প্রজেক্টের নাম : বিদ্যানন্দ সম্প্রীতি অনাথালয় বিদ্যালয়
স্থান : বৈদ্দ্য পাড়া, ঈদগাহ বাজার, ঈদগড়, রামু, কক্সবাজার
ক্লায়েন্ট : বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন
মোট বিল্ট এরিয়া : ৩৯৪৮ বর্গ ফুট
প্রজেক্ট আরম্ভ : জানুয়ারি ২০১৯
প্রজেক্ট সমাপ্তি : এপ্রিল ২০২০
স্থপতি : কনক সাহা, সায়ন সুর, এ কে এম সালেহ আহমেদ অনিক
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার : সাইফুল ইসলাম, বাবু সিং, হ্লাতুন সিং
ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার : বাবু সিং, হ্লাতুন সিং
ফটোগ্রাফার : এ কে এম সালেহ আহমেদ অনিক, কনক সাহা
প্রকল্প তথ্য স্থপতি এ কে এম সালেহ আহমেদ অনিক, কনক সাহা থেকে সংগৃহীত
“বিদ্যানন্দ সাম্প্রতি অনাথ স্কুল” বাঁশ দিয়ে নির্মিত একটি নতুন স্কুল । স্কুলটি একটি পুকুর এবং খামার জমি দ্বারা আবদ্ধ ।স্কুলের ডিজাইনটি বিশ্বব্যাপী টেকসই বিল্ডিংয়ের জন্য একটি নতুন এবং আশাব্যঞ্জক মডেল হিসেবে সরবরাহ করে । প্রকল্পের লক্ষ্য, স্থানীয় বিল্ডিং কৌশলগুলি উন্নত করা, স্থানীয় উপাদান এবং শ্রমকে কাজে লাগিয়ে টেকসইকরণে অবদান রাখা এবং অঞ্চল পরিচয় জোরদার করা। প্রকল্পে যে প্রাকৃতিক নির্মাণ উপকরণগুলি ব্যবহার করা হয়েছে তা স্বাস্থ্য, পরিবেশগত-সাবলীল আর্কিটেকচারের প্রয়োজন সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সচেতনতাকে সম্বোধন করে এবং এগুলো শক্তি এবং ব্যয়-দক্ষতার পাশাপাশি পুরোপুরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য। |
কক্সবাজারের রামু উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঈদ্গড়ে ‘সম্প্রীতি অনাথালয়’ নামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের একটি ছোট প্রতিষ্ঠান আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা প্রায় ১০০ এর উপরে ছোট ছোট দরিদ্র আদিবাসী বাচ্চাদের থাকা খাওয়া আর পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়ে চলছে কয়েক বছর। সময়ের সাথে বাচ্চাগুলো বড় হতে থাকায়, এতদিন পর্যন্ত যে টানা লম্বা একমাত্র ঘরে ভাগ ভাগ করে থাকা খাওয়া পড়াশোনা চলছিল, তার আর সুবিধা হচ্ছিল না; বিদ্যানন্দ কর্তৃপক্ষ তাই অনাথালয়ের জমির কিছু পাশেই আরেকটি জমি কেনে আলাদা স্কুলঘর বানানোর উদ্দেশ্যে, জমিটার একপাশে গ্রাম্য রাস্তা আর বাকি তিনদিকে ফসলি জমি। পুকুর কাটার ফলে মূল জমির পরিমাণ এমনিতেই কমে এসেছিল, এজন্য একটি প্যাভিলিয়ন ধরনের টানা ঘর বানানোর সিদ্ধান্ত নেন স্থপতিবৃন্দ, যেটা পুকুরের লম্বা অংশের বরাবর অনেকটা মাচার মত থাকবে। ৯৪’X ৪২’ এর টানা ঘরটার মেঝে কাঠের হওয়ায় সেটাকে আর্দ্রতাজনিত ক্ষয় থেকে বাঁচাতে মাটির উপরে ভাসিয়ে রাখা হয় পাহাড়িদের সাধারণ বাড়ির মতই। এই টানা আয়তাকার প্ল্যানের ভেতরে মাল্টিপারপাজ ক্লাসরুমগুলি এমনভাবে সাজানো হয় যাতে সামনে ও পেছনে দুটি টানা বারান্দা ধরনের জায়গা তৈরি হয়, যেখানে বাচ্চারা খেলতে পারবে। স্কুলটির সামনে এসেম্বলি বা খেলার জন্য একটি ছোট মাঠের জায়গার ব্যবস্থাও করা হয়েছে । |
স্কুলঘর নির্মাণ কাজের শুরুতে মাছ চাষ আর শাপলা চাষের জন্য জমির তিনপাশে পুকুর কেটে ফসলি জমি থেকে স্কুলের জমিকে আলাদা করা হয়েছে। যেহেতু সাইটে যথেষ্ট কাঠ আর বাঁশ পাওয়া যায়,এজন্য বিদ্যানন্দ কর্তৃপক্ষ এলাকায় পাওয়া বাঁশ কাঠ দিয়ে পুকুর ফসল ঘেরা জমিতে একটা দৃষ্টিনন্দন স্কুলঘর চেয়েছিল । মূল উপকরণ ছিল বাঁশ আর কাঠ, মূলত বাঁশের বিশালাকায় ট্রাস-কলাম স্ট্রাকচারের উপরেই স্কুলটি দাঁড়িয়ে আছে, উপরে-নিচে খোলা দেয়ালগুলিও বাঁশের। খোলা জমির মাঝে হওয়ায়, তীব্র গরম আর বৃষ্টিতে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্যেই যথাসম্ভব আলোবাতাস চলাচলের সুবিধা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এই বিশাল বাঁশের কাজের সময় এলাকার মিস্ত্রিদের নিয়েই কাজ করা হয়েছে, আপাত কঠিন ডিটেইল বা বাঁশের বাঁধনের সময় কখনো বই ঘেঁটে মডেল বানিয়ে স্থপতিবৃন্দ উপায় বের করেছেন আবার কখনো এলাকার মিস্ত্রিরা নিজেই বের করেছেন চমৎকার সমাধান। |
বাচ্চাদের জন্য যেকোনো কিছু বানানোই একইসাথে আনন্দের এবং ভয়ের। এই প্রজেক্টটা সেদিক থেকে নানাভাবে কঠিন ছিল, অনাথ আদিবাসী বাচ্চাদের জন্য একটা আনন্দের পড়াশোনার জায়গা তৈরি করাই শুধু না, স্কুলঘরটা যেন সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিবেশের সাথে যায় এবং সহজলভ্য উপকরণে আঞ্চলিক যে স্থাপত্যিক নির্মাণের ভাষা- সেটাকেও সম্মান করা ছিল জরুরী। কাজটা করতে গিয়ে এসবকিছু মাথায় রেখে একটা সহজ সাধারণ সুন্দর সমাধান দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন স্থপতিবৃন্দ । |
সম্পাদনা : স্থপতি নিশি সাইমুন ( বুয়েট থেকে স্নাত্বক) |