ডকুমেন্টেশন টিম:
প্রবন্ধ লেখক : স্থপতি খন্দকার মাহফুজ আলম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ।
ড্র্যাফটিং : জুবায়ের রহমান , প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ।
ইলাস্ট্রেশন : আদিব রহমান (বুয়েট,স্থাপত্য বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ)
প্রাচীন এবং আধুনিক বিখ্যাত স্থাপত্যের নানা নিদর্শনের সংমিশ্রণে বেড়ে উঠেছে এ জেলা। এখানে অনেক পুরাকীর্তি রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত করেছে। সংরক্ষিত প্রত্নতত্ত্ব স্থানগুলো হলো সংরক্ষিত প্রত্নতত্ত্ব স্থলগুলো হলো অষ্টগ্রাম উপজেলা সদরের কুতুব মসজিদ, হর্ষি মসজিদ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কবি দ্বিজবংশী দাস ও কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতি বিজড়িত মন্দির, করিমগঞ্জ উপজেলার মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁ’র স্মৃতি জড়িত ‘জঙ্গলবাড়ি’, পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুরের ‘শাদী মসজিদ” ও শাহ মাহমুদ মসজিদ, তাড়াইল উপজেলার সাহেব বাড়ী (সেকান্দরনগর) মসজিদ, নিকলী উপজেলার গুরুই মসজিদ। ইতিহাস ও ঐতির্য্যের এক অপূর্ব নিদর্শন কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম।এ উপজেলায় বাংলার স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুব শাহ মসজিদ অবস্থিত। সম্প্রতি, স্থপতি খন্দকার মাহফুজ আলম ও তার সদস্যবৃন্দ কুতুব শাহ মসজিদের আর্কিটেকচারাল ডকুমেন্টেশনের কাজ সম্পন্ন করেছেন। |
ছবি : লোকেশন ম্যাপ |
ছবি : সাইট প্ল্যান এবং গ্রাউন্ড ফ্লোর প্ল্যান | সমতল ভূমির উপর বড় একটি দীঘির পাড়ে দণ্ডায়মান কুতুব শাহ মসজিদ।এই মসজিদের দেয়ালে কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি তাই এই মসজিদের সঠিক নির্মাণ তারিখ অনুমান করা কঠিন। যদি আমরা এই মসজিদের নির্মাণ সামগ্রী এবং কারুকার্যগুলো পর্যবেক্ষণ করি তবে এটি স্পষ্টভাবে অনুমান করা যায় যে এই মসজিদটি ১৬ শতকের শেষের দিকে সুলতান আমলে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটির পাশেই একটি কবর রয়েছে । এটিকে মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন বলেও মনে করা হয় । ১৯০৯ সালে তৎকালীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত হিসেবে নথিভুক্ত করে। |
ছবি : পশ্চিম পার্শ্বের এলিভেশন |
ছবি : পূর্ব পার্শ্বের সম্মুখ দিকের এলিভেশন |
মসজিদটি উত্তর ও দক্ষিণ বরাবর দীর্ঘায়িত এবং এর চার কোণায় চারটি মিনার রয়েছে। এর অষ্টভুজাকার মিনারের উপর আংটির মতো কাঠামো রয়েছে। এটি একটি মাঝারি আকারের মসজিদ যার পাঁচটি গম্বুজ এবং বাঁকা কার্নিশ রয়েছে। কুতুব শাহ মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজটি কিছুটা অর্ধগোলাকার এবং বাকি চারটি গম্বুজ অর্ধ ডিম্বাকৃতির। কেন্দ্রীয় গম্বুজটির মধ্যবর্তী অংশে এবং পার্শবর্তী অংশদ্বয়ের উপরিভাগ আবার দুই অংশে বিভক্ত করে প্রতিটি অংশের ওপর একটি করে ক্ষুদ্র গম্বুজ স্থাপন করা হয়েছে। গম্বুজসমূহ করবেল কৃত পেন্ডেন্টিভ দ্বারা সৃষ্ট। সুলতানী আমলের মসজিদের কার্নিশে এবং বাংলার দোচালা ঘরের কার্নিশে যে স্বাভাবিক বক্ররেখা পরিলক্ষিত হয়, এই মসজিদের ক্ষেত্রে তা ছিল আরও মাত্রাতিরিক্ত। প্রতিটি গম্বুজের ওপরে ফুলের মতো অলংকৃত করা হয়েছে। |
ছবি : ছেদচিত্র |
ছবি : ছেদচিত্র |
ছবি : ছেদচিত্র |
পশ্চিমদিক বাদে মসজিদের তিনপাশ থেকেই প্রবেশপথ রয়েছে, পূর্ব দিকে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে, একটি উত্তরে এবং আরেকটি দক্ষিণে। পশ্চিম দেয়াল বরাবর তিনটি মিহরাব রয়েছে। বগুড়ার শেরপুরের খেরুয়া মসজিদের মতো এর বাইরের দেয়ালে একটি সুন্দর প্যানেলিংয়ের কাজ রয়েছে। বাইরের দেয়ালের অলংকরণেও পুষ্পশোভিত পোড়ামাটির ফলক ব্যবহার করা হয়েছে। |