ঢাকা গেট (মীর জুমলা গেট বা রমনা গেট নামেও পরিচিত) একটি স্মৃতিস্তম্ভ যা মীর জুমলা দ্বিতীয় দ্বারা নির্মিত বলে বিশ্বাস করা হয় এবং এটি ঢাকার প্রাচীনতম মুঘল স্থাপত্যের একটি হিসেবে তালিকাভুক্ত। ঢাকার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত এই গেটটি।
৩৬০বছরের পুরনো ঢাকা গেট, বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন, অবশেষে তার জাঁকজমক ফিরে পেয়েছে। গত ২৪শে জানুয়ারী, ২০২৪ বিকেল ৪টায় সংস্কার প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ঢাকা গেট জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ঢাকা শহরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ঢাকা গেট সংস্কারের কাজটি শুরু করে ২০২৩ সালের মে মাসে। ২০২২ সালে ডিএসসিসি এটি সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বরের কাছে অবস্থিত জরাজীর্ণ কাঠামোটি সকলের অগোচরে থেকে যায়। |
ছবি: প্রকল্পের সদস্যরা ছবি স্বত্ব: অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদ-এর ফেসবুক পেজ |
সংস্কার কাজের মূল লক্ষ্য ছিল গেটটিকে ১৭ শতকের আসল চেহারায় ফিরিয়ে আনা। প্রকল্পটি প্রায় ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে কন্ট্রাক্টর আহনাফ ট্রেডিংস দ্বারা পরিচালিত হয়। ঢাকা গেট (যা "মীর জুমলা গেট" নামেও পরিচিত) সংস্কার প্রকল্প, ঢাকাকে আরও পর্যটন-বান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ডিএসসিসির বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ। প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বাস করেন, সংস্কারকৃত গেটটি ঢাকার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এশিয়াটিক সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত ঢাকার এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে, ঢাকা গেটটি ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে মীর জুমলা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যিনি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে বাংলার গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এটি শহরের প্রবেশদ্বার এবং এর সীমানা চিহ্নিতকারী হিসাবে কাজ করেছিল। শত্রুর আক্রমণ থেকে ঢাকাকে রক্ষা করার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা কাজেও এই গেট ব্যবহার করা হতো। এটি ১৮২৫ সালে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডাউস দ্বারা পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং তৎকালীন সময় এটিকে "রমনা গেট" নামকরণ করা হয়। ব্রিটিশ শাসনের পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের সময় গেটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। |
ছবি: ঢাকা গেট-এর পুরনো ছবি ছবি স্বত্ব: Wikipedia |
ছবি: ঢাকা গেট-এর সাম্প্রতিক ছবি ছবি স্বত্ব: City Cyntax |
ছবি স্বত্ব: City Cyntax |
স্থাপত্য সংরক্ষণ বিষয়ে অভিজ্ঞ অধ্যাপক আবু সাঈদ এম আহমেদের নেতৃত্বে এ পুনরুদ্ধার প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল ঢাকা গেটকে তার আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা। মীর জুমলার সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও অধ্যাপক আবু সাঈদ স্পষ্ট করে বলেন, "এ বিষয়ে উপযুক্ত কোনো প্রমাণ নেই। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে এই গেটটি ব্রিটিশ আমলে ম্যাজিস্ট্রেট ডি'অলি (D'Oyly) তৈরি করেছিলেন।" গেটটি প্রাথমিকভাবে দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। ১৯৬০ এর দশকে রাস্তা প্রশস্তকরণের কারণে এর একটি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছিল এবং পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। সংস্কার প্রক্রিয়ায় মূল উপকরণ হিসেবে চুন-সুরকি, প্লাস্টার ব্যবহার করা হয়েছে। ওসমানী উদ্যানের মীর জুমলার ব্যাবহৃত বিবি মরিয়ম কামান গেটের নতুন ডিজাইনে ব্যবহার করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও পরিবেশ উপভোগ করার জন্য এর চারপাশে একটি উঠান তৈরি করা হয়েছে। |
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডিএসসিসির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে ঢাকার অমূল্য ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে অনুরূপ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, উদ্বোধনটি ঢাকার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার সংস্কার করার পাশাপাশি নগরবাসীর জন্য একটি আনন্দদায়ক স্থান হবে। |
ছবি স্বত্ব: City Cyntax |
সম্পাদনায় : স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ |