‘আরআইবিএ’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যের সম্মাননায় ভূষিত হল বাংলাদেশের দুইটি প্রকল্প

স্থাপত্য ও নির্মাণ
সাম্প্রতিক
১৬ জুন, ২০২৪
১৪৩
‘আরআইবিএ’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যের সম্মাননায় ভূষিত হল বাংলাদেশের দুইটি প্রকল্প

-

আরআইবিএ কর্তৃক প্রদত্ত “ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্সস্থাপত্য শিল্পের জগতে বিখ্যাত সম্মাননাগুলোর মধ্যে অন্যতম যেখানে সারা বিশ্ব থেকে হাজারো প্রকল্পের মধ্যে বাছাই করে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রকল্পকে এই সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। স্থপতি সিমন হেনলির নেতৃত্বে জুরি বোর্ড নিপুণতার সাথে ১৪ দেশের ২২ টি স্থাপত্যকর্মকে নির্বাচিত করেছেন। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের দুইটি প্রকল্প স্থান করে নিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হল স্থপতি বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার এবং তার স্থাপত্য অফিস নকশাবিদ আর্কিটেক্টস দ্বারা নকশা করা গ্রীনফিল্ড ফ্যাক্টরি : কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড, যা রংপুরে অবস্থিত। অপর স্থাপত্যকর্মটি স্থপতি শরীফ উদ্দিন আহমেদ দ্বারা পরিচালিত স্থাপতিক দ্বারা নকশা করা শাহ মুহাম্মদ মহসিন খানের সমাধি’, যা মানিকগঞ্জে অবস্থিত।

গ্রীনফিল্ড ফ্যাক্টরি : কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড

বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত কারুপণ্য রংপুর লিমিটেডের গ্রিনফিল্ড ফ্যাক্টরিটি শুধুমাত্র কার্পেট বানানোর কারখানাই নয়, এখানে স্থপতি ও তার দল সুনিপুনভাবে স্থাপত্যকে করে তুলেছেন এখানের কর্মীদের জন্যে এক অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা কর্মস্থলে। গাছগাছালিতে শোভিত ও প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের মাধ্যমে এই ভবনটি কর্মস্থলের পাশাপাশি শান্তি ও বিনোদনের জায়গাতে পরিণত হয়েছে।  ১৪,১৭০ বর্গমিটারের প্রকল্পের এলাকায় নির্মানাধীন এলাকা পরিমাণ ২৪,৮৫০ বর্গ মিটার, যার অভ্যন্তরের জলের আধারগুলো বাতাসকে শীতল করে সবুজ পর্দার মধ্য দিয়ে ফিল্টার করে চারটি অ্যাট্রিয়ামের মাধ্যমে সমগ্র ভবনে ছড়িয়ে দেয়।

1
23

প্রাকৃতিক পরিবেশকে সমন্বিত করে স্থাপত্যের সংজ্ঞাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার এই প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে মানুষের মনকে জয় করে নিয়েছে। এই কারখানায় একটি গুছানো ল্যান্ডস্কেপ দেখা যায় যা ম্যাইক্রোক্লাইমেট তৈরির মাধ্যমে ভবনের বিভিন্ন অংশে তাপমাত্রা সহনীয় রাখছে। এখানে কারখানা ছাড়াও আছে একটি মেডিকেল সেন্টার, একটি মুদি দোকান, একটি ডে কেয়ার সুবিধা, নামাজের স্থান এবং একটি ক্যান্টিন। ব্যতিক্রমী এই স্থাপনাটি যেমন একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে তেমনি এর নকশা ব্যবহারকারীদেরকে দিয়েছে সহজে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করার অসাধারণ সুযোগ। এই স্থাপত্যে ভাস্কর্য, প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল, ৭ তলাবিশিষ্ট অ্যাট্রিয়াম, নাটকীয় প্রবেশসিঁড়ি, আয়তাকার ফর্ম ও কংক্রিটের কাঠামো ইত্যাদির সমন্বয়ে অসাধারণ একটি স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। LEED  গ্রিন বিল্ডিং সম্মাননাসহ বেশ কিছু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে এই অসাধারণ স্থাপত্য। 

শাহ মুহাম্মদ মহসিন খানের সমাধি

রাজধানী ঢাকার অদূরে মানিকগঞ্জে অবস্থিত শাহ মুহাম্মদ মহসিন খানের সমাধিস্থলটি একটি ব্যক্তিগত জায়গায় নির্মিত একটি স্থাপনা। পিতার প্রতি সম্মানপ্রদর্শন স্বরূপ এই স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেন শাহ মুহাম্মদ মহসিন খানের উত্তরসূরিরা। এই স্থাপনায় প্রাকৃতিক আলোর সমন্বয়ে গঠিত অভ্যন্তরীণ অঙ্গনে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শাহ মুহাম্মদ মহসিন খান। সমাধির ঠিক উপরের বেশকিছু নলাকার আকৃতির ছাদের মধ্য দিয়ে আলো প্রবেশ করছে স্থাপনার ভিতরে যা এক আধ্যাত্মিক পরিবেশের আবহ তৈরি করে। এদেরকে ঘিরে রেখেছে ইটের জালির প্রাচীর। পূর্ব পুরুষের স্মৃতি রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে এই প্রকল্পে আছে একটি মসজিদ, একটি গ্রন্থাগার এবং একটি পারিবারিক বাড়ি।

4
56

লাল ইটের এই স্থাপনাটি সাইটে প্রবেশের মুখেই অবস্থিত। প্লিন্থ, বাঁকা দেয়াল আর আয়তাকার প্রবেশদ্বারের সমন্বয়ে নির্মিত এই স্থাপনার একটি অনন্য গঠনগত বৈশিষ্ট্য আছে।  বৃত্তাকার টারেটেড মোটিফ সুলতানি আমলের বহুগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ থেকে অনুপ্রাণিত এবং স্থাপনার বাহিরের দেয়াল অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালগুলো সুলতানী আমলের কোণার বুরুজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আকাশের আলো তৈরি করে ইটের সিলিন্ডার পর্যন্ত নিয়ে যায়। এই অনন্য স্থাপনাটি বাংলাদেশের ও আন্তর্জাতিক স্থাপত্য অঙ্গনে একটি নিজস্ব ভাষা তৈরি করেছে। 

সম্পাদনায় : স্থপতি মুহাম্মদ শাফায়েত হোসেন

Shafayet

 

আপনার মতামত দিন

কমেন্ট

Logo
Logo
© 2024 Copyrights by Sthapattya o Nirman. All Rights Reserved. Developed by Deshi Inc.