জিন্দা পার্ক বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি বিনোদন পার্ক।পার্কটি নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সকলের কাছে সমাদৃত।‘স্থাপত্য ও নির্মাণ’-এ পার্কটির মাস্টারপ্ল্যান এবং নির্মিত ভবনগুলো সম্বন্ধে আলোচনা করা হবে।
শহুরে জীবনের কোলাহল থেকে একটু দূরে যারা সময় কাটাতে চান, রূপগঞ্জ এলাকার ‘জিন্দা পার্ক’ তাদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। এই পার্কটি রাজধানী ঢাকার কাছে, পূর্বাচলে অবস্থিত যা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একটি সরকারী প্রকল্প। সুপরিকল্পিত উদ্যান, অসাধারণ স্থাপত্য এবং আশেপাশের বিভিন্ন গাছপালা সহ জিন্দা পার্কে দর্শনার্থীদের জন্য প্রশান্তিময় সমস্ত উপাদান রয়েছে। সামাজিক সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুন্দর পরিবেশ কিভাবে তৈরি করা যায়, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই জিন্দা পার্ক। সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে অর্জিত এই ধরনের কৃতিত্বের উদাহরণ খুব একটা দেখা যায়না। |
পাঁচজন স্বপ্নদর্শীর উদ্যোগের ফলাফল এই ‘জিন্দা পার্ক’। তবারক হোসেন কুসুম, সেই পাঁচ বন্ধুর একজন। তিনি এমন একটা গ্রামীন পরিবেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানুষের সামাজিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা থাকবে। এই পাঁচ বন্ধু পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী একটি সমাজ গড়ার ভিত্তি তৈরি করতে চেয়েছেন যেখানে শিশুরা প্রকৃতির সাথে থেকে খেলার মাঠ, স্কুল, লাইব্রেরি এবং বিনোদনসহ অন্যান্য সুবিধা পাবে। |
ছবি: জিন্দা পার্কের ল্যান্ডস্কেপ |
রাজউক প্রণীত ‘পূর্বাচল পরিকল্পনা’য় এই ১৫০ একর জমি জলাশয় ও উদ্যান হিসেবে চিহ্নিত করা আছে এবং এই উদ্যানের জমি সরকারী মালিকানাধীন। কিন্তু জিন্দা পার্কের উন্নয়ন হয়েছে স্থানীয় গ্রামীন যুবকদের সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে। তবারক হোসেন কুসুমের নেতৃত্বে ‘অগ্রপথিক পল্লী সমিতি’ এই দায়িত্ব গ্রহণ করে এখন পর্যন্ত সফলভাবে পরিচালনা করে চলেছেন। এই পল্লী সমিতি নিজেরা চাঁদা দিয়ে প্রাথমিক ফান্ড সংগ্রহ করেছেন, তাদের এমন মহৎ কর্মে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই পরবর্তীকালে অর্থ ও অন্যান্য সহযোগীতা করেছেন। প্রাথমিক উদ্যোগে গাছ-গাছালী লাগানো এবং তাদের বাঁচিয়ে রাখার কাজটি তারা নিজেরাই করেছেন।পরবর্তীতে চারপাশের স্থানীয় জনগণের চাহিদানুযায়ী তারা স্কুল, মসজিদ, খেলার মাঠ ও লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এ পর্যায়ে তাদের সাথে যুক্ত হন স্থপতি সাইদুল হাসান রানা। |
স্থপতি পরিচিতি: স্থপতি সায়েদুল হাসান রানা: স্থপতি সায়েদুল হাসান রানা নিজস্ব স্টুডিও, ‘আর্কিটেক্টস ডিজাইন স্টুডিও’-এর প্রধান স্থপতি হিসেবে জুলাই, ২০০৫ থেকে কাজ করে আসছেন। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয় (বুয়েট) হতে স্নাতক শেষ করেন।এরপর তিনি বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুরে বেশ কয়েকটি পুনর্গঠন প্রকল্পে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করেছেন। পুনর্গঠন প্রকল্পগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশের প্রতি সংবেদনশীলতা, কম খরচ এবং নাগরিক শহুরে নকশা তৈরি করা। হাসপাতাল, স্কুল, লাইব্রেরির মতো স্থাপন করা হয়েছে, অডিটোরিয়াম, ধর্মীয় এবং দাতব্য সংস্থার মতো স্থাপনাগুলোকে শৈল্পিক সৃজনশীলতায় নকশা করা, সাইট এবং ল্যান্ডস্কেপের সংযোগ ঘটিয়ে নতুন নকশা প্রস্তাবিত করা স্থপতির আগ্রহের জায়গা। |
ছবি: স্থপতি সায়েদুল হাসান রানা |
জিন্দা পার্কের একপাশে পূর্বাচল নিউ টাউন অবস্থিত এবং অন্যপাশে স্থানীয় গ্রামগুলো অবস্থিত। এ পার্কে একটি চমৎকার লেক রয়েছে, যা ১৫০ একর জমি জুড়ে বিস্তৃত। হ্রদে রাজহাঁস এবং হাঁসের সাঁতার কাটা একটি মনোরম দৃশ্য তৈরি করে। পার্কটিতে ২৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির ২৫,০০০ এরও বেশি গাছ এবং গাছপালা রয়েছে। জিন্দা পার্কের সাজানো-গোছানো দৃশ্য দেখে বুঝতে অসুবিধা হবেনা যে এ কাজের পেছনে কিছু সংবেদনশীল মানুষের চিন্তা ও নিরন্তর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা রয়েছে। স্থপতি গাছ-গাছালী ঘেরা পরিবেশ রচনায় যথেষ্ঠই অভিজ্ঞ। এই ধারায় তার ডিজাইন করা আরও কিছু প্রকল্প রয়েছে। |
ছবি: মাস্টারপ্ল্যান |
এই উদ্যান প্রকল্পটি পরিকল্পনা, ডিজাইন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনের চাহিদাক্রম অনুসরণ করা হয়েছে। জিন্দা পার্কের ৩টি দিক কৃত্রিম লেক দ্বারা পরিবেষ্টিত। পুরো এলাকা জুড়ে ৫টি কৃত্রিম লেক রয়েছে, যার মধ্যে ২টি মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়। জিন্দা পার্কের প্রবেশপথে একটি পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে করে কোন প্রকার যানবাহন, মূল কমপ্লেক্সের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে। জিন্দা পার্কের প্রবেশপথে একটি ছোট উদ্যানের মত জায়গা রয়েছে (এন্ট্রেন্স কোর্ট) । কোর্টের চারপাশে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছোট দুটি জলাধার রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী (মাছ, কচ্ছপ, ব্যাঙ্গাচি) রয়েছে। পার্কে প্রবেশের শুরুতে একটি উপহার সামগ্রীর দোকান (স্যুভেনির শপ) রয়েছে এবং এর পাশে একটি অফিস ভবন নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। |
ছবি: স্থপতি সায়েদুল হাসান রানার এন্ট্রেন্স কোর্টইয়ার্ড-এর স্কেচ |
ছবি: এন্ট্রেন্স কোর্টইয়ার্ড-এর প্ল্যান |
ছবি: এন্ট্রেন্স কোর্টইয়ার্ড-এর সামনের দিকের এলিভেশন |
ছবি: এন্ট্রেন্স কোর্টইয়ার্ড |
ছবি: এন্ট্রেন্স কোর্টইয়ার্ড |
প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেটা পরবর্তী ধাপে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে, তার স্থান নির্বাচন করা হয়েছে পার্কের প্রবেশমুখের নিকটবর্তী স্থানে, যাতে দৈনন্দিন আসা-যাওয়ার জন্য সমগ্র পার্কটি ঘুরতে কেউ বাধ্য না হয়। বিদ্যালয়ের সামনে একটি বড় খেলার মাঠ রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে সামনে হাঁটার রাস্তা বরাবর নতুন হাইস্কুল এবং কলেজ ভবনটি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। হাইস্কুল ভবনটির উল্টোপাশে কিছু কটেজ রয়েছে। পার্কের প্রবেশপথ হতে সোজা রাস্তার দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরবর্তী ভবনটি হলো মসজিদ। মসজিদ কমপ্লেক্সের সামনে রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া ভবন, এবং এর উল্টোপাশে একটি ছোট বাগান রয়েছে। ক্যাফেটেরিয়া হতে দক্ষিণদিকে লাইব্রেরি ভবনটি রয়েছে। জিন্দা পার্কের ভেতরদিকে উত্তরপাশে কুসুম রেসিডেন্স নির্মাণ করা হয়েছে।পার্কের ভেতর দুটি বাঁশের সাঁকো এবং কিছু বসার জায়গা রয়েছে। জিন্দা পার্কের নিম্নলিখিত ভবনগুলো বিস্তারিতভাবে 'স্থাপত্য ও নির্মাণ'-এ ক্রমান্বয়ে তুলে ধরা হবে : ১. প্রাথমিক বিদ্যালয় ২. লাইব্রেরি ৩. মসজিদ ৪. রেস্তোরা ৫. কুসুম বাংলো |
'স্থাপত্য ও নির্মাণ' এবং 'নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর' - এর দলের সদস্যরা |
ছবি: দলের সদস্যরা |
সম্পাদনায়: স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ |