প্রকল্পের স্থান: ফরিদপুর, বাংলাদেশ আর্কিটেকচারাল কনসাল্টেন্ট: স্টুডিও মরফোজেনেসিস এরিয়া: ৭৫৬০ বর্গফুট প্রকল্পের সমাপ্তি: ২০২৩ প্রধান স্থপতি: স্থপতি সাইকা ইকবাল মেঘনা ডিজাইন টিমের সদস্য: স্থপতি শুভ্র শোভন চৌধুরী, স্থপতি তনিমা উদ্দিন, স্থপতি রাহাত ইবনা হাসান, স্থপতি ভূঁইয়া এ আর এম রিয়াদ স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার: মুর্তজা শাহরিয়ার আবির ফটোগ্রাফ: আসিফ সালমান |
শহুরে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের মাঝে একটি শান্তির আবাসস্থল এ প্রকল্পটি। ‘বাংলা’ বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন অধ্যাপক, একটি বাড়ির পরিকল্পনা করেছেন, যেখানে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে, নির্জনে সময় কাটাতে কাটাতে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিদেশ হতে আসা বার্ষিক সফরের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন । তার এই স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পারিবারিক সংযোগ, আবেগ এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলমান পারিবারিক বন্ধনের জন্য পরিকল্পিত একটি স্থান। ক্লায়েন্টের মূলত চাহিদা ছিল একটি প্রশস্ত বাগানের জায়গা, প্রাকৃতিক আলো-বাতাসে ভরপুর আভ্যন্তরীণ স্পেস, যা ঘরের ভেতর একটি ওয়েলকামিং আবহ তৈরি করে। |
|
সাইট কনটেক্সট: শেষের কবিতা বাসভবনটি কমলাপুর, ফরিদপুরে অবস্থিত। এটি ফরিদপুর স্টেডিয়াম হতে প্রায় ১ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। সাইটের পশ্চিম পার্শ্বে একটি ছোট জলাশয় রয়েছে। |
|
মাস্টারপ্ল্যান:
প্রকল্পের মূল প্রবেশপথে ঢোকার পর একটি সবুজ লন এবং একটি বড় পদ্ম পুকুর পরে। একটি উঁচু প্রবেশদ্বার হয়ে মূল বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করা হয়, যা ভল্টেড ছাদটি দ্বারা আবৃত। গ্রাউন্ড ফ্লোর হতে পেছনের বাগানে একটি একটানা ভিস্তা তৈরি করা হয়েছে, যা বিল্ডিংয়ের সামনের অংশ এবং পেছনের বাগানের একটি সুন্দর সংযোগ সৃষ্টি করে। পূর্ব এবং পশ্চিম কোর্ট দুটোয় ছিমছাম বহিরাঙ্গন তৈরি করা হয়েছে। নিচতলায় প্রশস্ত বসার জায়গা এবং উপরের ফ্লোরে অন্যান্য রুমগুলো রয়েছে। বাড়িটির কেন্দ্রস্থল, পারিবারিক বসার জায়গাটি একটি খোলসের মতো কংক্রিট ভল্ট দিয়ে ঢাকা রয়েছে। ভল্টটির ওপরের সার্ফেসটি ভিন্ন ধরণের টেক্সচারের কাঠের ফর্মওয়ার্ক দিয়ে তৈরি। এই সুবিশাল কাঠামোটি ওপর তলার শয়নকক্ষগুলোকেও ঢেকে রেখেছে। শয়নকক্ষগুলো ভল্টেড স্ট্রাকচারের চারপাশে ডিজাইন করা হয়েছে। কক্ষগুলো ৩টি দিকে খোলা এবং প্রাকৃতিক আল-বাতাসে ভরপুর। প্রতিটি কক্ষে উত্তর-দক্ষিণ দিক হতে বাতাস প্রবাহিত হয়। |
ফার্স্ট ফ্লোর প্ল্যান |
রুফ প্ল্যান |
|
এ প্রকল্পে, আলাদা ফর্মগুলো ব্রীজ এবং ভয়েডের সাথে যুক্ত, যেগুলো আবার একত্রে কেন্দ্রস্থলের উঁচু ভল্টটির সাথে সংযুক্ত। ভল্টেড ছাদটি ভেতরে একটি সেমি-আউটডোর স্পেস তৈরি করে। সিঁড়ি এবং ভল্টেড ছাদ বরাবর কাস্টমাইজড জানালা ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ স্পেসের ভেতরে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবাহিত হয়। বিস্তৃত মূল সিঁড়িটি কম রাইজার দিয়ে তৈরি, যাতে করে ক্লায়েন্টদের চলাচলে সুবিধা হয়। সর্পিলাকৃতির সিঁড়িটি একটি মাল্টি-লেভেল কাঠের লাইব্রেরি এবং স্টোরেজের চারপাশে ডিজাইন করা হয়েছে। পশ্চিম দিকের কোর্টটি ঘিরে রয়েছে ইটের জালি দেয়াল, যার মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে সিঁড়ির জায়গাটিতে একটি সুন্দর আবহ সৃষ্টি করে। |
|
নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপাদান:
বাড়িটি এক্সপোজড কলাম-বিম কাঠামো দিয়ে তৈরি, যেখানে ইটের দেয়াল এবং কিছু জায়গায় কংক্রিটের উপস্থিতি রয়েছে। দক্ষ রাজমিস্ত্রিরা ডিজাইন অনুযায়ী বাড়িটির বিভিন্ন জায়গায় ইটের ‘জালি স্ক্রিন’ ব্যবহার করেছেন। পোড়ামাটির লাল ইট, অ্যাস-কাস্ট কংক্রিট, কাঠের স্ক্রিন এবং ধাতব সিঁড়ির মতো উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে এ প্রকল্পে। এসকল উপকরণের ব্যবহার, বাড়িটিকে একটি সাধারণ, ছিমছাম এবং গ্রামীণ চেহারা দেয়। |
শেষের কবিতা বাসভবনটি আধুনিক নকশা এবং ঐতিহ্যবাহী উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি একটি মনোমুগ্ধকর প্রকল্প, যা এতে বসবাসকারি সদস্যদের শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়। |
প্রতিবেদক: স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ |