রিদম অফ ময়মনসিংহ (ময়মনসিংহ উন্নয়ন পরিকল্পনা : ২০১১-২০৩১)

স্থাপত্য ও নির্মাণ
পরিবেশ ও পরিকল্পনা
২৭ নভেম্বর, ২০২৩
১,১৪৫
রিদম অফ ময়মনসিংহ (ময়মনসিংহ উন্নয়ন পরিকল্পনা : ২০১১-২০৩১)

ইসরাত জাহান

(প্ল্যানার, রিজিওনাল প্ল্যানিং, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর)

Mymensingh Strategic Development Plan (MSDP) প্রকল্পটি পৌরসভা এবং এর আশেপাশের ১০ টা ইউনিয়ন (আকুয়া, বায়রা (কেওয়াতখালী), ভাবখালী, চর ঈশ্বরদিয়া, চর নীলক্ষ্মিয়া, দাপুনিয়া, ঘাগরা, খাগদহর, সিরটা; এবং ভাঙ্গনামারী) নিয়ে সম্পন্ন করা হয়। প্রায় ৭৬ একর জায়গা নিয়ে প্রকল্পটি করা হয়।

18fffb8e D7b9 4421 90a0 49143364da2e

ছবি : প্রকল্পের পরিসর - ময়মনসিংহ পৌরসভা এবং এর আশেপাশের ১০ টা ইউনিয়ন

ময়মনসিংহের ইতিহাস:
ময়মনসিংহ জেলাটির নম মোমেনশাহী পরগনা থেকে নেয়া হয়েছিল যা আকবরের সময় মোমেনশাহের অধীনে ছিল। প্রকৃতপক্ষে ময়মনসিংহ গঠনের সঠিক তারিখ জানা যায়নি। ইতিহাস বলে, বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে গঠিত ছিল বঙ্গরাজ্য। পরবর্তীতে ১৭৮৭ সালে ঢাকা থেকে পৃথক করে নাসিরাবাদ টাউন কমিটি নামে গঠিত হয়। কালের বিবর্তনে এ জেলার আকার সময় সময় পরিবর্তন হয়েছে। পরে ১৯০৫ সালে নাসিরাবাদের স্থানে ময়মনসিংহের নামকরণ করা হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ময়মনসিংহ টাউন কমিটি থেকে পৌরসভায় পরিণত হয়। তারপর ২০১৭ সালে এটা সিটি কর্পোরেশনে উৎত্তীর্ণ হয়।

9cd291ac C2cb 43f5 8f7a C8b9009f39ca

ছবি : ময়মনসিংহ পৌরসভার ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা (১৯৯৪)

19462c2a 2ee0 43fe 9e3f E4d98f26548f

ছবি : ময়মনসিংহ পৌরসভার ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা (১৯৭৭)

B56fe424 Ac16 472f 91eb 82d29140c5fe

ছবি : ময়মনসিংহ পৌরসভার বিদ্যমান ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা (২০১৩)

প্রকল্পটির পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো-
সেবাসমূহ ( হাসপাতাল, পার্ক, বাজার) অসমভাবে অল্প কয়েকটি স্থানে কেন্দ্রভূত যা শহর পরিকল্পনার সময় লক্ষ্য রাখা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রেল লাইনের পশ্চিম দিকে নতুন সেবা সমূহের স্থান সংস্থান করার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা ।
শহরের বর্তমান আর্টারীর (ফ্রিওয়ে এবং স্থানীয় রাস্তার মধ্যে সংযোগ) উপরের চাপ কমাতে বর্তমান সেবাসমূহের স্থানগুলোকে সম্প্রসারণ না করা।
নতুন জায়গাগুলোকে উন্নয়নের সময় প্রবেশগম্যতা ও নিরাপত্তা সড়কের বিন্যাস করা।
জনসাধারনের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত গণপরিবহনগুলো এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। পরিকল্পনার সময় গণপরিবহনের সাথে জনগণের মিথস্ক্রিয়া বিবেচনায় নিয়ে পরিবহন পরিকল্পনা করা এবং জয়বায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ ও ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলাকে মাথায় রেখে নতুন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা।

C542440c 162a 4d81 9e54 67e5de035586

ছবি : সর্বশেষ কাঠামো পরিকল্পনা (MSDP)

ময়মনসিংহ শহর:
শহরটি আসলে রেল লাইন দিয়ে দুটি ভাগে বিভক্ত । এই শহরের নাগরিকগণ ব্রহ্মপুত্রের সাথে বাঁধা। নদীর সমান্তরালে গড়ে ওঠা এই শহরের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে এই নদী। শহরের সকল সরকারি স্থাপনা ও বেশ কিছু মন্দির প্রাচীনকাল থেকেই নদীর পাড় ঘেঁসে গড়ে উঠেছে এবং এই এলাকাটি তুলনামূলকভাবে অধিক সুবিধাপ্রাপ্ত । রেল লাইনের পশ্চিম দিকে বলতে গেলে শহরটির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নেই বললেই চলে এবং শহরবাসীর মানসিকতায় ও কাজকর্মেও তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
মাঠ পর্যায়ের জরিপ থেকে শহরের আইকনিক স্থান সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে, পাঁচটি পরিচিতি স্থান পাওয়া যায়। স্থানগুলো হচ্ছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টাউন হল, জয়নুল পার্ক, মেডিক্যাল কলেজ এবং চরপাড়া মোড়।

জয়নুল পার্ক এবং সার্কিট হাউজ :
নগরবাসীর একটি বিশাল অংশ যাদের বয়স ৩৫ বছর এর বেশি তারা সকাল ৫টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এই এলাকায় প্রাতঃভ্রমনের জন্য আসে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ঘিরে বেশ কিছু অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম গড়ে উঠেছে যেমন- বাজার (যা সকাল ১০টার পর দেখা যায় না), ক্লিনিক্যাল সার্ভিস ব্যবস্থা ইত্যাদি। একই এলাকায় বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণীর জনসমাগম দেখা যায় । পুরো শহর এলাকা এমনকি আশেপাশের ইউনিয়ন থেকে লোকজন এই এলাকায় আসে।
টাউন হল :
টাউন হল মোড়ে প্রায় সারাদিনই অল্প-বিস্তর লোকজন দেখা যায়। বিকেল ৫টা থেকে জনসমাগম এর পরিমান বাড়তে থাকে। এখানে আগত জনসাধারনের বেশির ভাগই ছাত্র এবং এরা আনন্দমোহন কলেজে পড়ে বা আশেপাশের এলাকায় বসবাস করে।
চড়পাড়া মোড় :
চরপাড়া মোড়ে আশেপাশের এলাকা হতে লোকজন ঘুরতে/আড্ডা দিতে/ চা খেতে আসে। তবে সবচেয়ে বেশি লোকজন আসে নিকটস্থ হসপিটালে বা উক্ত এলাকায় অবস্থিত ডাক্তার এর চেম্বারে চিকিৎসার জন্য।

কাচিঝুলি :
এই এলাকায় সকাল এবং বিকেল উভয় সময়েই লোকজন দেখা যায়। সকালবেলা আসা জনগণের বেশির ভাগই আশেপাশের এলাকার বসবাসকারী এবং ছাত্র-ছাত্রী। ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তা ব্যবহার করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য এবং অন্যান্যরা হাঁটতে আসেন।
দুর্গাবাড়ি :
দুর্গাবাড়ি এলাকায় বেশ কিছু মন্দির রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের দেখা বিভিন্ন পূজার জন্য লোকজন এইসব মন্দিরে আসেন। এছাড়া এই এলাকায় একটি বড় পাইকারি বাজার রয়েছে। এই বাজারের জন্যও এলাকায় সারাদিন এবং সন্ধ্যায়ও প্রচুর জনসমাগম হয়।
কাচারি ঘাট :
এলাকাটি বাণিজ্যমেলার স্থান হওয়ায় সকাল এবং সন্ধ্যায় প্রচুর ভিড় হয়।
জনসাধারনের প্রাত্যাহিক জীবনের সাথে টাউন হল মাঠ/ মোড়, সার্কিট হাউজ মাঠ ও জয়নুল পার্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সরকারি বেশিরভাগ উৎসব আয়োজন এই দুইটি মাঠেই হয়ে থাকে।

A3984ac1 747b 4cb9 82f5 E1c3e77d37ceউপরের তথ্য থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ শহরের জনসাধারনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এবং এই স্থানটি মূলত শিক্ষা কেন্দ্রিক। অপরদিকে টাউনহল উৎসব কেন্দ্রিক। জয়নুল পার্কে লোকজন বিনোদনের জন্য এবং চরপাড়া মোড়ে বেশীর ভাগ লোকজন চিকিৎসার জন্য আসে।
একটা শহর পরিকল্পনা করা হয় বসবাসকারী জনসাধারনের জন্য। জনসাধারন ছাড়া কোনো পরিকল্পনা করলে তা বাস্তব সম্মত হয় না। শহরবাসীর মানসিক এবং প্রাত্যহিক কাজকর্মের সাথে এই স্থানগুলো ওতোপ্রোতভাবে জড়িত আছে। এমতাবস্থায় ময়মনসিংহ শহরের জন্য এই স্থানগুলো বিবেচনায় নিয়েই শহরের পরিকল্পনা করা হয়।5c13f578 90fb 4e1b 944b 0678711e9934

ময়মনসিংহ প্রকল্প পরিকল্পনা করার আগে নগর এবং গ্রামীন এলাকার যে চাহিদাগুলো আছে সেগুলো একটা ম্যাপের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা হয়।ম্যাপে প্রদর্শিত এলাকায় বসবাসরত মানুষের সমস্যা এবং সম্ভাব্য জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।

31d8c5ec F841 419a 9141 981a626718ff

ছবি : গ্রামীণ অংশগ্রহণমূলক মূল্যায়ন পরিচালনা

B94af641 1e66 4e7d 9627 5335999c7ed9

ছবি : শহুরে অংশগ্রহণমূলক মূল্যায়ন পরিচালনা

ডাটাবেস ম্যাপ এবং প্রস্তুতি:
DEM ম্যাপের লাল অংশটুকু সবচেয়ে উঁচু জায়গায় এবং ক্রমাগত সবুজ অংশগুলো নিচু জায়গা। প্রকৃতি এবং টেরিটোরিকে সম্পূর্ণভাবে মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।

93c6cf69 Bc58 4fcc 9828 906f8ce1396f

ছবি : DEM ম্যাপ

B56fe424 Ac16 472f 91eb 82d29140c5fe

ছবি : ময়মনসিংহ পৌরসভার বিদ্যমান ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা (২০১৩)

কৃষিজমি এবং গাছপালার ম্যাপ:
পরিকল্পনা করার আগে সরকার থেকে নীতি নির্ধারন ছিল কোনো আরবান এরিয়ার মধ্যে তিন ফসলী জমি নষ্ট কর যাবে না। এজন্য একটা ফসলী ম্যাপ তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে ময়মনসিয়হে যতধরনের ক্যানপি আছে অর্থাৎ গাছ আছে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্যানোপি হল ছায়াযুক্ত গাছ । রেইনফরেস্টে বেড়ে ওঠার পাশাপাশি, এই ছাউনি গাছগুলি অনেক অঞ্চলে পাওয়া যায় যেখানে তারা ছায়া এবং অন্যান্য সুবিধা দেয়। ময়মনসিংহ শহরের ক্যানপিগুলো কমবেশি প্রায় ১৪ হাজার একর জুড়ে আছে।

B1aab940 C6d7 4b32 8dd2 9b8786493da1

ছবি : MSDP ম্যাপ-এর ফসলের প্যাটার্ন (কৃষি মানচিত্র)

F5e3533b 30e5 4cf6 8ffa F4fd17459c96

ছবি : ময়মনসিংহ কৌশলগত উন্নয়ন পরিকল্পনা ২০১১-২০৩১

পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন:
পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন নিয়ে কাজ করার সময় দেখা যায়, ময়মনসিংহ শহরে প্রচুর রাস্তা আছে । শহরে মূলত রাস্তা আছে তিনটি যেটা ত্রিভুজাকৃতি। এই ত্রিভুজাকৃতি রাস্তার মধ্যেই পুরো ময়মনসিংহ শহর তার গতানুগতিক জীবনযাত্রা নির্বাহ করে থাকে ।

351f1bfd 8941 4189 Aa80 18e1fbcec006

ছবি : MSDP-এর পরিবহণ ব্যবস্থা - পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অন্তর্ভুক্ত মানচিত্র

মাঠ পর্যায়ে প্রাপ্ত তথ্য এবং উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ময়মনসিংহ শহরে বেশিরভাগ ভ্রমণ হয় বিনোদনের উদ্দেশ্যে, পরবর্তী বৃহত্তর সংখ্যক ভ্রমণ হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। কর্মক্ষেত্রে গমনের জন্য ভ্রমণ সংখ্যা মাত্র ৮.৯ শতাংশ – ভ্রমণের কারণ বিনোদন। সাম্প্রতিককালে শহরে বিনোদনের জন্য বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজ হয়েছে এর ফলে বিনোদনের ভ্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক ভ্রমনের কারণ হলো কর্মক্ষেত্রে গমন।
ভ্রমণের বেশির ভাগ হয় পায়ে হেঁটে। যানবাহন হিসেবে রিক্সা এবং অটোরিক্সা বৃহত্তম। এমএসডিপি প্রকল্প তথ্য থেকে দেখা যায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ভ্রমনের বাহন হলো অযান্ত্রিক যানবাহন।বিশ্ববিদ্যালয়/ কলেজ/বিদ্যালয়ে গমন কেনাকাটা করা এবং কর্মক্ষেত্র গমনের জন্য সর্বোচ্চ সংখ্যক লোকজন রিক্সা ব্যবহার করেন।

72effc29 D71b 4f98 95cc 83e6111c521e

ছবি : MSDP-এর পরিবহণ ব্যবস্থা

72cc30a0 71c7 48de Bade D8f1437f21d5

ছবি : রাস্তার ভাগগুলোর মানচিত্র- ময়মনসিংহের পাবলিক ট্রান্সপোর্টের যাত্রাপথ

E0dadb78 80e7 481a 9de4 4e528773e9bf

ছবি : ময়মনসিংহ পৌরসভার বিদ্যমান ভূমি ব্যবহারের প্যাটার্ন

ময়মনসিংহের রাস্তার প্যাটার্ন থেকে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্রনদের পাশে মোট ২১টি ওয়ার্ড রয়েছে এবং শহরের কেন্দ্রে প্রধান প্রবেশাধিকার হলো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, শাম্ভগঞ্জ ব্রীজ যেটা নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল সড়কের সাথে সংযুক্ত এবং ফুলবাড়িয়া থেকে ময়মনসিংহ সড়ক।

গাঙ্গিনাপাড় নোভাল পয়েন্ট এবং টাউন হল নোডাল পয়েন্ট হল শহরের প্রধান কেন্দ্র যা শহরের অন্যান্য রাস্তার সাথে সংযুক্ত।

গাঙ্গিনাপাড় নোডাল পয়েন্ট:
নতুন অথনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে গাঙ্গিনাপাড় নোডাল পয়েন্টের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এই নোড পয়েন্টে মিশ্র বাণিজ্যিক ব্যবস্থাগুলোর অবস্থান। এখানে সব ধরনের বিলাসবহুল অফিস ও প্রাইভেট ব্যাংক, ইনসুরেন্স, শোরুম অবস্থিত। এজন্য এর একটা নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। দিনের বিভিন্ন সময়ে কিছু এলাকায় সর্বোচ্চ যানজট দেখা যায় । সকাল ৭টা থেকে সকাল ৯টা এবং দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত টাউন হল নোড থেকে গাঙ্গিনাপাড় নোডের মধ্যে যানজট দেখা যায়। অফিসগামী মানুষের জন্য সকাল ৮ট থেকে ১০টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত যানজট হয়ে থাকে।
স্টেশন নোড এবং গাঙ্গিনাপাড় নোডের দিকে সংযোগকারী রাস্তা বরাবর প্রধান মার্কেট এবং বাজার অবস্থিত। এখানে দুপুর ১২টা থেকে ১টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত যানজট হয়ে থাকে। এখানে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক এবং বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে নানা ধরনের যানবাহনের প্রবাহ হয় ফলে গাঙ্গিনাপাড় নোডাল পয়েন্টে সব সময় সর্বাধিক যানজনের চাপ থাকে। আবার চড়পাড় নোডের গুরুত্ব হচ্ছে এটা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত।
প্ল্যানিংয়ের মূল কাজ হল যোগাযোগ ব্যবস্থা। শহরের ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেমের প্রস্তাব দেয়া হয় সবকিছু বিবেচনা করেই। ময়মনসিংহের প্রায় ৯৫ রাস্তার দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ৮ ফুট চওড়া এমন অবস্থায় ভূমিকম্প হলে এখান থেকে উদ্ধারকারী বাহনের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই । এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা রোড নেটওয়ার্ক প্রস্তাব করা হয় যেন দুইটা অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার উপযোগী হয় এবং যানজটের কোনো অসুবিধা যেন না হয়। নূন্যতম ১৬ ফিটের সম্ভাব্য চওড়া রাস্তা এবং হাইওয়ে ডিজাইন করা হয়। এগুলো পিআরএ থেকে প্রাপ্ত প্রত্যেকটা লোকেশন নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ডিজাইন করা হয়। আবার কোনো কোন বিল্ডিং কতটুকু ভাঙ্গা যাবে সেটারও একটা ডাটা তৈরি করা হয়। সব তথ্য একত্রীত করেই রোড নেটওয়ার্কের ডিজাইন করা হয়।Ce073cbc 24ab 49c6 A59e E2f37d7468b2

Aa8159e2 Caae 478e A41e A69f57423131

ছবি : শহুরে এবং গ্রামীণ উভয় এলাকার জন্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা (এমএসডিপি এলাকাকে বিভিন্ন ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়েছে)

 

ড্রেনেজঃ
ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার মধ্যে মোট ১২৩ ধরনের ক্যাচমেন্ট এরিয়ার মধ্যে গ্রামীণ ৮৬ এবং নগর ৩৭টা ক্যাচমেন্ট এরিয়া আছে।
নদী আইনে বর্ষার সময় পানির যে লেভেল থাকে তার থেকে ৫০কিমি পর্যন্ত বাফার জোন ঘোষনা করা আছে।
সেখানে কোনো ধরনের ইন্টারেকশান বা কসষ্ট্রাকশন করা যাবে না। এটাকে মূলনীতি ধরে ময়মনসিংহ শহরের নির্দিষ্ট এরিয়াগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
Flood Sensetive Map- এ বর্ষার মৌসুমের প্রথমেই যে জায়গাগুলো তলিয়ে যায় অর্থাৎ পানি তৎক্ষনাৎ চলে আসে সে জায়গাগুলো দেখানো হয়েছে। ম্যাপে দেখা যায়, প্রায় বেশিরভাগ এরিয়াই Flood Sensetive.
পরিকল্পনার প্রথমে থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ড ভিত্তিক যে দাবিগুলো পাওয়া যায় সেখান থেকে একটা ডাটা বেস করে ড্রেনেজ ব্যবস্থার একটা সম্পর্ক খুজে বের করা হয়। আমরা জানি, ময়মনসিংহের আকুয়াখাল বিখ্যাত এবং শহরের ময়লা কালো পানি সব এখানে আসে এটা ময়মনসিংহের ড্রেনেজটা কাজ করা হয়। ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের বহির্গমন স্থানগুলো চিহ্নিত করার পর ড্রেনেজ চ্যানেলগুলো ব্যাকট্র্যাকড্ করা হয়েছে এবং ক্যালিব্রেটেড ও ভ্যাভেটেড পিসি এস.ডব্লিউ.এস.এস. মডেল ড্রেনেজ বেসলাইন অবস্থা দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।Water Network

Db730af9 5719 4764 96d5 37ed9e14ac12

ছবি : মাইক্রো পাড়ার সংখ্যা ৩০৭

পারা নির্ধারণ:
ময়মনসিংহ শহরে কয়ধরনের পারা আছে সেটার একটা ডাটা তৈরি করা হয়েছে। দেখা যায় কালের ক্রমে প্রায় ৩০৭ টা ছোট ছোট পারা গড়ে উঠেছে। ম্যাপে এগুলোর সাইজ দেখলে বোঝা যায় ছোট ছোট জায়গাগুলো শহুরে মানুষদের ঘনবসতির অবস্থান এবং এগুলো ছোট ছোট ক্ষেত্র হিসেবে অবস্থান করছে। শহরের মধ্যে বড় জায়গাগুলো সরকারি ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল কলেজ অবস্থিত। তাহলে ,পারার কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি থেকে বোঝা যায় কোন জায়গায় ঘনবসতিপূর্ণ এবং কোন জায়গায় সরকারি বা প্রশাসন এলাকা অবস্থিত।
ময়মনসিংহ শহরের সব তথ্য একত্রীত করে প্রথমে ড্রাফট স্ট্রাকচার প্ল্যান ডিজাইন করা হয়। স্ট্রাকচার প্লানের অধীনে যে সকল পরিকল্পনার প্রস্তাবনা দেয়া হয় সেগুলো হলো-
পানীয় জল ধারণ এলাকা, বিমানবন্দর, ভবিষৎ নগরায়ন জমি, শিল্পজল ধরে রাখার এলাকা, শিল্প অঞ্চল, লো রাইজ আবাসিক এলাকা, বার্ণ এবং অর্থোপেডিক হাসপাতাল, আঞ্চলিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র , ক্রীড়া অঙ্গন, পয়নিস্কাশন এবং পানির শোধনাগার।এছাড়াও রয়েছে নগরীরর প্রতিটি সড়কে বাতির ব্যবস্থাকরন সহ জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সড়ক যোগাযোগ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন। এসবের বাইরে নগরীর বিউটিফিকেশনসহ নগরবাসীর বিনোদনের ছায়াশীতল পরিবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত ড্রাফট স্ট্রাকচারাল প্ল্যান কারার পর এটি ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয় নানা শ্রেণীর পেশার মানুষের সঙ্গে এ নিয়ে মত বিনিময়ের জন্য। এরপর বিভিন্ন মতামত নিয়ে ড্রাফট স্ট্রাকচারাল প্ল্যানে সংযোজন-বিয়োজন শেষে একটা ফাইনাল স্ট্রাকচারাল প্ল্যান প্রস্তাবিত করা হয়।

5971f105 Ec6d 4bf3 A18e 04aef3eea97d

ছবি : এমএসডিপি-এর ধারণাগত কাঠামো পরিকল্পনা

C25760e2 5699 4b61 93e4 309ea5b8c41c

ছবি : খসড়া কাঠামো পরিকল্পনা প্রস্তাব (এমএসডিপি)

প্রস্তাবিত নতুন বিভাগীয় শহর:
ফাইনাল প্লান শেষ হবার পর এবং ময়মনসিংহ ৮ম বিভাগ ঘোষনার পর UDP- এর উপর নির্দেশনা আসে ময়মনসিংহ শহরের নদীর ওপারে একটা পরিকল্পিত বিভাগীয় শহর তৈরি করতে হবে। দেখা যায়, ম্যাপের যে জায়গাটা ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে সেনসিটিভ সেই জায়গাটাই নতুন বিভাগীয় শহর প্ল্যানের জন্য সরকারি তরফ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। কারণ এখানে খালি জায়গা কম এবং আবাসনও নেই। ঐ জায়গাগুলোকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করার পর সম্ভাব্য অংশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সেনসিটিভ যে এরিয়াগুলো ছিল সেগুলোকে লেক, খাল, আরবান ড্রেনেজ খাল ব্যবস্থা, ফ্লাড জোন, সবুজ অংশ হিসেবে সংরক্ষিত করা হয়।
এছাড়াও একাধিক ফ্লাইওভার, ওভার ব্রিজ ও চারলেন সড়ক নির্মান, ময়লা-আবর্জনার বর্জ্য ব্যবস্তাপনা থেকে নিজস্ব চাহিদার বিদ্যুৎ জেনারেশন, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, জলাবদ্ধতা দূরীকরনে সড়ক যোগাযোগ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য খাল খনন, পার্ক নির্মাণ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পনান ময়মনসিংহ নগর ভবন নির্মাণ ব্যবস্থা।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ ও ভ’মিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলা মাথায় রেখে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর নতুন এই মাস্টারপ্লান তৈরি করে।

143ec80e Be8b 4359 B91f 32bdcbc2d5e1

ছবি : বিভাগীয় নতুন শহরের কাঠামো পরিকল্পনা

ডিজাইন উপদেষ্টাবৃন্দ:
[ -খন্দকার ফৌজে মোহাম্মদ বিন ফরিদ (সাবেক পরিচালক, ইউডিডি)
-ড.-ইং. কে. জেড. হোসেন তৌফিক (ইউডিডি এবং এমএসডিপির প্রধান প্রকল্প পরিচালক)
-আহমেদ আখতারুজ্জামান, কাজী মোঃ ফজলুল হক, আহসান হাবীব, ইয়ারুন্নেসা খানম, ইসরাত জাহান, পরিকল্পনাবিদ জাকিয়া সুলতানা, হারোসিত বড়াই, মোঃ মনির হোসেন, এস এম সাইদুল ইসলাম, মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, তৌহিদুল মফিজ, অমৃতা কুমার দাস, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ মাহমুদুল হাসান, এ.কে.এম. বদরুল আলম, মোঃ নূর ই আলম সিদ্দিকী, রেনু মিয়া, ওমর ফারুক, সজিব সরকার, নাদিরা আলো, মোঃ আব্দুর রাজ্জাক সিকদার, মোঃ আল আমিন শিকদার, ফারহানা আক্তার, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ আবুল ফয়েজ, মোঃ জাকির হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, মোঃ তরিকুল ইসলাম, মোঃ আনিসুর রহমান, নারায়ণ চক্রবর্তী ]

প্রকল্প তথ্য: নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর (ইউডিডি), গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে সংগৃহীত

সহকারি সম্পাদনায় : স্থপতি নিশি সাইমুন

আপনার মতামত দিন

কমেন্ট

Logo
Logo
© 2024 Copyrights by Sthapattya o Nirman. All Rights Reserved. Developed by Deshi Inc.