপনার লোক নেয়া জরুরী, বেশী বাধা সৃষ্টি না করে অবজেকশন না দিয়ে সদস্যপদ দিয়ে তাকে বড় করতে হয় যখন মনে হবে এটা যথেষ্ট বড় হয়েছে তখন এর সদস্য হতে খুব কষ্ট হবে। যেমন, ঢাকা ক্লাব যখন হয তখন খুব সাধাসাধি করা হয়েছে মেম্বার হবার জন্য, আমি যখন খুব ইয়ং তখন আমাকে খুব সাধাসাধি করা হয়েছিল মেম্বার হতে। এখন হয়ত আমি যদি চেষ্টাও করি হতে পারব না। সেই সময়টা ঠিক কখন তার কোন মাপকাঠি নেই, আমি মনে করি, এখন একটু একটু করে শক্ত হওয়ার ব্যাপারগুলি আসছে। আপনারা জানেন বেশ কিছু নবীন স্থপতিকে আমরা মেম্বার করিনি, তাকে আবার পাঠিয়েছি কোথায় কাজ করেছে, কি কাজ করেছে, সার্টিফিকেট আনো ইত্যাদি করে এবং সবাই এখন জানে দুবছর এখন থেকে কারও অধীনে কাজ না করলে মেম্বার হওয়া যাবে না, তো এটা আমরা এখন করেছি, তারপরে আমরা শক্ত ধরনের কাজ ও একটু একটু করে ধরতে পারব। প্রাথমিক পর্যায়ে স্থপতি ইনস্টিটিউটের অল্প সংখ্যক মেম্বারশিপের সময়ে আমরা অনেক বেশী সহ্য করেছি। দুবছর অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়ে আমরা যখন কঠোরতা দেখালাম অনেককেই একটু মনঃক্ষুন্ন দেখা গেল, আমি তো হতে পারব না আমার তো দেড় বছরের ইত্যাদি। তারপর আমরা ইন্টারভিউ নিয়ে তাকে সাহায্য করেছি, ঠিক আছে তুমি ছমাসে যেসব কাজ করেছ সেগুলি আনো। তারপর মোটামুটি ভালো হলে তাকে ছেড়ে দিয়েছি, কাউকে বলেছি তোমাকে আরও ছমাস অপেক্ষা করতে হবে। যারা সদস্য হয়ে গেছে এ পদ্ধতির মধ্যে তারা সবাই বলছেন এটা খুব দরকার।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় পৌরসভার বিল্ডিং এর জন্য ডিজাইনের প্রতিযোগিতা আহবান করে। ফান্ড নেই কিন্তু তারা কম্পিটিশন কল করছে, এখন এই সব ব্যাপার যদি আবিষ্কার করা যায়, একজন কম্পিটিটর L.A.B কে জানালো। এদের ফান্ড নেই অথচ এরা কম্পিটিশন কল করেছিল এই অবস্থায় L.A.B কি করবে?

ওয়ারেস : ইনস্টিটিউটের নীতিমালায় স্পষ্ট লেখা আছে, যে কম্পিটিশন ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে হবেনা, কোন অবস্থায় তুমি সেই কম্পিটিশনে জড়িত হবে না। জড়িত হওয়ার পরতো আর ইনস্টিটিউট তাকে সাহায্য করতে পারবে না। তার মানে প্রথম কথাই হল তুমি ওখানে যাবে না। যদি কোন আর্কিটেক্ট না যেত তাহলে নিয়মানুযায়ী করতে বাধ্য হত।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আর ইনস্টিটিউট যখন ঘোষণা করে সকলকে জানিয়ে দিচ্ছে, ওমুক কম্পিটিশনে কেউ
অংশ গ্রহন করবেন না, তা সত্তেও কেউ কেউ যাচ্ছেন এবং তার বিরুদ্ধে ইনস্টিটিউট
কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা কেন?

ওয়ারেস : সেজন্য আমরা একটু একটু করে শক্তি অর্জন করছি। যেটা আপনি একদম জুনিয়র যারা সদস্য হচ্ছে তাদের সাথে আলাপ করলেই বুঝবেন, ইনস্টিটিউট আগের থেকে টাফ হয়ে গেছে। একজন সদস্য হয়ে গেলে তার সদসদ্যপদ কেটে দিতে গেলে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ থাকতে হয়। আমরা যদি তা করি সে’তো মামলা করবে ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে। সেখানে প্রমাণ করে আমাকে পাশ করে বেরিয়ে আসতে হবে। আসলে আর্কিটেক্টদের বিরুদ্ধে লাগা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। একটা কাজ যদি সে নিয়ে নেয় অন্যায়ভাবে তাহলে আমরা নিন্দা প্রস্তাব করছি, আস্তে আস্তে ভালো মন্দের বিচারটা যখন সুন্দরভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে, যেমন ধরেন একজন আর্কিটেক্ট সে কাজ ভালো করে না, সে কিন্তু ভাল প্রাকটিশনারও হতে পারে না। ইনস্টিটিউটকে ফাঁকি দিয়ে সেতো চলতে পারে না। কারণ যারা ভালো যেমন, উত্তমের কথা যদি বলি, ওতো অনেক কাজ পায় এবং অনেক কাজ সে করতে অস্বীকার করে এখন। আবার অনেক আর্কিটেক্ট আছে যারা কাজ পাচ্ছে না। কাজের জন্য বসে আছে। ছোট কাজ পেলেও নিবে, কম পয়সা হলেও করবে তাও পাচ্ছে না। কেন হচ্ছে? উত্তম যে কোন কারণেই হোক সে ভালো কাজ করে, তাকে সময় মত কাজ দিতে হয় ধারাবাহিকভাবে, ও যদি ভাল ডিজাইন না করতে পারে তাহলে ওর কাছে লোক যাবেনা।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আর্কিটেক্টের ক্লায়েন্ট আর্কিটেক্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন যে, সময়মত কাজ দেননি, আমি তাকে ফি দেব না। সেক্ষেত্রে কি আর্কিটেক্টদের বিরুদ্ধে কি ইনস্টিটিউটের কিছু বলার থাকবে?

ওয়ারেস : অবশ্যই থাকবে। যদি সে দলিল করে, আমি এই ফি নেব এবং তার বিনিময়ে এই কাজ দেব, তাহলে তার দুটোই হবে। যদি দেখা যায় ক্লায়েন্ট ফি দিচ্ছে না, পয়সা-টয়সা দিচ্ছে না, অথচ কাজের বেলায় বার বার নালিশ করছে সেটা অবশ্যই আমরা সর্ট আউট করব, আমরা দুদিকই দেখব। আবার আর্কিটেক্ট যদি অন্যায় করে তাহলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিবেচনাটা নিরপেক্ষ থেকেই করা হবে। তবে আর্কিটেক্টরা যে অনেক সময় কাজ দেননা, তারও ভাল যুক্তি থাকতে পারে। যেমন ডিজাইন ডিসিশান মাঝে মাঝেই চেঞ্জ হচ্ছে, তারপর আইনত রাজউকের কিছু নিয়ম আছে, সেখানে হয়ত ক্লায়েন্ট চাচ্ছে আরেকটু জায়গা বেশী নিয়ে নিতে, আইনকে অমান্য করতে চাচ্ছে, অথচ আর্কিটেক্ট চাচ্ছে না করতে, ঐ সব কারণে যদি দেরী হয শুধুমাত্র স্থপতি দেরি করে দিয়েছে সেটাই একমাত্র কথা হতে পারেনা। সবকিছু মিলিয়েই দেখতে হবে এবং ক্লায়েন্টের সাথে আলোচনা করলে, ভালোমত বোঝালে ক্লায়েন্টও শোনে এবং আমরা দেখেছি ক্লায়েন্টরা মোটামুটি রিজনেবল থাকে। ক্লায়েন্ট দেখা যায় বুঝতে পারছে না তাকে বোঝালে বুঝতে পারে, এটা কিন্তু স্থপতি নিজেই করতে পারে কিন্তু অনেক সময় সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেলে আর সে বোঝাতে পারে না। সে সব ক্ষেত্রে আরেকজন আর্কিটেক্টের কাছে যাওয়া ভাল। সেই আর্কিটেক্ট যার এই সমস্যা তিনি যদি আরেকজন আর্কিটেক্টকে এনে বলেন আপনি বোঝান এবং তিনি যদি বোঝাতে সাহায্য করেন তাহলে পর্যায়ক্রমে ইনস্টিটিউটও আসতে পারে। এসব ব্যর্থ হলে তো আইন আদালত আছে, সাধারণত: আরবিট্রেশন সম্মন্ধে এগ্রীমেন্টে একটা পয়েন্ট থাকে এবং সেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা অবশ্যই ইনস্টিটিউট নিতে পারে।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : স্যার, এবার একটু প্রফেশনাল এথিক্স নিয়ে জিজ্ঞাসা করি, অনেক স্থপতি দেখা যায় নানা ধরনের পেশাগত বিচ্যুতির সাথে জড়িত হয়ে পড়েন, নিজেরাই ক্লায়েন্টকে উৎসাহিত করছেন আইন ভাঙ্গতে। এক জায়গায় একটা ডিজাইন করে, পরে অন্য ক্লায়েন্টকেও সেটি ধরিয়ে দেয়া অথবা কেউ যদি অন্যের ডিজাইন করা বিল্ডিং নিজের নামে চালিয়ে দেয়, এধরনের কথা সাম্প্রতিক সময়ে শোনা যাচ্ছে, এর প্রতিকার কি?

ওয়ারেস : ডিজাইন পেশাটা হল শিক্ষিত সমাজের জন্য, আর প্রতিটি পেশাজীবী এবং তার ক্লায়েন্ট যদি একটা ভদ্র সমাজে থাকে তাহলে আমাদের এথিক্স এর প্রশ্ন আসে। আমাদের সমাজে শিক্ষার হার তো কম। তবে সচেতনতা আস্তে আস্তে বাড়ছে। আপনি একবার দুইবার আন এথিকাল কাজ করে হযত পার পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তা স্থায়ী হবে না কারণ এখন কম্পিটিশন প্রচন্ড। অনেক আর্কিটেক্ট কাজ পাচ্ছেন না। সময় মতো কাজ দেয়া, ভালো ডিজাইন করা, ভালো ব্যবহার করা এসবই কিন্তু পেশা গড়ার জন্য দরকার, এটা ইনস্টিটিউটের জন্য বসে থাকে না। যে ভালো সে নিয়ম মেনেই হচ্ছে, আর যে হচ্ছে না সে কিন্তু শাস্তি পাচ্ছে, কাজ পাচেছ না, দেখবেন সে কিছুদিন পর প্রফেশন থেকে ঝরে পড়ছে। অতএব এথিক্স এর প্রয়োজনটা হচ্ছে বাস্তব জীবনে বেঁচে থাকার জন্যই, এথিক্স না মেনে কেউ বেশীদিন প্রফেশনে থাকতে পারবেনা। আবার যেমন আপনি বললেন আইন মানার কথা, আইন না মেনে অনেক সময় ক্লায়েন্ট বিল্ডিং করতে চায় বিল্ডিং বড় করার জন্য। স্পেস বেশী নষ্ট করল, কেটেকুটে তার এত স্পেস নষ্ট করল, যার জন্য তার ইকনমিক ভায়াবিলিটি কমে গেলো, এটা আর্কিটেক্টের তরফ থেকে অন্যায় হতে পারে। এটা ঠিক এথিকাল সমস্যা না। ইনস্টিটিউট তো ডিজাইন শেখাতে পারেনা। আপনি কতটা জায়গা ছাড়বেন কতটা ছাড়বেন না সেটা শেখাতে পারেনা। আপনি একটা কন্ট্রাক্ট করলেন কন্ট্রাকটা ফেল করল কিংবা আপনি যদি খারাপ আর্কিটেক্টচার করেন তার জন্য ইনস্টিটিউট কিছু করতে পারে না। আপনি যদি খারাপ আর্কিটেকচার করেন এবং তার জন্য বিল্ডিং যদি ভেঙ্গেও পড়ে সেটার জন্য দেশের প্রচলিত আইন আছে। আপনাকে তো ওখানেই দায় নিতে হচ্ছে। ইনস্টিটিউট হচ্ছে একটা লার্নেড বডি। ইনস্টিটিউট কিছু রেকমেনডেশন দেবে, কিছু লেকচারের ব্যবস্থা
করবে, কিছু এগজিবিশন করবে। ভূল বোঝাবুঝি না করে বরং সমঝোতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি ধরনের একটা কর্মকান্ড  রাখবে ইনস্টিটিউট। দুর্নীতির কথা বলছেন, এখানে গভর্মেন্ট যেহেতু করাপ্ট, গভর্মেন্টের প্রজেক্টগুলিতে এগুলো বেশী হচ্ছে। বিভিন্ন গভর্মেন্ট ইন্সটিটিউশনের কর্মকর্তারা আর্কিটেক্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু দুর্নীতি করছে কিছু আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে। তো সেজন্যই আমাদের সময় লাগছে। এখানে আর্কিটেক্টদের মোরালিটি উঁচু মানের হতে হবে, এটা কিন্তু পুলিশি করে আমরা পারব না, বরং এর যে স্বাভাবিক মোরাল স্ট্যান্ডার্ড এবং এথিকাল স্ট্যান্ডার্ড তা রক্ষা করতেই হবে। প্রাইভেট কাজে আমরা সুন্দর একটা ব্যাপার দেখছি। যারা ভালো আর্কিটেক্ট তারা কাজ পাচ্ছে। যারা ফাঁকি দেয়, একবার দুবার হয়ত পাচ্ছে এর পরে আর পাচ্ছে না, এরা ঝরে যাচ্ছে এবং টিকে থাকার জন্যই তাকে কিন্তু নিয়মাবর্তী হতে হচ্ছে। সময়মত কাজ দিতে হচ্ছে, ভাল ডিজাইন করতে হচ্ছে এবং ফিও ভাল নিতে হচ্ছে। ফি কিন্তু কম নিলে আবার পারা যায়না। সেজন্য আমার মনে হয় যে আমরা অনেকটা ভালোর দিকে যাচ্ছি। ইনস্টিটিউট যে লার্নেড বডি বললাম লার্নেড বডি হিসেবে আমরা ম্যাগাজিন তৈরী করার চেষ্টা করছি। যেমন ইনস্টিটিউট যেটা করার কথা সেটা আপনি করছেন। ব্যক্তিগতভাবে অনেক আর্কিটেক্ট বই লিখছেন, আর্টিকেল লিখছেন, পেপারে লেখালেখি করছেন। এসবই কিন্তু মোরাল এথিকাল পুল রক্ষা করার জন্য। ইনস্টিটিউটের ১১ জন মেম্বার যারা কার্যনির্বাহী কমিটিতে আছেন তারাই সব করবেন আর কেউ কিছু করবে না, তাও না, আর সেটা হচ্ছেও না, আসলে অনেকেই বিভিন্নদিকে বিভিন্ন ক্যাপাসিটিতে কাজ করছে, এবং আরেকটু শিক্ষিত সমাজ তৈরী হলে নিয়ম মানার বিষয়টি কিন্তু আরও মজবুত হবে। ইনস্টিটিউট শুধু নৈতিক বিষয়ে কাজ করতে পারে, দু-একজনকে শাস্তিও দিতে পারে, সেটাও আবার সমস্ত আর্কিটেক্টদের সাথে বসে মিলিতভাবে একটা শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়। নিন্দা প্রস্তাব করতেও আবার অনেক সময় যথেষ্ট সমস্যা হয়। ওরকম হলে ক্লায়েন্টও কিন্তু ভীষনভাবে একটা বাজে অবস্থায় পড়ে যাবে। যদি আর্কিটেক্টরা লেখেন এই আর্কিটেক্টের এই প্রবলেম ছিল, সে কিন্তু বেশ অসুবিধায় পড়ে। সমাজের মধ্যে একটা ভারসাম্য আছে। আর যে বললেন, যে একজনের প্রজেক্ট আরেকজন করছে বলে প্রচার করছে, এটাতো শিক্ষিত সমাজের মধ্যে পড়েই না। এটা যদি ইনস্টিটিউটকে শিখাতে হয় তাহলে তো মুশকিল। একদিন দুইদিন হয়ত সে অন্যায়ভাবে প্রচার করে একজায়গায় যাবে, কিন্তু, সত্য প্রকাশিত হবেই। এই যে ম্যাগাজিন বের করছেন বা এধরনের যদি কিছু ফোরাম থাকে সেখানে এসব ব্যাপারকে প্রকাশ করে দেয়া যায়। আমরা ইনস্টিটিউট থেকেও মাঝে মাঝে এটা করতে পারি। আমাদের যে সমস্ত পাবলিকেশন আছে, যে সমস্ত ডায়রেকটরি আছে সেগুলোতে যদি আমরা কিছু কিছু লিখি তাহলে কিন্তু একটা ডকুমেন্টেশন হয়। আমাদের প্রফেশনে ডকুমেনটেশন কিন্তু লোকে ভালভাবে করেনা। একজন ক্লায়েন্টের সাথে যখন এগ্রিমেন্ট হয় তখন কিন্তু এটা থাকা উচিত, যে আমার ডিজাইন যে কোন জায়গায় তুমি ওটা ব্যবহার করতে পারবে না। লক্ষ্য করবেন, অনেক আর্কিটেক্টের ড্রইং এর মধ্যে লেখা থাকে যে এটা রিপ্রোডাকশন করা যাবে না, শুধুমাত্র এই সাইটের জন্য অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না। বইতেও থাকে, বাংলাদেশের যে কোন বইতেও লেখা থাকে প্রকাশনা স্বত্বটি কার। আমরা কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সিরিয়াস নই। সেজন্যই একজনের ডিজাইন আরেকজনের বলার সুযোগ হচ্ছে, আমরাই সুযোগ করে দিচ্ছি। আমরা যখন ডিজাইন করি তখন সেই ডিজাইনকে মূল্য দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় যে, আমরা অন্যের ডিজাইনে সই দিয়ে দেই। এটা কিন্তু একেবারেই আন এথিকাল। তাকে ড্রয়িংকে সম্মান দিতে হবে, ড্রয়িংকে সঠিক গুরুত্ব দিতে হবে এবং এজন্য এগ্রিমেন্টে একটা সাইটের উল্লেখ থাকে এবং এই সাইটের জন্য আমি ডিজাইন করছি এবং এই ডিজাইন অন্য কোন সাইটে ব্যবহার করা যাবে না একথা এগ্রিমেন্টে থাকতে হবে, যেন ক্লায়েন্টের জানা থাকে এটা আমি একবারই পাচ্ছি একটা সাইট এর জন্য। আবার যদি কোন আর্কিটেক্ট কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তো তাকে প্রথমেই দেখে নিতে হবে, ওখানে ডিজাইনারের স্বীকৃতি দিচ্ছে, না ফার্মের নামে হচ্ছে, এ বিষয়ে আগে থেকেই একটা সমাধান করেই কাজের দায়ীত্ব নেয়া উচিত, নিজের কাজকে সম্মান দিতে হবে এবং স্থাপত্যকে সহজ পণ্য হিসেবে দেখা উচিত নয়।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আপনি যে উদ্যোগটি নেয়া যেতে পারে বলছেন সেটা কি একটা ডাটা ব্যাংক যেখানে প্রতি বছর সদস্য স্থপতিদের কাজের তালিকা সংগ্রহ করা হবে?

ওয়ারেস : অনেকটা তাই, এখানে একটা সমস্যা কি যে, মনে করেন কেউ জানালো খুলনা তে তার একটা কাজ হয়েছে, খুলনা শহর থেকে অনেক ভেতরে, আবার আরেকজন আর্কিটেক্ট বললেন ওটা আমার কাজ। এর সমাধান এখন আমরা করতে পারব না, হয়ত ঢাকা শহরের জন্য একটা সিস্টেম দাঁড় করোনো যাবে।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : সব ক্ষেত্রে’ত আর এমন হবে না, যেখানে হবে তার জন্য একটা তদন্ত কি করা যায় না?

ওয়ারেস : ধরেন আমি আমার ডকুমেন্টে ছাপিয়ে ফেললাম। ছাপানোর পরে আরেকজন দেখল আরে আমার প্রজেক্টটা তো আরেকজনের নামে ছাপিয়েছে। তখন সে অভিযোগ করল, তো এই জিনিসটা প্রথমবার যে ছাপলাম সেটা আমি কিসের ভিত্তিতে ছাপব? আমাদের তো ঐ ভেরিফিকেশনের সুবিধা নাই, সে কারণে আমরা পারি না। এটা যার যার ফার্মের থেকে একটা প্রকাশনা থাকে যে আমরা কি কাজ করেছি এবং সেখানে যখনই প্রকাশনা হয় তখনই ভুক্তভোগী স্থপতির উচিৎ কথা বলা। যেমন ধরেন, এখানে নগর ভবনের এর কথা উঠেছে, ডিজাইন করেছে আবু হায়দার ইমামুদ্দিন, অথচ তার কথা বলা হচ্ছে না, ইমামুদ্দিন অবশ্য এখানে নেই, এখন এটা যদি আমরা কোথাও প্রকাশ করি, আমাদের ডায়রেক্টরিতে হোক বা আপনার ম্যাগাজিনে বা কোথাও কোন আর্টিকেলের মাধ্যমে যদি আসে, তাহলে সবাই জানবে। কিন্তু ইনস্টিটিউট এই দায়িত্ব নিতে গেলে তার একটা ভাল লজিস্টিক সাপোর্ট লাগবে। কারণ ইনস্টিটিউট এ ধরনের কাজ করতে পারেনা যে, একবার ছাপানো হল, তারপর থুক্কু দিলাম যে ভূল হয়েছিল। যেহেতু এটা লার্নেড বডি সেজন্য আমরা প্রত্যেক স্থপতির প্রত্যেকটা কাজের হিসাব নেয়ার বদলে যে সমস্ত ভাল কাজ সে গুলির হিসাব নেয়াতে বেশী আগ্রহী। সে জন্য ডিজাইন কম্পিটিশনে অ্যাওয়ার্ডের ব্যবস্থা আছে, আরও হয়ত কিছু করা যাবে। লেখালেখির ব্যাপারেও যেমন, সবচেয়ে ভালো আর্টিকেল যে এবছর লিখলো তাকে পুরস্কৃত করা যায়, এগুলো আস্তে আস্তে হয়েও যাবে। কিন্তু আপনি যেটা বললেন একেবারে প্রত্যেকের ডিজাইনের একটা চার্ট রক্ষা করা এটা আসলে ইনস্টিটিউটের ঠিক কাজের আওতায় পড়েনা। আবার কিছুটা ফ্রিডমও থাকে, কোন কোন কাজ হয়ত আপনি প্রচার করতেও চান না। যেটা আপনার ভালো কাজ হয়নি সেটা হয়ত আপনি উচ্চ বাচ্য করতে চান না, সেটুক সুযোগ থাকা উচিত। তার ক্যারিয়ারের জন্য এটা প্রয়োজন আছে। একটা ভালো কাজের জন্য যদি দুজন দাবী করেই বসে, আমাদের কাছে যদি কোন অভিযোগ আসে, সেখানে অবশ্যই আমরা মধ্যস্থতা করব। তদন্ত করে বের করব। প্রয়োজনে তদন্ত কমিশন তৈরী করব কে আসলে কাজটা করেছে পুরো হিস্ট্রি নিয়ে, ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞাসা করে বের করার চেষ্টা করব। তবে একটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি আছে। সাধারণতঃ একজনই ডিজাইনার হয় বা একটা টিম যদি কাজ করে তাহলে হয়ত তিনজন ডিজাইনার হবে এবং সেটা আগে থেকে জানাবে আমরা তিনজন মিলে ডিজাইন করছি, সেখানেতিনজন ডিজাইনার হবেন বা একজন হবেন। এটা বের করতেই হবে এবং কে ডিজাইনার এবং প্রাপ্য স্বীকৃতি তাকে দিতেই হবে। আর বিল্ডিং এর মালিক, ফার্মের মালিক যে কোন ব্যক্তি হতে পারে, আর্থিক দিক থেকে সে মালিক, কিন্তু ক্রিয়েটিভিটি, ইমাজিনেশনের মালিক সেতো হতে পারে না। আমাদের এখানে পেইন্টিংএ, লিটারেচারে এগুলি আছে, বইয়ের প্রকাশক কে, লেখক কে, তারপর ডিস্ট্রিবিউটর কে সবই তো লেখা থাকে। সিনেমার কে পরিচালক, কে প্রযোজক কে ডান্সমিউজিক বা মিউজিকের পরিচালক, স্ক্রিপ্ট রাইটার, কে ঢিসুম ঢিসুমের পরিচালক, এ সবই তো থাকে অর্থাৎ স্বীকৃতি দেয়ার একটা পদ্ধতি আমাদের এখানে চালু আছে। আমাদেরও কিন্তু একদম নেই তা নয়, প্রজেক্ট আর্টিকেলে দেখি আমি সামসুল ওয়ারেস আর্কিটেক্ট, থাকে প্রতিষ্ঠানের নাম, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার অমুক তারপরে নির্মাতা কনকর্ড, এটা থাকার নিয়ম। আমাদের এখানে চর্চা নাই বলে নিয়মটা যে ভুল হয়ে যায় তাতো না। নিয়মটা আছে আমাদের এখানে মানা হচ্ছে না।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : মনে করেন, আমি একটা ডিজাইন করব। আমি আমার জুনিয়রদের নিয়ে কাজ করছি, এখন আমি বললাম যে এপাশে ওটা দাও ওপাশে ওটা দাও। তারাও তাদের মত দিচ্ছে এবং ডেভেলপ করছে, তাহলে ডিজাইনটা সে একা কেন করেছে বলবে? এখন ধরেন ডিজাইন টিমের মধ্যে আমরা যদি এভাবে আইডেন্টিফাই করি যে, ডিজাইনের মধ্যে একজন কনসেপ্ট ডেভেলপ করেছে, একজন ডিজাইন ডেভেলপ করেছে। এভাবে যদি ভাগ ভাগ করে তাদের পজিশনগুলি ক্লিয়ারিফাই করা যায় তাহলে বোঝা যায় যে আপনি কোন পজিশনে কাজ করছেন।

ওয়ারেস : কিছু সমস্যা হয়, একটা টিমের কাজ নির্ভর করে টিম লীডারটা কে তার উপর। যেমন ধরেন, আমি লুই কা’নের সাথে কাজ করছি। তখন যদি লুইকা’ন একবারও বলে এটা এভাবে এভাবে করেন, তাহলে কিন্তু এটা ওর ডিজাইনই হবে। আবার যদি আমার সমান ক্যালিবারের একটা লোককে নিয়ে ডিজাইন করি। তাহলে দেখা যাবে যে, পুরো ডিজাইন করেও সে আমাকে বাদ দিতে পারছে না। আমরা যে মাজহারুল ইসলামের ওখানে কাজ করেছি, চিন্তাও করি নাই আমাদের নাম হবে, আমাদের নাম কোথাও নাই। ড্রাফসম্যান হিসেবে নাম লিখেছে। আমার কোন অসুবিধা নাই আই ফিল প্রাউড যে উনার সঙ্গে ড্রাফসম্যান হিসেবে কাজ করছি। কিন্তু আবার ধরেন জহিরুদ্দিন স্যারও আমাদের সিনিয়র ছিলেন। জহিরুদ্দিন সাহেবের ফার্মে আমি কাজ করছি, সেখানে আমার নাম না থাকলে আমি প্রতিবাদ করতাম। আপনার মাত্র দুবছরের জুনিয়র ব্যাচের একটা ছেলে আপনার সাথে কাজ করলে আপনি পারবেনই না তার নাম না লিখে। সে আপনার মুখে মুখে তর্ক করবে। আমি ডিজাইন করলাম আপনি আপনার নাম লিখেন কোন সাহসে, এটা বলে ফেলবে। কিন্তু, আপনি যদি লুই কা’নের কাছে যান তাহলে কিন্তু সারাদিন রাত কাজ করবেন কারণ, আপনি আসছেনই তার কাছে শিখতে। কারণ জানেন, দুবছর থাকতে পারলে আপনার আখের গুছিয়ে যাবে। তো আমার মনে হয় এগুলো ঠিক অংক করে হবে না। আমি টিম লিডার অতএব আমার নাম থাকতেই হবে, টিম লিডার হয়েও আমার নাম নাও থাকতে পারে, আবার টিম লিডার না হয়েও আমার নাম থাকতে পারে, এটা একটুখানি জটিল আছে। সৃষ্টিটা আসলে কার সে টিম লিডারই হোক জুনিয়র মোস্টই হোক ডিজাইনটা কার? তারই কিন্তু মূখ্য ডিজাইনার হিসাবে নাম আসবে। তারপরে টিম লিডার থাকুক। মূখ্য ডিজাইন কনসেপ্ট কিন্তু একটা জুনিয়র লোকেরও থাকতে পারে। এইটা ঠিক অংক করে আপনি বের করতে পারবেন না। অংক করে বের করলে সব সময় জহিরুদ্দিন সাহেবের মত চীফ আর্কিটেক্ট নাম থাকবে। প্রধান স্থপতি সাহেব একদিনও ডিজাইন দেখলেন না, কিন্তু সরকারী নিয়ম হল উনি সাইন না করলে ড্রয়িংটা যায় না। উনি যখন প্রধান স্থপতি বলে সাইন করছেন, তখন কিন্তু ফর অল রিসন উনার ডিজাইন বলেই মনে হচ্ছে। তাজমহল কে ডিজাইন করেছেন আজ পর্যন্ত আমরা জানিনা, ইসা বলে একজনের নাম অবশ্য শোনা যায়। ডকুমেন্টেশন না করলে এ রকম কনফিউশন থাকবেই।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আরেকটা সমস্যা হল, প্রজেক্টের যিনি মূল ডিজাইনার তিনি যদি লিবারেল হন, তিনি হয়ত বললেন, ঠিক আছে তোমরা চারজন আমার সঙ্গে কাজ করছ, তোমাদের চারজনের নামই দিব। এই চারজনের মধ্যে কে কোন কাজ করেছে তা বলা হয় না, বরং সিনিয়রিটির ভিত্তিতে নাম গুলো দেয়া হয়। এতে বোঝা যায় না, কার কতটুকু অবদান।

ওয়ারেস : নিয়ম হল যে, যখন চাকরি করছে তখন সেই স্থপতির একটা অবশ্য করনীয় দায়িত্ব হচ্ছে সে যদি ডিজাইন করে তাহলে তার স্বীকৃতি আছে কিনা দেখা। যদি না হয় তৎক্ষনাৎ প্রতিবাদ করা এবং পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা। এটা কিন্তু তাকেই মূলতঃ দায়িত্ব নিতে হবে, দায়িত্ব নিল না তাহলে দশ বছর পরে আমি আপনাকে প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। আপনি জানেন, জীবনানন্দ দাশের কল্যানী বলে একটা নভেল বের হয়েছে এতদিন পরে। দেশ পত্রিকায় উঠছে। এখন ওর নাম মুছে আমি আমার নাম যদি লিখে দিতাম তাহলে যেহেতু আমি এটা পেয়েছি আর কেউ জানেনা আমি পেয়েছি এটা, তখন এ সুযোগটা ছিল। কিন্তু আমি জানি যে আমার লেখার চেয়ে আমি যে জীবনানন্দ দাশেরটা খুজে পেয়েছি এতে আমার বেশী নাম হবে। কিন্তু স্থাপত্য পেশায় এমন আবিষ্কার করা আরও কঠিন। আসলে যে ডিজাইন করে সে যেখানেই কাজ করুক ডিজাইনার হিসাবে তার নাম যাওয়ার জন্য তাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এটা ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : অনেক সময় স্থপতি নিজেই চায়না তার নাম প্রকাশ করতে, অনেকে চাকুরী করছেন বলে যেমন সুযোগ হচ্ছেনা আবার অনেকে নিজে থেকেই হয়ত নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে নিজের কাজ বলে অস্বীকার করেন তার সুনাম নষ্ট হবে ভেবে, এতে করে কোন স্থপতির কাজের ধারাবাহিকতা কেউ বুঝতে পারেনা, তার সম্মন্ধে একটা কৃত্রিম ধারনা সৃষ্টি হতে পারে যে ওনার সব কাজই ভাল বা খারাপ, আপনার কি মত?

ওয়ারেস : আপনারা কি সব কবিতা লিখে ছাপান ? আমি কথার কথা বলছি। যে কবিতা লেখে, কিছু কিছু ছাপায় না, যে এটা হয় নাই, কিন্তু তার একটা ভালবাসা থাকে সেজন্য ফেলে দিতে বা ছিঁড়ে ফেলতে পারে না, সেটা লুকিয়ে রাখে তাইনা? তো ভাল ডিজাইন হলে সে প্রচার চাইবে তবে ভাল মন্দ যাই হোক স্বীকৃতি আদায়ের দায়িত্ব তারই থাকবে এবং
পরবর্তী সময়ে ইনস্টিটিউট বলেন বা অন্য কোন সংস্থা বলেন তাকে সাহায্য করতে পারবে। তো আমার মনে হয় মানুষের স্বাভাবিক প্রবনতাগুলোকে আমরা আইন দিযে বেঁধে দিতে পারবনা। ভাল কাজগুলিকে বিশ্লেষণ করলেও তার কাজের ধারার সাথে পরিচিত হওয়া যায়, সবচেয়ে বড় কথা একজনের সীমাবদ্ধতা সম্মন্ধে ধারনা তৈরী করেই বা কি লাভ?

স্থাপত্য ও নির্মাণ : এখন স্থাপত্য শিক্ষার জন্য অনেকগুলো ইউনিভার্সিটি হয়েছে। এগুলোর শিক্ষাক্রম নিয়ে ইন্সটিটিউটের কোন বক্তব্য আছে কিনা, অর্থাৎ কিভাবে পড়ানো হচ্ছে, পড়ানোর সম্পূর্ণ ফ্যাসিলিটিস আছে কিনা, উপযুক্ত শিক্ষক আছে কি না এসব। যেখান থেকে পাশ করলে আপনি তাদের মেম্বারশিপ দিবেন তাদের সেই ফ্যাসিলিটিস আছে কিনা, শিক্ষার মান কেমন, এগুলোর ব্যাপারে ইনস্টিটিউট কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছে এ পর্যন্ত না এ ব্যাপারে তাদের কোন কর্মসূচী আছে?

ওয়ারেস : ইনস্টিটিউট সত্যি সত্যি কোন পদক্ষেপ নেয়নি তবে শিক্ষার মান যাচাই এর দায়ীত্ব বোর্ড অব এডুকেশনের। এটা সব দেশেই আর্কিটেক্ট অ্যাক্ট এর মাধ্যমেই বোর্ড অব এডুকেশনটা হয় এবং বোর্ড অব এডুকেশন তখন এধরনের শিক্ষার প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেয়। সে সমস্ত স্কুল বা প্রতিষ্ঠান আবেদন করে না তারা কিন্তু সদস্য হতে পারে না। সেজন্য স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তারা আপডেট থাকে। ভিজিটিং টিম যায় যে তোমাদের কারিকুলাম কি? কি কি পড়াও, ক্লাসরুম, টিচার সংখ্যা এগুলো অনেকসময় বোর্ড অব এডুকেশন ঠিক করে দেয়। আমাদের ইনস্টিটিউটের বোর্ডের নিয়মানুযায়ী আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রাজুয়েট বা সমান কোন ডিগ্রীর কথা কিন্তু বলা আছে। এর বাইরে গ্রাজুয়েট শুধু খুলনা থেকে বের হয়েছে। খুলনারটা আমরা মোটামুটি দেখেছি। ব্যাক্তিগতভাবে আমি দেখেছি যে, এদের স্ট্যান্ডার্ড যথেষ্ট ভালো করেছে, আমি দুবার জুরার ছিলাম। শেষ বর্ষের প্রজেক্টগুলো যথেষ্ট ভালো। অন্য কোন জায়গা থেকে এখনও কোন ব্যাচ বের হয়নি। আমাদের একটা ছোট এডুকেশন কমিটি আছে। আমরা ভাবছি আমরা কিভাবে যাব, কারণ আরম্ভে আমরা কোন ঝগড়াতে যেতে চাইনা এবং এটাতো কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হতে পারে না। তো আমরা তাদের জানাতেও চাই যে, যারা পাশ করে প্রাকটিস করতে চায় তাদেরকেও মেম্বার হতে হবে, সেই সূত্র ধরে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চাই। আপনাদের কারিকুলাম, আপনাদের কোর্স এবং আপনারা ছাত্রদের সাথে কেমন সহযোগিতা করেন এগুলো আমরা বুঝতে চাই। পরে যদি একটা সুন্দর উত্তর পাওয়া যায়, তাহলে আমরা হয়ত বললাম যে এই জায়গায় তোমাদের ঘাটতি আছে সেটা উন্নত করা উচিত। এই উদ্যোগটা বোধ হয় আরও আগেই করা উচিত ছিল। তবে মনে হয় যে, এখনও দেরী হয়ে যায়নি খুব।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : কারিকুলামে যদি ব্যাপক পার্থক্য থাকে তা ছাত্রদের পক্ষে যাচাই করা খুবই কঠিন বিষয় তবে অসামঞ্জস্য থাকলে একসময় প্রতিবাদ হবে যেমন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি প্রচন্ড আন্দোলন হয়ে গেল, এডমিশন টেস্ট নিয়ে। অ্যাডমিশন টেস্টে কোন বিষয়টা কিভাবে প্রাধান্য পাবে, সেখানে ইনস্টিটিউটের একটা ভূমিকা অবশ্যই ছিল, শিক্ষকদেরও ছিল, তো এই ব্যাপারটা আমরা জানতে চাই।

ওয়ারেস : প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, এবার থেকে ফিজিক্সেও অ্যাডমিশন টেস্ট হবে, ফিজিক্সের প্রশ্ন থাকবে। তো আমরা যেহেতু শৈল্পিকচেতনার উপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকি এবং স্থপতি হওয়ার জন্য বেসিক রিকোয়ারমেন্টস তাই হওয়া উচিত। সে কারণেই আমরা প্রায় সব শিক্ষকরাই এক সময় সিগনেচার করে প্রতিবাদ করি। পরবর্তী সময়ে এই প্রতিবাদ থেকে আমরা অনেকে সরে যাওয়াতে শেষ পর্যন্ত এবছর কিছু করা সম্ভব হয়নি এবং আপনি তো জানেনই বোধ হয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিষয়টি সমঝোতায় আসে এবং এই সমঝোতা সাফল্য লাভ করার পক্ষে এখনও আমরা অনেকেই আছি। কিন্তু, ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষ এটাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল প্রথমে। বিভিন্ন পত্রিকায় উঠেছিল, এটা নিয়ে হয়ত আবার প্রতিবাদ আসতে পারে। কিন্তু প্রথম বার যেরকম ২৬জন টিচারের মধ্যে ২৬জন পক্ষে ছিল এবার কিন্তু ছিলাম অর্ধেক, এবারে যখন আমরা ইস্তফা দিলাম তখন অর্ধেক শিক্ষক দেন নাই। আমাদের মধ্যে বিভক্তি হয়ে যাওয়ায় একে আরও প্রবল শক্তিশালী আন্দোলন রূপে আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। তবে এই দিকটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে আমরা এক সঙ্গে থাকতে পারিনি। আমরা ২৬জন একই সঙ্গে প্রতিবাদ শুরু করি এবং সিগনেচার করে প্রতিবাদ জানাই অথচ সেখানে আমাদের অর্ধেকতো শুধু সরেই যায়নি বরং সম্পূর্ণ উল্টোদিকে কথা বলতে শুরু
করেন, এটা খুব দুঃখজনক তো এর সমাধান করতে হবে অবশ্যই, কারণ অ্যাডমিশন টেস্টের মধ্যে ফিজিক্স রাখার কোন যুক্তি আমরা এখনও জানি না। ফিজিক্স অবশ্য আমাদের একটা সাবজেক্ট আছে এবং থাকবে।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : এ প্রসঙ্গে আমি একটা কথা বলে নেই, যারা এমপ্লয়ার তাদের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী যে তারা কি চাচ্ছে অর্থাৎ বাস্তব কর্মক্ষেত্র থেকেই কি কিছুটা ধারনা করা উচিত না যে কারিকুলামটা কি হবে?

ওয়ারেস : কারিকুলামটা তো আমাদের চেঞ্জ হয়। আমাদের যে পাঁচ বছরের কোর্স এতে ভালো মন্দ যাই আছে তাকে নিশ্চয়ই সমালোচনা করা যায় এবং এই পাঁচ বছরের কোর্স যা আছে তাই আছে। অ্যাডমিশন টেস্টের সময় ফিজিক্সসে ভালো ছেলে নেয়ার একটা প্রবণতা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির হয় এবং ওরা আমাদের উপর তা চাপিয়ে দেয়। যারা হয়ত প্রতিভাবান ছিল অথচ ফিজিক্সে ভালো না তাদেরকে এখন আমরা নিতে পারছি না, তো এটা যে কোন কারণেই হোক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখতে সক্ষম হয় নাই, দূর দৃষ্টির অভাব বলতে হবে। আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট কি ভাবে পরিচালিত হবে সেটা মূলত এই বিভাগের শিক্ষকদেরই দায়িত্ব এবং তাদের ওপরই নির্ভরশীল হওয়া উচিত। তাদের কথাই শোনা উচিত। স্থাপত্য বিভাগকে একটি ইন্সটিটিউট করে দেয়ার কথা আমরা বলছি, চারুকলা ইনস্টিটিউটের মত হবে। কথা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে যে পরীক্ষা হবে তা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের বিশেষ করে যারা তখন আন্দোলন করেছিল তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের কথা শুনেই করতে হবে। তো এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি তবে আমরা চাই যে সেভাবেই হোক প্রধানমন্ত্রী যেমন চেয়েছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বলেই ঐ পরীক্ষাটি হয়েছে সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। তা না হলে কিন্তু পরীক্ষাটি হতো না। কারণ ছাত্ররা হাঙ্গার স্ট্রাইকে যাচ্ছিল, প্রতিবাদ করত, বাধা দিত। কিছুই হয়নি কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, এবার ছেড়ে দেন সামনের বছর আপনাদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। আমরা আলাদা ইনস্টিটিউট করার চেষ্টা করছি এবং উনি ঘোষণা করেন যে এবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সঠিক ছিল না। আর আমি মনে করি আমাদের আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্ পক্ষের এর একটা বৈরীভাব আছে এবং অযথা এটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা সংখ্যাগরিষ্ঠের ব্যাপার নয় এটা অ্যাকাডেমিক ডিসিশন এবং যারা এর সাথে জড়িত তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় হতে পারতো যে আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের বেশী টিচার কোনটা বলেন। তো অন্য ডিপার্টমেন্টের টিচার যারা কম্পিউটার সায়েন্স, কেমিস্ট্রি, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান তাদের এটার উপর কিছু বলা উচিত ছিল না, তবুও তারা তাই করেছেন। উনারা কয়েকজন অন্তত বলতে পারতেন যে, এটা আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের উপর ছেড়ে দিন, সেই মহানুভবতা বা সাধারণ সৌজন্যটাও তারা করেননি এবং তার ফলে আমরা প্রতিবাদ করি। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা আর্কিটেকচার ইনস্টিটিউট আমরা চেয়েছিলাম, আসলে ঐ প্রতিবাদের সময় তো কথা উঠে, যে আমাদের অনেকেই চান আলাদা হতে আবার অনেক টিচার তা চান না মনে হয়। তারা বুয়েটের সঙ্গেই থাকতে চান যে কোন কারণেই হোক। আমার ব্যক্তিগত মতে আমরা আলাদা একটা ইনস্টিটিউট হলে আরও অনেক বেশী সৃজনশীল হতে পারব। ইউনিভার্সিটিতে অনেকগুলি সেনসেটিভিটি ও সেনসিবিলিটি আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের জন্য আমরা পাই না। ফলে আমাদের অনেক কর্মকান্ডই কিন্তু খুব সুষ্ঠ হচ্ছেনা।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা অভিযোগ তুলছেন আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট সময় মতো পরীক্ষা নিতে পারে না, সময়ের মধ্যে প্রজেক্ট করতে পারে না। নিয়ম শৃংখলায় যথেষ্ট শিথিল, তাই তাদেরকে সাহায্য করার জন্যই তারা মাঝে মাঝে উদ্যোগী হন এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সুনামটা রক্ষা হয়। 

ওয়ারেস : এগুলো তো অ্যাডমিশন টেস্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত না, তাহলে অ্যাডমিশন টেস্টে কেন পরিববর্তন আসবে? আমি যদি সময় মতো কাজ না করি আমাকে ক্রিটিসাইজ করবে। আমি রেকর্ড নিয়ে দেখেছি তারা আমাদের থেকে অনেক বেশী অলস। অনেক টিচার আছে সারা মাসে একদিন ক্লাস নিয়েছে। আমাদের এখানে, আমাকে বলা হয়েছে আমি ক্লাস নেই না। আমি কিছু কম নেই স্বীকার করি কিন্তু সারা মাসে একবার ক্লাস নিয়েছে এরকম টিচার ওদের ডিপার্টমেন্টই আছে। ওরা যে সমস্ত দোষগুলি দিয়েছে ওই সমস্ত দোষ ওদেরই অনেক বেশী। পরীক্ষাতে ভুল, প্রশ্নপত্র ভুল এধরনের মারাত্মক মারাত্মক ভুল ধরা পড়ে, ওরা যেহেতু সংখ্যায় বেশী, শক্তিশালী তাই বলেই যাচ্ছে, আসলে
এধরনের কোন কিছু হয় না। আপনি তো দেখেছেন ছাত্রও ছিলেন। শিক্ষার মানের প্রতিতো আমাদের সবারই দরদ আছে, আরও ভাল স্কুল আমরা আশা করি। স্কুলটা অত ভাল হয়নি, সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু, পরীক্ষা সময় মতো হলো না, খাতা দেখল না। এমন’ত হয় না। তারপর একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব কাজ করা হয় অথচ শুধু শুধু তারা অভিযোগ করছে। ছাত্ররা ধরেন একটা প্রজেক্ট ধরে বলল, যে সময় আমরা দিচ্ছি তাতে কাজ শেষ করা সম্ভবনা। আমরা’ত দেখছি ছাত্র sincerely কাজ করছে একটু সময় দিলে satisfaction অনুযায়ী শেষ করতে পারবে,তো অনেক সময় আমরা এটা consider করি, আমাদের পড়াশুনার পদ্ধতিটা এরকমই, একে কঠোরতম নিয়ম কানুনে বেঁধে ফেললে শেষ পর্যন্ত সৃজনশীলতাকেই অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু সামগ্রীকভাবে আমরা কিন্তু অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট থেকে পিছিয়ে থাকিনা, তাছাড়া পরীক্ষা গুলো‘ত এক সাথেই হয়। 

স্থাপত্য ও নির্মাণ : স্যার, আরেকটা কথা উঠেছে যে, স্থাপত্যে ভালো স্কোর হয় না, অথচ ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে তারা ৮০% নম্বর পায়, এতে নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়ে রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। 

ওয়ারেস : দেখবেন ইংরেজী ও বাংলা ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট ক্লাস পায় এমন ঘটনা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে খুব কম হয়। অঙ্কে হয়ত ৫০% ছেলে ফার্স্ট ক্লাস পায়, ইকোনোমিক্সেও প্রচুর ছেলে ফার্স্ট ক্লাস পায়। কতগুলি সাবজেক্ট আছে যেখানে অঙ্কের মত মার্কস উঠে। যেমন, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর চারজন পাঁচজন অনার্স পায়। আমাদের একজনও এ পর্যন্ত অনার্স পায় নাই, পাবে বলে মনে হয় না। এটাতো তুলনামূলক ব্যাপার না, তুলনা করলে ভুল হবে। যে দিন ৮০-৯০ করে অনার্স পাওয়া শুরু করবে আর্কিটেকচারে তখন বুঝতে হবে something is wrong, আর যদি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পায় তাহলে বোঝা যাবে স্ট্যান্ডার্ড বাড়ছে, ছেলেদের কোয়ালিটি বাড়ছে। আমাদের এখানে আপনি চিন্তা করেন অনার্স পাওয়া আর্কিটেক্ট। অনার্স পাওয়া আর্কিটেক্ট দিয়ে আপনি কি করবেন? এইটাই আমরা বোঝাতে পারিনি, জয়নুল আবেদীন মোট্রিক পাশ কিনা সন্দেহ আছে। নভেরা তো পাশ করে নাই। তবুও জয়নুল আবেদীন তো শিল্পাচার্য। আমাদের বুয়েটের থেকে এখনও একজন আচার্য হয় নাই তো। হয়নি কেন? এসব প্রশ্ন আমরা করতে পারি। লজ্জার ব্যাপারে যে, এতগুলি স্কলার একটাও নোবেল প্রাইজের নমিনেশনও পেলনা এ পর্যন্ত। তো এগুলো তর্কের ব্যাপার। এটা খুবই অন্যায় এবং এই যে সেনসিভিটির কথা বললাম, আমাদের সাবজেক্ট সেনসিভিটির সাবজেক্ট, ক্রিয়েটিভ সাবজেক্ট। এটা নস্বর দিয়ে হয় না,
আমরা বোঝাতে চেষ্টা করলেও উনারা বুঝতে চান নাই। এটাই বলতে হবে কারণ অনেক ডায়লগ হযেছে এবং মনে হয় পেশাগত ইর্ষা থেকেই তাদের এই আচরণ আসছে, একজন আর্কিটেক্ট পাশ করলেই দেড়-দুই বছরের মধ্যেই একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে সুন্দরভাবে তার ডিমান্ড সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারছে। লোকে তার কাছে আসছে ডিজাইন করাতে পয়সা দিয়ে। অন্যান্য প্রফেশনে চাকরী করে বেশীরভাগ, দুচারজন অন্য ব্যবসা করে হয়তো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের ছেলেরা সারারাত ড্রয়িং করে ক্লাসে অনেক সময় ঘুমায়, আমি এটাতে কোন সমস্যা দেখিনা। আসলে এটা একটা সামগ্রীক দৃষ্ঠিভঙ্গীর ব্যাপার। যে জিনিসটা তারা বলছে ঠিক নয় আমি আমরা অনেকেই
মনে করি এটাই ঠিক। টমেটোকে আপনি আপেলের স্বাদে আনতে পারবেন না। সবই যদি ওদের মত হয় তাহলেতো আমরা ইঞ্জিনিয়ারই হয়ে যাব, আমরা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইনা, স্থপতি হতে চাই, তো ওরা চাচ্ছে যে এটাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মতোই একটা কিছু বানিয়ে ফেলতে।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : কিন্তু কত ছোট একটা ব্যাপার থেকে শুরু হয়েছে, সময়মত একটু সহানুভুতির সাথে বিবেচনা করলে এমন হয় না।

ওয়ারেস : কি যে হচ্ছে, একটা তুচ্ছ ঘটনা, যে আমরা আর্কিটেক্টরা যেভাবে চাই সেটা উনারা করতে দিবে না, কিন্তু এটাতো মানা যায় না। এটা যদি মেনেই নিতে পারি তো সেদিন থেকে আমি সেøভ হয়ে গেলাম।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আপনার যথেষ্ট নাম আছে শিক্ষক হিসেবে, একজন স্থপতি হিসেবে। আপনি জানেন, স্থপতিরা নিজের পেশায় থেকেও অন্যান্য পেশায় বা ব্যবসায় সংশ্লীষ্ট হয়ে পড়ছে, কেউ নির্মাতা কেউ ডেভেলপার, কেউ ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর হিসাবে কাজ করছে, এক্ষেত্রে স্থাপত্য পেশার নিয়ম কানুনের সাথে বিরোধ আছে কি?

ওয়ারেস : স্থাপত্য পেশা আমাদের এখানে বয়স ধরেন প্রায় ৩০ বছর হলো। এখানে আমরা ৫০০ আর্কিটেক্ট কাজ করছি, গতবার যারা পাশ করছে তাদের নিয়েই ৫০০। তো এই ৫০০ আর্কিটেক্টের মধ্যে থেকে অনেক ডাইভারসিটি অলরেডি পাচ্ছি। এমনও দেশ আছে যেখানে একটা শহরে বিশ হাজার আর্কিটেক্ট আছে এবং আমাদের ঢাকার চাইতে অনেক কম সংখ্যক লোক সেখানে বাস করে। ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের কথা বলছি। তো ২০ হাজার আর্কিটেক্ট একটা শহরে কাজ করছে, ঢাকা থেকে ছোট শহর সে সব জায়গায় আর্কিটেক্টদের ডাইভারসিটি অনেক বেশী হওয়ার কথা, তাদের কর্মপরিধি এবং কর্মতৎপরতা অনেক বেশী এবং তার প্রভাবও সমাজে অনেক বেশী হওয়ার কথা।আমাদের দেশে যথেষ্ট স্থপতি আছে বলে অনেকেই আছেন যারা ইন্টেরিয়র এবং কন্সট্রাকশনে গিয়ে যদি কাজ করে তো আমার মতে তারা ওখানেও ভালো কাজ করছে। অন্য কন্ট্রাকটরদের চাইতে এবং রিয়েল এস্টেটে যারা আর্কিটেক্ট তারা অন্য রিয়েল এস্টেটের চাইতে বেশী দায়ীত্ব নিয়ে কাজ করছেন। কারণ তারা আর্কিটেক্ট হিসেবে যে শিক্ষা সেটা ভুলে গিয়ে শুধু অর্থ উপার্জন করছে না। যেটা অনেক রিয়েল এস্টেটের ব্যাপারে হয় বলা যাবে, শুধু অর্থটাই তাদের মূখ্য। এখানে একটা শিল্পের ব্যাপার আছে, একটা সুন্দর জিনিস করার একটা স্বাদ আছে সবকিছুই মিলিয়ে তারা অনেক বেশী পজিটিভ। আর্কিটেক্টরা অন্য যেখানে যাচ্ছে যেমন কিছু ছবি, ফটোগ্রাফি, পেইন্টিং, তারপর আপনার ফিল্ম বানানোর মধ্যে সবমিলিয়ে যে বিভিন্ন দিকে কাজ বেছে নিচ্ছে সেটাতে ভাল ছাড়া খারাপ করছে না। অলরেডি কয়েকজনের মধ্যে যে ডাইভারসিটি আছে এবং ক্রিয়েটিভ ডাইভারসিটি এটা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একটা ইতিবাচক ব্যাপার। খারাপ দিক হলো যে অনেকে ভালো কাজ করছে না শুধু ক্লায়েন্টকে খুশি করার জন্য কাজ করছে, এজন্য অনেক সময় সংস্কৃতির দিক থেকে সঠিক নয় এধরনের অনেক কর্মকান্ডেও জড়াচ্ছেন। এটাও সত্যি। তবে দুটো দিকই থাকে তো আমরা চাইব যে, এটা যেহেতু একটা ক্রিয়েটিভ বিষয়, তার প্রতি একটা ভালোবাসা থাকতে হয়। স্থাপত্যের জন্য, সে যাই করুক না কেন আমি মনে করি সে কন্সট্রাকশন থেকে শুরু করে যে কোন কিছু করতে পারে। কিন্তু যদি কোন আর্কিটেক্ট শুধু কন্সট্রাকশন করেন, ডিজাইন না করেন তাহলে তার অবশ্য আকিটেক্ট হিসেবে পরিচিত হওয়া উচিত নয়। এটা তার একটা এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে থাকবে।
তিনি কন্ট্রাকটরদের অ্যাসোসিয়েশনের একজন হবেন, তার মেম্বারশিপও হয়ত থাকবে না। আর্কিটেক্ট’ল যখন পাশ হবে, তখন কিন্তু রিনিউ করতে পারবেন না। কারণ স্থপতি হিসেবে কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে। স্থপতি হিসেবে প্রধানত: ডিজাইন পেশাকে ধরা হয়। ইন্টেরিয়ার ডিজাইন বা ইন্টেরিয়ার ডিজাইনের যে এক্সিকিউশন যেটাকে আমরা ‘Turn Key’ বলি এটা কিন্তু পৃথিবীর সবদেশেই বর্তমানে অ্যালাউড, ইনস্টিটিউটের মেম্বার হয়েও এটা করতে দেয়া হয়। রিয়েল এস্টেটের ব্যাপারটা বিভিন্ন দেশে অনেক Institute হাঁ অনেক Institute না বা মাঝামাঝি একটা কম্প্রোমাইজ করে চলেছে। আমাদের এখানে আমরা সরাসরি হাঁ বা না বলছি না। আমরা এখন লক্ষ্য রাখছি।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : স্যার, আমি কিন্তু ডেভেলপার হিসাবে কাজ করি, আবার ডিজাইনও করছি,

ওয়ারেস : অনেক সময় নৈতিক বা অনৈতিক অথবা ঠিক বা ভুল তা বলতে হবে। আপনি করছেন বলেই আমি এখন হাঁ করে দিব বা না করে দিব এটা বোধ হয় এই মূহুর্তে করার দরকার নাই। আপনি করেন, আমি হয়তো নিজেও করি সেটা বাদ দিয়েই বলছি। ব্যাপারটা হচ্ছে যে, কতটা আমাদের ইনস্টিটিউট অনুমোদন করবে তা নিয়ে বসতে হবে। আমার মনে হয়, এ বিষয়টি রেখেও আইন কানুন করা যায় যাতে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করেও স্থপতি Institute এর মেম্বার হওয়া যাবে। এভাবেই হয়ত করতে হবে। কারণ বাদ দিলে অসুবিধা হচ্ছে। রিয়েল এস্টেটে কিছু আর্কিটেক্ট যাওয়াতে আমার মনে হয় যে রিয়েল এস্টেটের বিল্ডিংগুলোর স্থাপত্য মান বাড়বে। এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করব
এটা হওয়া উচিত নয়। আবার একজন এর সুযোগ নিয়ে Institute এর মেম্বার হলো, ডিজাইন করলো না শুধু ব্যবসা করলো সেটাও আবার ঠিক নয়, সে জন্য একটু চিন্তা ভাবনা করে আইন করতে হবে। অনেকে হয়তে রিয়েল এস্টেটই পেশা হিসেবে নিবে তখন তিনি স্থপতি ইনস্টিটিউটের মেম্বার না হয়েও কাজ করতে পারেন। সেটা উনি জানিয়ে দিতে পারেন যে আমি এখন আর আর্কিটেক্ট নাই। যখন লাইসেন্সের ব্যাপারআসবে তখন তো আপনাকে রিনিউ করার জন্য অ্যাপ্লাই করতে হবে; একজন হয়ত অ্যাপ্লাই করবেনা, আরেকজন হয়তো অ্যাপ্লাই করবে। তখন বিষয়টি আর্কিটেক্ট কাউন্সিলে আসবে। তবে নীতিগতভাবে আমি মনে করি সবকিছুই করা যায়। তবে একটা কথা বলতে হয়, আর্কিটেকচার যে একটা শিল্প এটা মনে রাখতেই হবে। শিল্প বললেই আপনার যে রেসপনসিবিলিটি দাঁড়ায় তাহলো অর্থই সব কিছু নয় বরং কাজ ভালো করছি তার থেকে অর্থটা বাই প্রোডাক্ট হিসেবে আসছে। স্থপতিদের আমার মনে হয় সম্পদের পাহাড় তৈরী করার মানসিকতা থাকে না। যেটা থাকে সেটা হচ্ছে যে, একটা ভালো কাজ করলে ভালো ফি নিলে কিছু আসে, সচ্ছ¦লভাবে থাকা যায়, সুন্দরভাবে থাকা যায় এবং পেশাতেও কিছুটা অর্থের প্রয়োজন পড়ে। এখানে খেয়াল রাখতে হবে উই আর ইনভলবভ উইথ আ প্রফেশনাল ওয়ার্ক। যে ভালো প্রফেশনাল হবে তার আর্থিক কষ্ট হওয়ার কথা নয়, ওভাবেই আমি দেখি। তবে আরেকটা জিনিস আমি বলতে পারি। লেকচারের মতো শোনাবে হয়ত, সেটা হল, আমরা অনেক সময় বলি যে ছেলের হাত ভালো, মানে ছবি আঁকে ভালো। এই হাত ভালো ব্যাপারটা কিন্তু আমাদের জন্মগত একটু আছে। আমি অনেক দেশের আর্কিটেক্টদের দেখেছি, বাইরের অনেক স্কুলেও গেছি বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলি দেশে আমি গেছি, সেখানে দেখেছি এশিয়ান আর্কিটেক্ট এবং আমাদের কিন্তু আঁকাআঁকি বা প্রেজেন্টেশন খুব ভালো হয়। কিন্তু, মেধারদিক থেকে আমরা এখনও তেমন বড় কিছু করতে পারছি না, পুরো এশিয়ার কথাই বলছি। দু একটা বিচ্ছিন্ন আর্কিটেক্ট ছাড়া শিল্পে নতুন কিছু আর দিতে পারছেনা, যেমন ধরেন ৫০ বছর হয়ে গেল আর্ট কলেজের, সেখানে কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের কাজ করে অনেকেই আছে। এটা বলতে কোন দ্বিধা নেই, কিন্তু বহির্বিশ্বকে দেয়ার মত আর কিছু হয় নি। বহির্বিশ্বকে দিতে হলে মৌলিক একটা নতুন জিনিস হতে হবে। অন্যরা কিছু করলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনুকরণ করি যেমন, ডিকন্সট্রাকশন শুরু হয়েছে আমরা ডিকন্সট্রাকশন করছি, ওদিকে তার পোস্ট মর্টেমও বাইরে শুরু হয়ে গেছে, বাংলাদেশে সবকিছু দেখেশুনে মনে হয়, মেধার দিকে কাজটা একটু কম হচ্ছে। তখন মনে হয় ৫০০ আর্কিটেক্ট নিয়ে এটা হয়নি, হয়ত হাজার খানেক আর্কিটেক্ট হয়ে গেলে অথবা ১৫০০ আর্কিটেক্ট হয়ে গেলে দুচারজন আন্তর্জাতিক মেধার আর্কিটেক্ট বের হবেন যাদের কথা বর্হিবিশ্ব জানবে। সেই সময় আসার জন্য যেটা থাকা দরকার সেটা হচ্ছে ইন্টেলেকচুয়ালি এগিয়ে থাকার ব্যাপার, সেখানে পড়াশোনা করা জরুরী। আমাদের স্থপতিরা পড়াশোনার দিকে কম, ওরা ম্যাগাজিন অনেক দেখে, ম্যাগাজিনের ড্রয়িং মানে বাহ্যিকভাবে ড্রয়িং দেখে কিন্তু তার ভেতরে ঢুকে, কি কারণে এই চেহারা আসছে সেটা জানার জন্য যে আগ্রহ এবং সেটা কি আদৌ ঠিক কি ভুল সেই বিশ্লেষণ করা, এই ব্যাপারটা হচ্ছে মেধার চর্চা, তো মেধার চর্চা সামান্য কিছু আর্কিটেক্ট হয়তো করেন কিন্তু সাধারণভাবে অনুপস্থিত। আমাদের স্কুলও এর জন্য কিছু দায়ী, স্কুলেও ঠিক ঐ দিকে আমরা নজর দিতে পারছি না, আমরা ম্যাগাজিন ও স্মার্টলুকিং ডিজাইনের দিকেই হয়তো বেশী জোর দেই, সেরকম কিছু একটা ঘাটতি আমাদের আছে। এর কারণ হচ্ছে যে, আমরা পড়াশোনার দিকে একটু কম। তবে হাত ভালো। যেমন আর্ট কলেজে এক সময় ছিল যে, জয়নুল আবেদীন দারুন হাত ভালো তবে পড়াশুনায় ভালো না। কিন্তু এখন আপনি দেখবেন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ছেলেরা ভর্তি হচ্ছে। এখনকার ছেলেরা দেখবেন আর্টকলেজে ভাল করছে। খুব নবীন আর্টিস্টদের সঙ্গে আমি কথা বলে দেখেছি যে তারা যথেষ্ট বুঝে, কিউবিজিমের পরে সিনথেটিক কিউবিজিমের কথা বলতে পারে। আবার সিনিয়রদের সাথে কথা বলে  দেখেছি ওরা কিউবিজিমের পরে আধা আধাভাবে জানে। ইন্টেলেকচুয়াল মানে হচ্ছে কোনটা নকল কোনটা আসল এটা বোঝার ক্ষমতা, তা না হলে কিন্তু ম্যাগাজিনে বেরুলেই ভালো লাগে। ইন্টেলেকচুয়ালরাই পারে বেরিয়ে আসতে। সাধারণরা খুব
একটা পারে না। আমাদের হাত ভালো, প্রেজেন্টেশনটাও ভালো, ডিজাইন করার অ্যাবিলিটি অনেক বেশী কিন্তু মস্তিষ্কের ব্যবহার যদি আরেকটু বাড়ত তাহলে এখানে আমরা SouthEast এশিয়ার মধ্যে টপ লেভেলে চলে যেতে পারতাম। ফিলিপিনসে আপনার আর্কিটেকচারের ৪৬টা স্কুল। ওদের কাজটাজ গিয়ে দেখলাম ইন্টেলেকচুয়ালি আমাদের আরও নীচে। ইন্ডিয়ায় কিছু আমাদের উপরে, কিছু আমাদের নীচে। কোন কোন স্কুল যেমন কলকাতার স্কুল আমাদের থেকে ইন্টেলেকচুয়ালি এবং কাজের দিকে অনেক নীচে। স্থপতিদের মধ্যেও তাই, দুএকটা কলকাতায় ভালো কাজ দেখলে দেখবেন কোলকাতার বাইরে থেকে এসে করেছে। আমাদের লেখা পড়ার মধ্যে আর্ট ওরিয়েন্টেশনটা এখনও আসে নাই। আমরা অনেকগুলি সাবজেক্ট পড়াচ্ছি কিন্তু আর্কিটেকচার কি? প্রত্যেক বছর এটাইতো আমরা বারবার শিখি। কিন্তু তবুও What is আর্কিটেকচার বারবার শেখা লাগে এবং পুরো হিস্ট্রি, থিওরি এবং ডিজাইন থিওরি এগুলো কিন্তু খুব ভালোভাবে আমরা পড়াচ্ছি না। কেউ পড়াচ্ছেনা। যারা পি.এইচ.ডি করে আসছেন দেখা যাচ্ছে, সিরিয়াস সাবজেক্টে পি.এইচ.ডি করছেন না, যেমন ধরেন,
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন, হাউজিং, হাউজিং পলিসি তারপরে ধরেন Environment, Sun & Rain নিয়ে পড়াশুনা করছে, অথচ ইন্টেলেকচুয়ালি ওটা হচ্ছে আউট অফ কোর, ইনার কোর হচ্ছে আপনার What is Design, ডিজাইনের উপর তো পি.এইচ.ডি. করা যায়। শুধু মাত্র ডিজাইনের উপর উচ্চ শিক্ষা বা গবেষণা করা যায়। কিন্তু, এদিকে আগ্রহ কম, এভাবেই আমরা নিজেদের অবস্থান, দূর্বলতর করে ফেলছি, স্থপতিদের সংখ্যা বাড়লে হয়ত প্রতিযোগিতার কারণে নিজেদের উন্নতি ঘটাতে চাইবে।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : লেখাপড়ার প্রসঙ্গে যখন এলেন তখন জিজ্ঞাসা করি, স্থাপত্য পড়াশুনায় বাংলাভাষাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না, এতে সমাজের থেকে তাদের সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা জন্মায়, এটা পশ্চিমা অনুকরণের অন্যতম কারণ হতে পারে, আপনি কি বলেন?

ওয়ারেস : শুধুমাত্র ইংরেজি শিখবে, বাংলাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করবে এটা ঠিক নয়, কিন্তু বাঙ্গালী হিসেবে জন্ম নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে হেরে যাবে সেটা অন্যায়। পুরোপুরি বাংলাকে ছেড়ে দেয়া যাবে না, বাংলাতেই শুরু হবে কিন্তু ইংরেজি পর্যন্ত যেতে পারাটা ডাইমেনশনেরই ব্যাপার। এটা একটা এক্সটেনশনের ব্যাপার এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজ করতে হলে একটা বিদেশী ভাষা এবং বিদেশী ভাষার মধ্যে ইংরেজি এখন সবচেয়ে প্রচলিত, তো ইংরেজিতে কথা বললে, ইংরেজিতে লিখলে অনেক বেশী সুবিধা, সেজন্য ইংরেজি আমার মনে হয় থাকতেই হবে। বাজারে গিয়ে মাছ কেনার জন্য ইংরেজী ব্যবহার খুবই অন্যায় বা আমাদের একটা দৈনন্দিন পেপার পড়ার জন্য ইংরেজি পড়তেই হবে এটার দরকার নাই। তবে ইন্টেলেকচুয়ালি আপনাকে আন্তর্জাতিক লেভেলে যেতে হলে You have no other choice. ইট কুড বি ফ্রেঞ্চ অলসো, কিন্তু, ইংরেজিটাই আমরা প্রেফার করেছি, অটোমেটিকালি এসে গেছে, সেটা আমি মনে করি না অন্যায়। একজনকে একটা ভালো কাজ করতে দেখে ওটা না করে এটা কেন করল? বরং সে যেটা করলো ওটা ঠিক আছে কি না, সে কি ওই যে ইংরেজিতে লিখছে সেখানে কি বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে কথা লিখছে বা কোনভাবে এটা বাঙ্গালীর সত্তাকে নষ্ট করছে, সে যদি না করে বরং যদি সাহায্য করে তাহলে আপত্তি তোলার কি আছে?

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আমার ধারনা এক্ষেত্রে তার একটা ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত থাকে, সে যখন ইন্টেলেকচুয়াল হয় তখন সে তার ব্যক্তিগত স্বার্থটাকেই চিন্তা করে, আমি এত কষ্ট করে বাংলাদেশের অন্যান্য লোকজনকে না জড়িয়ে যদি নিজে নিজে বাইরে থেকে একটা রিকগনিশন নিয়ে আসি, আমার যে ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপাসিটি আছে, অন্যরা বুঝবে, বাংলাদেশ বুঝবে না। এরকম একটা মনোভাব তার মধ্যে কাজ করে, কারণ সে ভাবছে যে বাংলাদেশের লোকেরা তার এগুলো বুঝতেই পারবে না, হয়ত বা চিন্তা করছে অযথা সময় নষ্ট না করে আমি বরং ইংরেজীতে লিখি, গবেষণা করি, দেশের মানুষকে আমার চিন্তার ফসল দিয়ে কি হবে?

ওয়ারেস : আপনি যেটা বলছেন এটা স্নবারি। এখন ইন্টেলেকচুয়াল স্নবারির জন্য ইংরেজিতে চর্চা করা এটাতো দোষ। এটাতো আমরা সবসময়ই দোষ বলব। তবে ইংরেজিতে লেখা মাত্রই ইংরেজিতে ইন্টেলেকচুয়াল চর্চা করা মাত্রই আবার দোষের কিছুনা। যদি সে বাংলার প্রতি অশ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে তা অবশ্যই অন্যায়।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : আমি অবশ্য দাবী করছিনা যে, আমি সঠিক।

ওয়ারেস : একটা সূক্ষ্ম অর্থে আপনি রাইট। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : যেমন স্যার, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশীয় যে বাড়ীঘর বা গ্রামীন বসতি এগুলোর উপরে খুব ব্যাপক অনুসন্ধানমূলক কাজ হয়নি, বেশীরভাগ ছাত্র জানেই না গ্রামে কিভাবে বাড়িটা বানানো হয়। তাদের যদি গ্রামে যেতে হয় তাহলে দেশ সম্মন্ধে সঠিক ধারনা তৈরী হবে।

ওয়ারেস : জিনিসটা আপনি যা বললেন সেটাতো স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু আমি বলছি যে, ধরেন আমি কোনদিন ঢাকার বাইরে গেলাম না কিন্তু ঢাকার মধ্যে যাই করলাম প্রত্যেকটা কাজ সুন্দর করলাম। সেটা আপনাকে ক্রেডিট দিতেই হবে।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : অবশ্যই।

ওয়ারেস : কিন্তু আমি কেন বাংলাদেশের গ্রামে গিয়ে একটা কাজও করলাম না এটা বোধহয় যোগাযোগের সুযোগ না হওয়ারই ফল। কিন্তু কেউ যদি গ্রামে যায়, কাজ করে তাকে আপনি ডাবল প্রশংসা করতে পারেন, সেটা আমি মনে করি খুবই উচিত হবে। আমি যে বাংলাদেশের গ্রামে গিয়ে কাজ করলাম না বা সুযোগ নিতে পারলাম না সেটার থেকে নিতে পারলে অবশ্যই আমার ডাবল প্রশংসা হতো।

স্থাপত্য ও নির্মাণ : এই প্রসঙ্গে আপনার কাছে একটু পুরানো প্রশ্ন ছিল। সেটা করেই ফেলি। সেটা হল যে বাংলাদেশের স্থাপত্য ধারাটি কি? কিভাবে এদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন স্থাপত্যে ঘটানো যেতে পারে?

ওয়ারেস : কালচার তো ঠিক কতগুলি বিচ্ছিন্ন উপাদান দিয়ে বোঝা যাবে না। আমি লুঙ্গি পরলাম, পাজামা-পাঞ্জাবী পরলাম, বোরখা পরলাম, পান খেলাম, ভাত খেলাম, আর কাটলেট খেলাম না, ছুরি চামচ নিলাম না, এটা বোধ হয় স্থুলভাবে সংস্কৃতিকে বোঝা। কালচারের দুটো দিক আছে। আমি প্যান্ট-শার্ট পরেও কিন্তু ভালো বাঙ্গালী হতে পারি এবং স্বচ্ছ পরিচ্ছন্নমনস্ক হতে পারি। একটু কট্টর যারা, যেমন- তারা হয়ত কোট পরলেই বাঙ্গালী নয়, বাদ দিয়ে দিতে পারে। যেমন ধর্মীয় মৌলবাদীরা, যদি আপনি টুপি, দাড়ি এবং নামাজে না যান তাহলে আপনি যতই মুসলমান বলেন না সে মানবে না। তেমনি আমাকে আপনারা বলতে পারেন প্যান্ট শার্ট পরা ওই লোক বাঙ্গালী না। মৌলবাদী দৃষ্টিভঙ্গী হয়ে গেল। তো মৌলবাদী না হয়ে যদি আপনি কালচারকে দেখেন তাহলে দেখবেন কালচারের দুটো জিনিস আছে। একটা হচ্ছে অ্যাবসট্রাকশন। আমাদের সম্পূর্ণ ইতিহাসটাকে আপনি যদি অ্যানর্থ্রােপলজিকাল অ্যাবসট্রাকশনে নিয়ে গিয়ে বিশ্লেষণ করেন, তাহলে আমাদের কালচারের মুল অর্থটা আপনার কাছে পরিস্কার হবে, দৈহিকভাবে আপনি কালচারকে নিচ্ছেন না। কালচারকে এমনি abstract idea হিসাবে মাথায় নিয়ে কিন্তু এক ধরনের আর্কিটেকচার করা সম্ভব। লুই কা‘ন বাঙালী না, কিন্তু তার সংসদ ভবনকে একটা ভালো বাঙ্গালী কাজ হিসেবে আমি প্রমান করতে পারি। কারণ আমাদের দেশের জলবায়ু আর রোদ ছায়া নিয়েই উনি কাজ করেছেন, উনি কিন্তু কুড়েঘর, টিনের ঘর, কাঠোর ঘর বা পাকা ঘর যেটা বাংলাদেশে হয়েছে বিভিন্ন সময় তার থেকে বষবসবহঃ নিয়ে একটা আর্কিটেকচারের চেষ্টা করেন নাই। এই ট্রান্সফার না করে আর্কিটেক্টদের উচিত,তার অন্তর্নিহিত সুরটাকে নিয়ে নিজের মত কাজ করা। যেমন কবিতা যখন অনুবাদ করা হয় তখন কিন্তু আক্ষরিক অনুবাদ একটা হয় আরেকটা
হয় ভাবানুবাদ। এখনকার দিনে ভাবানুবাদ করতে বলা হয়। ধরেন কবিতাটা হয়ত আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ হল কিন্তু ভাবটা আসলোনা। আবার যখন এটা ট্রান্সফর্ম করবেন তখন তার আত্মাটা নিয়ে এসেছেন কিন্তু তার দেহটা হয়ত আনতে পারেন নি। হয়ত একটা সনেটকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করার পর হয়তো ঠিক সনেটও হলো না, কিন্তু মূলটা পড়লে যে ভাবধারা আমি পাই এটা পড়লেও সেই একই ভাবধারা আমি পাই এবং কবিতাটি আমি বুঝতে পারছি। আর্কিটেকচারেও এরকম একটা ব্যাপার আছে অর্থাৎ এর আত্মাটা নিতে হবে। যদি সংস্কৃতির একটা আত্মা থাকে সেই আত্মার খোঁজ করে তাকে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বর্তমান সময়ে। আর যদি আমি দেহটাকে আনতে চাই তাহলে দেখবেন সবসময়ে ভুল করছি কারণ আমাদের পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে গেছে।  ইউরোপে তো একই সমস্যা, আমাদের সমস্যা আমাদের কিছু নাই বলে রেফারেন্সের অভাব। ইউরোপে গত ৫০০ বছরে অনেক হয়েছে। অথচ তারাও আধুনিক স্থাপত্যে কিছুই করতে পারছে না। ওদের সুন্দর সুন্দর গথিক চার্চ আছে, কিন্তু এখনতো গথিক চলছে না। এখনকার টেকনোলজী স্পেসের কনসেপ্ট, ডেনসিটি এগুলোর চাহিদা তো গথিক ডিজাইন দিয়ে মোটানো যাবেনা। অতএব আমাদের যে অনেক বীধসঢ়ষব নাই এটা কিন্তু আসলে মূল সমস্যা নয়, বিষয়টি হল ঐতিহ্যের সূত্রগুলো, পাহাড়পুর থেকে হোক, ময়নামতি থেকে হোক, মোঘল পিরিয়ডের বা ব্রিটিশ পিরিয়ডের কিছু অথবা দেশের প্রচলিত মাটির, টিনের, ইটের, কাঠের এবং বাঁশের ইত্যাদি থেকে বানানো বাড়ীঘর থেকে বের করে আনতে হবে। আমার মনে হয় যে, দেখতে হবে প্লানিং টা কি?  আলো বাতাসকে নিয়ে খনার বচন যেমন অ্যাবসট্রাক্ট একটা আইডিয়া অ্যাবাউট আর্কিটেকচার, তেমনি যদি আমরা তত্ত¡ নিয়ে আসতে পারি তাহলে সেই তত্তে¡র ইন্টারপ্রিটেশনে যে আর্কিটেকচার হবে তা আমাদের জন্য ভালো হবে। সোজা কথা আমাদের বাঙ্গালী বসবাস করে আরাম পায়, আমাদের মানসিকতার সাথে মিলে এমন স্থাপত্যকে বাঙ্গালী স্থাপত্য বলা যায়। সেভাবে আমি সার্ট প্যান্ট পরেছি বলে অবাঙ্গালী হয়ে গেছি, বললে আজকাল কেউ মানবে না। প্যান্ট পরেও বাঙ্গালী হতে পারে আবার লুঙ্গি পরেও অবাঙ্গালী হতে পারে। এটা যদি আমরা বুঝি তাহলে আমার কথাটা বোঝা যাবে অর্থাৎ বাঙ্গালী হচ্ছে একটা বিশেষ অ্যাটিচুড অফ মাইন্ড। একটা সংস্কৃতির ধারক হিসেবে, যে সংস্কৃতিটা দৈহিক ও বাহ্যিক নয়, যেটা আত্মিক। আত্মিক সংস্কৃতিটাকে নিয়ে আমাদের চর্চা করতে হবে। দৈহিকটা নয় কারণ দৈহিকটা রাখা যায় না। দৈহিকটা সব সময় পরিবর্তন হয়। ১০০ বছর পরে সমাজ কোথায় যাবে, সেক্ষেত্রে আমরা যদি শুধু পুরোনোটা ধরে রাখি, যদি শুধু পুরনোটাই করি তাহলে তো আমরা পিছনের দিকে চলে যাব। আবার আমরা যেন আমাদের পুরানোটাকে একদম ভুলে না যাই। বিষয়টি আত্মিকভাবে আসবে, ভুলে তো যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি যদি আমার পিছনকে ভুলে যাই তাহলে তো আমি আমাকেই চিনলাম না। সংস্কৃতির পথ নির্মানে ইতিহাস সচেতন মানুষের প্রয়োজন খুব বেশী, ইতিহাসকে তার আত্মিক দিক থেকে যে ব্যাখ্যা করতে পারে সেই ভালো আর্কিটেক্ট হতে পারবে। টিনের ছাদ দিয়ে বললাম এটা আমাদের বাঙ্গালী ব্যাপার বা ছনের একটা ঘর ছাদের উপর তৈরী করে বাঙ্গালীয়ানার আত্ম তৃপ্তি পেলাম, সেটা হাস্যকর। চর্চার মধ্যে আত্মিক দিকটাই হচ্ছে মেধা, যেটা অন্যভাবে বলছিলাম যে মেধার দিকটাতেই কিন্তু আমরা একটু স্থুলভাবে অগ্রসর হয়েছিলাম, আমাদের হাত ভালো, সে জন্য আমরা সুন্দর প্রেজেন্টেশন করতে পারি, সুন্দর একটা কার্ভলাইন আনতে পারি। কার্ভলাইন আনা স্থাপতোর মৌলিক বিষয়গুলির উপর কাজ করা এক নয়। তো এটা ৫০০ আর্কিটেক্ট এর মধ্যে হবার কথাও নয়। আমেরিকাতে লুই কা‘ন আসবার আগে কয়েক হাজার আর্কিটেক্ট কাজ করে গেছেন, তাদের ৪০০ বছরের ইতিহাস আছে। তবে একটা সময় দেখবেন যে ভালো আর্কিটেক্ট আমাদের আসবে। হয়ত ৫০০ আর্কিটেক্টের মধ্যে এর থেকে ভাল অবস্থা হওয়া উচিত ছিল। তার জন্য সমাজ দায়ী। আমরা যারা অগ্রজ, শিক্ষক তারা কিছুটা দায়ী, ছাত্ররা দায়ী, অভিভাবকরা দায়ী। তবে অন্যান্য আর্ট ফর্মের সাথে যদি তুলনা করি তাহলে আমরা খুব একটা খারাপ পজিশনেও নাই। আপনি যদি সাহিত্যের দিকে দেখেন তাহলে দেখবেন একই ব্যাপার, অনেক সুন্দর বর্ণনা দিতে পারে আমাদের লেখকরা। অনেক
সিচুয়েশন তৈরী করতে পারে। হুমায়ন আহমেদকে চিন্তা করেন, অনেক নভেল লিখছে গভীর চিন্তাযুক্ত লেখা তার জন্য সমস্যা নয়, অত্যন্ত সুন্দর লেখক সে, হাত ভালো। ঐটাই আমি বলছি ড্রাফটম্যানশিপ আর হাত ভালোটা আমাদের সব শিল্পেই দেখা যাচ্ছে। সময় লাগবে, আরও একটু এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু যে কোন কারণেই হোক এগিয়ে যাওয়া হয়নি। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু লোক বিভিন্নভাবে এগিয়ে গেছে, আমার মনে হয় যে আর দশ বছরের মধ্যে আমরা হয়তো দুজন তিনজন ভালো আর্কিটেক্ট পাব যারা জগতের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে। 

স্থাপত্য ও নির্মাণ : এখন,পেশায় অনেক নতুন স্থপতি যোগ দিচ্ছেন, আপনি একজন অভিজ্ঞ যশস্বী স্থপতি, আপনি নবীনদের কিছু উপদেশ দেন।

ওয়ারেস : হ্যাঁ। নতুন জেনারেশনের জন্য হাউ টু স্টার্ট, হাউ টু সাজেস্ট দেম, আপনি বলবেন যে, সবার একটা ধারনা যে, তাদের চিন্তার মধ্যে অর্থ একটা বড় স্থান নিয়ে রেখেছে। আমি বলতে চাই যে, আমি আর্কিটেকচার ভালোবাসি বলে এবং আর্কিটেক্টচার করতে পারি বলে আমি স্থপতি হয়েছি, তাই আর্কিটেকচার করে যাবো এটাই যেন হয়। ভাল আর্কিটেকচার খুব কঠিন একটা ব্যাপার, কিন্তু হয়ত ক্লায়েন্টরা যা চাচ্ছে, তার সাথে স্থপতির চিন্তার পার্থক্য থাকতে পারে, স্থপতি হয়ত অলটারনেটিভ চিন্তা করার জন্য চেষ্টা করছিল কিন্তু তাকে জোর করে ক্লায়েন্ট বলল ওমুক করছে ওরটা ভালো। যেমন আমি টিচার হওয়া সত্বেও অনেক ছাত্রদের কাজ নিয়ে আমাকে ক্লায়েন্ট দেখায় যে, আপনি ঐ রকম করছেন না কেন। তাতে হচ্ছে কি আমিও আবার প্রশ্রয় দিচ্ছি একটু, তা না হলে ক্লায়েন্ট ছুটে যায়। ক্লায়েন্ট ছুটে গেলে আমি আর্কিটেক্টই হতে পারছি না। আকিটেক্টদের প্রবলেম হচ্ছে, প্রথমে তাকে তো একটা কাজ পেতে হবে। এখন এই কাজটা যদি আপনি একদম মনঃপুত নাও পান ৫০%, ৪০%, ৩০% হলেও নিতে হবে।তো আমি যখন ৭০%, ৮০%, ৯০% মনঃপুত কাজ পাব তখন কিন্তু আমি দ্বিতীয়বার বলতে পারি, না আমার চিন্তাই ঠিক। কিন্তু, যেখানে আমি কাজই পাচ্ছি কম বা ক্লায়েন্ট বোঝেনা, ক্লায়েন্ট ডিফিকাল্ট, তার অবসেশন আছে কতগুলি জিনিসের প্রতি, আমাকে করতেই হবে সে রকম, তারমানে ২০% স্যাটিসফেকশন নিয়ে কাজটা করছি, সেখানে আমি কাজটা মনের মত করতে পারবো না। হোয়াট ইস ডিফারেন্স বিটুইন কমার্শিয়াল আর্ট অ্যান্ড পিওর আর্ট। কমার্শিয়াল হলো সেটাই যার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে অর্থ উপার্জনের জন্য সে তার শিল্পকে অনেক কম্প্রোমাইজ করবে, ক্লায়েন্ট এর সাথে করবে, অর্থের সাথে করবে, বিল্ডিং মেটেরিয়ালের সাথে করবে। আর যে কম্প্রোমাইজ করবে না তার কাজটা হয়তো খুব দারুন হবে না কিন্তু মৌলিক ব্যাপারটা হচ্ছে যে কম্প্রোমাইজ হবে না। করবেনা করবেনা করে সে তারপরও একটা জিনিস দাঁড় করাচ্ছে। সে কম্প্রোমাইজ করছে না নেতিবাচক দিকের সাথে, যার সাথে অর্থের যোগসাজশ। সে কম্প্রোমাইজ করছে শিল্পের সাথে, সে শিল্পের বৈরী কিছু করছে না এবং এটা যদি সে শেষাবধী বজায়
রাখে তাহলে তার কাজের মধ্যে একটা স্ট্যান্ডার্ড দেখা যাবে। যদি টিকে থাকতে পারে তবে একটা, দুটো, তিনটা, চারটা, পাঁচটা কাজ করলে সে অবশ্যই সুন্দর কাজ করতে পারবে এবং সে নিয়ন্ত্রণও করতে পারবে, ক্লায়েন্টও তৈরী হবে তার নিজের, এটাই নিয়ম, এটাই হিস্ট্রি। অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হয় এবং খাটতে হয় ঠিক স্যাক্রিফাইস হয় না, আমি স্যাক্রিফাইস করছি আর্কিটেকচারের জন্য যদি বলি তাহলে সঠিক বলছি না, যদি বলি আর্কিটেকচার ছাড়া পারি না, আমি সব সময় আর্কিটেকচারের জন্য যদি বলি তাহলে সঠিক বলছি না, যদি বলি আর্কিটেকচার ছাড়া পারি না, আমি সব সময় আর্কিটেকচারই করতে চাই তাহলে অনেক বেশী সত্যি বলা হয়। স্থুল শোনালেও ওটাই
সত্যি, Because this is what I am, I cannot do without it। সে জন্য আমি বলতে চাই প্যাসনটা যার থাকবে সে পারবে এবং এই প্যাসনটা তাকে অনেক প্রশান্তি দেবে। অনেকেই তো শুরুতে সুন্দর আর্কিটেকচার করে কিন্তু আস্তে আস্তে সে কম্প্রোমাইজ করে নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের চোখের সামনে এরকম আমরা দেখতে পাচ্ছি, আর যে ওটাকে বজায় রাখছে দৃঢ়তার সাথে, কম্প্রোমাইজ করছে না, তার অনেক প্রজেক্ট ছুটে যাচ্ছে, দুটো প্রজেক্ট চলেই গেল তাও “থাক তাহলে তো ভাই আমি করবনা” এরকম বলেই দিতে পারছে, প্রথম প্রথম তার অসুবিধা হচ্ছে কিছু শেষ পর্যন্ত
সে একটা সফলতা পাচ্ছে, একটা মানুষের যদি আমরা ভিতরটা দেখি, সেখানে ফিলসফিকালি খুশি হওয়া, আত্মিক শান্তি পাওয়া এগুলো আর্থিক সুবিধার চেয়ে যে কোন হিসেবে শ্রেয়তর। আপনি যদি ভালো ডিজাইন করেন আর দশজন লোক যদি বলে আপনার নাম সেটা কিন্তু আপনার কোন অর্থের সাথে তুলনা হয়না। ফরগটেন হয়ে যাচ্ছে এরকম বহু লোক আছে। অনেক লোক নিজের কাজ করতে গিয়ে মূল্য পায়না যেমন ধরেন ভ্যানগগের ছোট ভাই থিও যদি তার ছবিগুলি না রক্ষা করত, তার ঐ পেন্টিং টেন্টিং সব ছিঁড়ে ঠোঙ্গা বানানো হয়ে যেতে পারত। থিও গিয়ে যত ছবি সে আঁকছে, আঁকা হলেই নিয়ে এসে বেলজিয়ামে এনে রেখে দিত। ভ্যানগগের অলমোস্ট কোন পেন্টিংই হারায় নাই কিন্তু সে যে স্বভাবের লোক ছিল লন্ড্রীতে কাপড় নিলেও (ছবি দিয়ে) ব্যাগ বানিয়ে নিয়ে যেত, তার তো কোন অ্যামবিশন ছিলনা, রিয়েল প্যাসন ছিল। ভ্যানগগকে সব সময়ই সবাই উদাহরণ হিসেবে দেখায় যে প্যাসন কাকে বলে। সে বলেছে আমিতো স্থির থাকতে পারিনা। আমি যদি ছবি না আঁকি তো আমার জ্বর এসে যায়, আমার বমি বমি লাগে, সত্যি সত্যি কিন্তু ভড়ং করে বলে নাই, ওরকম প্যাসন তো আপনি পাবেন না। সচেতন থাকতে হবে এবং সেটার জন্য চেষ্টা করতে হবে এবং তার জন্য কিন্তু একটু থিওরিটিক্যাল পড়াশুনা করতে হয়। সে যখন পড়াশুনা করবে তখন সে এই শক্তিটা অর্জন করবে, এছাড়া আলোচনা দরকার, ভালো আর্কিটেক্টদের সাথে বসা, মাঝে মাঝে গল্প করা আর্কিটেকচার নিয়ে কথা বলা, ম্যাগাজিন দেখা, ভালো ম্যাগাজিন যেগুলোর মধ্যে ভালো আর্কিটেকচার কাজ ছাপা হচ্ছে, এই চর্চার জন্য আমাদের আর্কিটেক্টরা সময় পায়না এবং আমাদের অনেক সময় ইগো থাকে যে আমার ম্যাগাজিন দেখা লাগবে না আমি এমনিতেও পারি। আমরা যদি এগুলো কমিয়ে এনে সব সময় নিজেকে ছাত্র মনে করি এবং ঝরহপবৎবষু কাজ করি তাহলে আমি মনে করি, আমাদের আর্কিটেকচার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভালো হবে। আমাদের হাত সত্যিকার ভালো, পশ্চিমা বিশ্বের প্রেজেন্টেশনের চাইতে আমাদের প্রেজেন্টেশনের অ্যাভারেজ অনেক ভালো, স্কেল, পার্সপেকটিভ অনেক ভালো। আমাদের এখানে এখনও কোন নতুন ধারা তৈরী করতে পারিনি, নিজেদের ধারাটাকেও পুনুরুদ্ধার করতে পারিনি, এগুলি সব ইন্টেলেকচুয়াল ফল্ট। বিল্ডিং নিয়ে চর্চা করে, সুন্দর কেটে কুটে এলিভেশন করে মিলাতে পারি। ঐ বিদ্যাটা আমাদের জানা আছে, কিন্তু আদৌ এর দরকার কিনা সেই প্রশ্ন করে একটা উত্তর আনতে পারছি না। এটাই হলো ইন্টেলেকচুয়াল প্রবলেম এবং সেখানে একটু একটু করে হয়ত এগুচ্ছে, আমার মনে হয় যে, ভবিষ্যৎ জেনারেশন অনেক কনট্রিবিউশন করতে পারবে। আমাদের প্রথম দরকার ছিল আঁকতে পারি এটাই যথেষ্ট, আঁকতে পারলেই আর্কিটেক্ট হওয়া। এখন আঁকতে পারলেই আর্কিটেক্ট হতে পারছেন না। ভাবনা বা দর্শনের ক্ষেত্রে বলা যায় আমরা অনেকেই পদ্ধতির উপর বেশী জোর দেই। অ্যানালাইটিকাল সিনথেসিস এর বদলে সরাসরি আমরা একটা ঝড়ষঁঃরড়হ - এ চলে যাই। অ্যানালেসিস করার আগে সাইট নিয়ে মোটামুটি একটা জিনিস দাঁড় করিয়ে যদি দেখি ভালো লাগছে, আমরা তার উপরই কাজ করে ফেলি। তো এই যে সাবজেক্টটিভলি আমরা খুব ইন্সপায়ার্ড সেখানে অবজেক্টিভ মাইন্ড আমাদের ব্যালেন্স করতে পারত সেজন্যই ভালো বই পড়ার কথা বলছি, ইতিহাস জানা উচিত। একটা হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাস আরেকটা হচ্ছে আমাদের নিজেদের ইতিহাস। আমাদের বলতে আমি শুধু আর্কিটেকচারের ইতিহাস বলছি না। একটা সোশাল, পলিটিক্যাল এবং আমাদের মিথসগুলো, আমাদের উইটনেসেস এ সবই কিন্তু ইতিহাস আমাদের। এগুলি যে জানবে সে অনেক Objective নেচারের হবে এবং সেটাকে যদি সে ডিজাইনে কাজে লাগাতে পারে তাহলে সেই হবে সত্যিকার সৃজনশীল স্থপতি। 

 

 

আপনার মতামত দিন

কমেন্ট

Logo
Logo
© 2024 Copyrights by Sthapattya o Nirman. All Rights Reserved. Developed by Deshi Inc.