স্থপতি সামান্থা লামিসা ভেনিস, হ্রদ এবং জলপথ, শিল্প এবং সংলাপ এর শহর। এখানে প্রতিবছর অন্তর ভেনিস বিয়েনালে আয়োজন করা হয়ে থাকে - যেখানে কখনও শিল্প প্রদর্শনী, কখনও স্থাপত্যকে উদযাপন করা হয়। |
বিয়েনালে কি? “Biennale”/ বিয়েনালে (ইতালিয়ান শব্দ, যার মানে "প্রতি দুই বছর") একটি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী, যা প্রতি দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। এই শব্দটি ১৮৯৫ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত ভেনিস অন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিলো। ‘La Biennale di Venezia’ নামক সংস্থার অধীনে এটি পরিচালিত হয়।
সবচেয়ে প্রাচীন এবং জনপ্রিয় বিয়েনালেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “ভেনিস বিয়েনালে”, যা স্থাপত্যসহ বিভিন্ন শাখায়, যেমন - চলচ্চিত্র, ভিজ্যুয়াল আর্ট, থিয়েটার, সঙ্গীত ইত্যাদি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে আসছে। প্রথম অনুষ্ঠিত আর্ট বিয়েনালের প্রায় এক শতাব্দী পর, ১৯৭৫ সালে আয়োজন করা হয় ভেনিস স্থাপত্য বিয়েনালে। এই বছর ১৯ তম ভেনিস স্থাপত্য বিয়েনালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা ১০ মে,২০২৫ থেকে ২৩ নভেম্বর,২০২৫ পর্যন্ত সাধারণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। |
|
|
|
সাংগঠনিক কাঠামো (Organogram) ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালের সাংগঠনিক কাঠামো (Organogram) সুসংবদ্ধ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। এই সাংগঠনিক কাঠামোর একজন সভাপতি নির্ধারণ করা হয়, যাকে নিযুক্ত করে ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়। তিনি পুরো প্রতিষ্ঠানের দিকনির্দেশনা, নীতি ও ব্যবস্থাপনা তদারকি করেন। তার নেতৃত্বে একটি পরিচালনা পরিষদ গঠিত হয়, যারা বার্ষিক বাজেট, কিউরেটর নিয়োগ, পুরস্কার প্রদান ও গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। প্রতিটি সংস্করণের জন্য আলাদা করে একজন কিউরেটর বা শিল্পনির্দেশক নিয়োগ করা হয়, যিনি প্রদর্শনীর মূল থিম নির্ধারণ করেন, অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচন করেন। ২০২৫ সালের কিউরেটর হচ্ছেন Carlo Ratti। বিভিন্ন বিভাগ যেমন আর্কিটেকচার, আর্ট, থিয়েটার, সিনেমা, মিউজিক ইত্যাদির জন্য আলাদা দল গঠন করা হয়। কিউরেটরকে সহায়তা করার জন্য একটি দল থাকে, যেখানে গবেষক, কিউরেটরিয়াল সহকারী, প্রযোজক ও প্রদর্শনী সমন্বয়কারী থাকেন। প্রতিটি বিয়েনালেতে একটি বিচারকমণ্ডলীর দল গঠন করা হয়, যারা অংশগ্রহণকারীদের প্রজেক্টগুলো বিবেচনা করে তাদের মধ্যে ‘Golden Lion’ পুরস্কার সহ অন্যান্য সম্মাননা প্রদান করে। |
প্রতিটি দেশ নিজস্ব প্যাভিলিয়নের আয়োজন করে, যার জন্য তারা আলাদা করে নিজেদের কিউরেটর ও দল নিযুক্ত করে। এগুলো স্বশাসিত, কিন্তু প্রদর্শনীর মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। |
|
|
|
ভেন্যু: ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালে, ভেনিস শহরের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রদর্শনীর প্রধান ভেন্যুগুলো হলো Giardini della Biennale এবং Arsenale। এছাড়াও সমগ্র ভেনিস শহরের বিভিন্ন স্থান এবং মুল শহর থেকে ১১ কি মি দূরে Forte Merghera নামক একটি ঐতিহাসিক পার্কে বিয়েনালের আনুষ্ঠানিকতা স্থান পেয়েছে। ১৯ শতকে স্থাপিত, Giardini della Biennale (জার্দিনি দেল্লা বিয়েনালে) ভেনিস বিয়েনালের মূল কেন্দ্রস্থল। এখানে বেশ কয়েকটি দেশের স্থায়ী প্যাভিলিয়ন রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব প্রদর্শনী উপস্থাপন করে। Arsenale (আর্সেনালে): এটি একটি প্রাচীন নৌ-কারখানা, যা ভেনিস প্রজাতন্ত্রের সময় নৌজাহাজ নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত হতো। এখন এটি একটি বিশাল প্রদর্শনী স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে মূল থিমেটিক এক্সিবিশনসহ অনেক আন্তর্জাতিক প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। Arsenale-র অন্যতম উল্লেখযোগ্য অংশ হলো Corderie, যেখানে এক সময় নৌজাহাজের দড়ি তৈরি হতো। এটি এখন একটি প্রধান এক্সিবিশন স্পেস। |
|
|
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : ভেনিস স্থাপত্য বিয়েনালে বিশ্বব্যাপী স্থাপত্যের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হলেও, এর ইতিহাস তুলনামূলকভাবে অজানা। ২০০৯ সালে স্থাপত্য বিষয়ক ইতিহাসবিদ Aaron Levy এবং William Menking যৌথভাবে বিয়েনালের একটি সমকালীন ইতিহাস রচনার উদ্যোগ নেন, যার ভিত্তি ছিল পূর্ববর্তী পরিচালকদের সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপ। এই সংলাপ গুলোর উপর ভিত্তি করে আর্কিটেকচারাল অ্যাসোসিয়েশন, লন্ডন এর তত্ত্বাবধানে “স্থাপত্য প্রদর্শনী: ভেনিস স্থাপত্য বিয়েনালের ইতিহাস” (Architecture on Display: On the History of the Venice Biennale of Architecture) শিরোনামে একটি প্রকাশনা তৈরি করা হয়। ১৯৭৫ সালে,ইতালির স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ এবং তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী কার্লো রিপা দি মিয়ানার সভাপতিত্বের সময়, প্রথম স্থাপত্য প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শিরোনাম ছিলো "Proposte per il molino stucky" (A proposal for Molino Stucky/ মলিনো স্টাকির জন্য একটি প্রস্তাবনা), যা কিউরেট করেছিলেন ইতালিয়ান স্থপতি ভিত্তোরিও গ্রেগোত্তি |
|
ভিত্তোরিও গ্রেগোত্তি পেশায় একজন স্থপতি এবং একটি স্থাপত্য বিষয়ক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। যদিও এটি একজন সমকালীন শিল্পকলা বিশেষজ্ঞের কাজ ছিল। কিন্তু তাকে এই বিয়েনালের কিউরেটর হতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তিনি সম্মতি দিয়েছিলেন কেবল একটি শর্তে –বিয়েনালেতে একটি ছোট আকারের স্থাপত্য প্রদর্শনী করার। বিয়েনালেতে এর আগে কখনো স্থাপত্য বিভাগ ছিল না। ১৯৭৪ সালে কাজ শুরু হয়, প্রদর্শনী খোলে ১৯৭৫ সালে, আর সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীগুলো আসে এরপরের বছরগুলোতে। পরবর্তীতে, ১৯৮০ সালে, অন্যতম ইতালিয়ান ইতিহাস ও রাজনীতিবিদ জুসেপ্পে গালাস্য’র (Giuseppe Galasso) (১৯৭৯-১৯৮২) চার বছরব্যাপী সভাপতিত্বের সময় ভেনিস বিয়েনালের স্থাপত্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, এ সময় ইতালিয়ান স্থপতি পাওলো পোর্তোগেসি কে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। |
|
ভেনিসের “কর্দেরিয়ে দি আরসেনালের” ইতিহাস ১৪শ শতকে শুরু হয়। ১৩০৩ সালে, আরসেনালের দক্ষিণ পাশে কর্দেরিয়ে কৌশলগতভাবে স্থাপন করা হয়েছিল, যা ছিল একটি প্রধান জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র। পরবর্তীতে, ১৫৭৯ থেকে ১৫৮৫ সালের মধ্যে আবার নির্মিত হয় আন্তোনিও দা পন্তে-র নকশায়। প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ এবং ২o মিটার প্রস্থের একটি স্থান, যা প্রথমবারের মতো বিয়েনালের মাধ্যমে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। প্রদর্শনীটির মূল আকর্ষণ ছিলো বিশটি ফ্যাসাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দীর্ঘ দেয়াল, যা তৎকালীন ২০ জন স্বনামধন্য স্থপতির সূক্ষ্ম চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। |
|
প্রথম প্রদর্শনীর সারা জাগানো সাফল্যের পর, ১৯৮২-৮৩ সালের দ্বিতীয় বিয়েনালে এক ঐতিহাসিক মোড় নেয়। পোর্তোগেসি এ বছর বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেন, ‘ARCHITETTURA NEI PAESI ISLAMICI’ (ইসলামিক দেশগুলোর স্থাপত্য)। ভারতবর্ষ থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে স্থাপত্যের যে বৈচিত্র্য, আত্মিকতা এবং পরিবেশনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি, তা তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি । একই সাথে পশ্চিম এবং পূর্বের মধ্যে একটি যোগাযোগ স্থাপন এর চেষ্টা করা হয় বলে ধারণা করা হয়। প্রদর্শনীর ক্যাটালগের ভূমিকায় পোর্তোগেসি ব্যাখ্যা করেন, ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগ থেকে শুরু করে ইসলামি সংস্কৃতির প্রভাব পশ্চিমা সাহিত্যে, চিত্রকলায় ও স্থাপত্যে ক্রমবর্ধমান হয়েছে, যা গাউডি, রাইট ও লি করবুসিয়ের মতো ব্যক্তিত্বদের কাজেও প্রতিফলিত হয়েছে। পরিবেশপ্রধান দৃষ্টিভঙ্গি, আধ্যাত্মিক উপাদান এবং সমাজকেন্দ্রিক উদ্দেশ্যকে ইসলামি স্থাপত্যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। Source: with Paolo Portoghesi, Domus 652, July 1984 দ্বিতীয় বিয়েনালেতে এমন কিছু প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়, যেগুলো নির্মাণাধীন অথবা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছিলো, যেখানে স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সমসাময়িক নির্মাণপ্রযুক্তির সমন্বয় দেখা যায়। বিশেষ গুরুত্ব পায় মিশরের তৎকালীন তরুণ স্থপতিদের মধ্যে বিশিষ্ট হাসান ফাথির কাজ। একইসঙ্গে, ঐতিহ্যবাহী আবাসিক স্থাপনাগুলোর পুনরুদ্ধার ও পুনঃব্যবহার নিয়ে কিছু প্রস্তাবও উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও, কিছু একক প্রদর্শনীতে ইসলামিক স্থাপত্য নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, যেমন ফার্নান্দ পুইয়োঁ ও লুই কানের কাজ উপস্থাপন করা হয়। এতে ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) শহরগুলোর জন্য তাঁদের করা অঙ্কন ও পরিকল্পনার পাশাপাশি লে করবুসিয়ের আলজিয়ার্স ও চণ্ডীগড় শহরের জন্য করা দুটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। |
ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালে: (১৯৮০-২০২৫) ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালে -এর ২য় (১৯৮২-১৯৮৩), ১৬তম (২০১৮) বিয়েনালেতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল। এ বছরের বিয়েনালেতে (১৯তম) বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রকল্প প্রদর্শিত হচ্ছে। |
বাংলাদেশ বলা উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশের মাজহারুল ইসলাম - এর কাজের উল্লেখযোগ্য বিশ্লেষণ পাওয়া যায় এই প্রদর্শনীতে। একই সাথে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ”ইসলামিক দেশগুলোর স্থাপত্য” বিষয়ে মাজহারুল ইসলাম এর একটি বিবৃতি পাওয়া যায়। বলা যেতে পারে, এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সাথে ভেনিস আর্কিটেকচার বিয়েনালের যোগাযোগ স্থাপন হয়। পরবর্তীতে, দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর ২০১৮ সালে ভেনিস স্থাপত্য বিয়েনালেতে বাংলাদেশের উপস্থিতি নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। ১৬তম আন্তর্জাতিক স্থাপত্য প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল ‘FREESPACE’। এই প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছিলেন আইরিশ স্থপতি ইভন ফারেল এবং শেলি ম্যাকনামারা, সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন পাওলো বারাত্তা। স্থাপত্যের অন্যতম মূল উপাদান হিসেবে "ফ্রিস্পেস" বা মুক্ত স্থান এর ধারণাকে কেন্দ্র করে গঠিত প্রদর্শনী, মানবিকতা, উদারতা এবং স্থানিক অভিজ্ঞতার উপর বিশেষ আলোকপাত করেছিল। এই বিষয়বস্তুর মাধ্যমে স্থপতিরা স্থাপত্য তৈরির প্রক্রিয়ায় ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন, যা স্থানীয় প্রেক্ষাপট, ঐতিহ্য এবং সামাজিক সংযোগকে গুরুত্ব দেয়।প্রদর্শনীতে ৭১ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন, যারা মূল বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রকল্প উপস্থাপন করেন। |
২০১৮ সালের বিয়েনালেতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশী স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম, “Wisdom of the Land” শীর্ষক একটি প্রদর্শনী উপস্থাপন করেন ভেনিসের আর্সেনালেতে। এই প্রদর্শনীতে তিনি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপট ও প্রথাগত বসত ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লষণ করেন - বিশেষ করে বাংলার আদি-সামাজিক গঠন “উঠোন”-এর স্থাপত্যিক ও নন্দনতাত্ত্বিক গুরুত্ব তুলে ধরেন। কীভাবে স্থাপত্য শুধু অবকাঠামো নয় বরং একটি পরিপূর্ণ সামাজিক প্রক্রিয়া, যেখানে স্থানীয়তা, ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক উপাদান ও সামাজিক আন্তঃক্রিয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্থান গঠনের কৌশল, আচার, এবং দৈনন্দিন জীবনের ধারাকে তিনি পর্যালোচনা করেন। তাঁর এই সংবেদনশীল পর্যবেক্ষণ-ভিত্তিক পদ্ধতি একদিকে যেমন রুঢ় আধুনিকতাবাদ থেকে আলাদা, অন্যদিকে তেমনি “শুধুমাত্র স্থাপত্য নির্দিষ্ট সমাধান নয়, বরং প্রক্রিয়া ও শ্রদ্ধাভিত্তিক পারস্পরিক সংলাপই ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ করে” - এই বার্তা তুলে ধরে। |
|
|
|
|
১৯তম ভেনিস স্থাপত্য বিয়েনালে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ২০২৫ সালে, আন্তর্জাতিক এই স্থাপত্য মঞ্চে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভেনিস স্থাপত্য বিয়েনালের বিগত অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করলে, এবারের উপস্থিতি শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য প্রদর্শনী নয়, বরং স্থানীয় ভাবনার বহিঃপ্রকাশ, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং স্থানচর্চার নিজস্বতা তুলে ধরার একটি অনন্য সুযোগ। সভাপতি Pietrangelo Buttafuoco, এবং শিল্প নির্দেশক স্থপতি Carlo Ratti এর নেতৃত্বে এবারের প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয় “ইন্টেলিজেন্স. প্রাকৃতিক. কৃত্রিম. সমষ্টিগত”/ (INTELLIGENS. NATURAL. ARTIFICIAL. COLLECTIVE) শীর্ষক শিরোনামে। মূল বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, বাংলাদেশের স্থপতি রিজভী হাসান, স্থপতি খাজা নুজহাত জেরিন ফাতমি এবং জিম্বাবুয়ের অ্যালিস কোচরেনের যৌথ উদ্যোগে “Born in a Camp” শিরোনাম এর প্রদর্শনীটি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। ২০১৭ সালের আগস্টে, মিয়ানমার থেকে ৭০০,০০০-এরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষার্থে, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পালিয়ে আসে এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। ‘Born in a camp’ প্রকল্পটি এই সম্প্রদায়ের আত্মপরিচয় এবং প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। একই সাথে,বিশ্ববাসিকে বার্তা দেয় যে শরণার্থীরাও শক্তিশালীভাবে নিজেদের পুনর্গঠন করতে পারে। এছাড়াও, ‘ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ’ – এর একটি প্রকল্প, ‘পুনর্গঠন এবং পুনঃব্যবহারের একটি পলিম্যাথিক যাত্রা’ (A Polymathic Journey of Regeneration and Reuse) ১৯তম বিয়েনালেতে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের ‘খুদি বাড়ি’র প্রদর্শনীও ছিল এবারের বিয়েনালেতে। |