-
প্রকল্পের স্থান: উত্তরা, সেক্টর-১৭জে, ঢাকা শিক্ষার্থীর নাম: মিথিলা ফারজানা প্রকল্পের বছর: ২০২৪ স্টুডিও সুপারভাইজার: স্থপতি জিয়াউল ইসলাম, স্থপতি জারিন হাবিবা ইসলাম বিভাগীয় প্রধান: ড.নবনীতা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়: ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক |
বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ৩৫% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আমাদের প্রেক্ষাপটে শহুরা দরিদ্র বলতে সেই জনগোষ্ঠীকে বুঝায়, যারা তাদের সীমিত আয়ের মধ্যে গড় শহুরে জীবনধারা বজায় রাখতে হিমশিম খেয়ে যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা উন্নত জীবনযাত্রা, ভালো আয়, উন্নত শিক্ষার আশায় গ্রাম থেকে শহরে আসেন, তবে কেউ কেউ আবার প্রাকৃতিক দূর্যোগের শরণার্থী। এই জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বস্তিতে বসবাস করে থাকেন। তাই ঢাকার জনসংখ্যার একটি বড় অংশই এই বস্তিবাসীরা। |
ছবি: শহুরে দরিদ্র |
ছবি: ব্যবহারকারি গোষ্ঠী |
ছবি: ব্যবহারকারি গোষ্ঠী |
অভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান সংকীর্ণ জীবনযাপনের উদাহরণ: মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এর মতোই একই রকম পরিস্থিতি-ধারাভি এবং ভারতের মুম্বাইয়ের চল,তাদের অর্থনৈতিক প্রবাহ এবং সম্প্রদায়কে অদ্যোপান্তে বোঝার জন্য উপযুক্ত উদাহরণ। জেনেভা ক্যাম্পে, তাদের অর্থনীতির বেশিরভাগ অংশ তাদের বিল্ডিং সংলগ্ন দোকান থেকে আসে। নারী-পুরুষ উভয়েই এ ধরনের ব্যবসায় অংশ নেয় এবং সেখান থেকে তাদের নিয়মিত জীবিকা নির্বাহ করে। কুমোর, বাবুর্চি, দর্জি, কসাই, খুচরা বিক্রেতা ইত্যাদি এই সম্প্রদায়ের পেশা। শিল্পোদ্যোগের প্রাচুর্য এই অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি অনন্য চরিত্র। পুনঃনির্মাণের বিবেচনায় বাসিন্দারা বড় কক্ষ চাইলেও একই অবস্থানে থাকতে চান ,তাতে নিকটবর্তী অর্থনৈতিক বেল্ট থেকে উপার্জন নিশ্চিত হয়। ধারাভিতে অনেকটা একই রকম উপার্জনের ধরণ দেখা যায়,সেখানে তারা বস্তির সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম জায়গাটি ব্যবহার করে, কখনও এটি বাড়ির ভিতরে, বারান্দায়, করিডোরেও এমনকি তাদের বাড়ির ভিতরে ক্ষুদ্রতম উঠোনে, তারা এটিকে বিভিন্ন পণ্যের উত্পাদন স্থান হিসাবে ব্যবহার করে যা পরে নিকটবর্তী দোকানগুলিতে কখনও কখনও বস্তির ভিতরে বিক্রি করা হয়। মুম্বাইয়ের চলগুলির দিকে তাকালে দেখা যায় এগুলো বাসিন্দাদের কর্মস্থলের আশপাশে তৈরি হত, যাতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর এবং সাশ্রয়ী হয়। কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণ, করিডোরগুলো নারী উদ্যোক্তাদের কর্মস্থল এবং সক্রিয় কমিউনিটি হাব হিসেবে ব্যবহৃত হত। সংক্ষেপে, বাড়ির কাছাকাছি কর্মক্ষেত্র এই সম্প্রদায়ের জন্য জীবনের একটি সহজ উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক শৃঙ্খলকে সমর্থন করে। |
ছবি: কেস স্টাডি |
ছবি: সাশ্রয়ী আবাসন |
ছবি: বিদ্যমান সাশ্রয়ী আবাসন |
ধারণা: আমাদের প্রেক্ষাপটে নিম্ন আয়ের গোষ্ঠীর জীবনধারা অধ্যয়নের মাধ্যমে এই প্রকল্পের ধারণা গড়ে উঠেছে। এই সুবিধাবঞ্চিত নিম্নআয়ের গোষ্ঠী কোন না কোনভাবে অভিবাসনের সময় থেকে দীর্ঘকাল ধরে তাদের জীবনযাপনের বিশেষ উপায় খুঁজে পেয়েছে। প্রধান ফোকাস ছিল তাদের অভ্যস্ত জীবনযাপনের পদ্ধতি পরিবর্তন করা নয়, বরং তাদের জীবনযাত্রাকে আরও উন্নত করা। তারা বসবাস করতে অভ্যস্ত নন- এমন অবস্থা এবং জীবনধারা প্রদান করা হলে তা অন্যায্য হবে। বস্তি থেকে শহুরে বাসস্থানে রূপান্তরটি স্বাভাবিক এবং সহজ হওয়া উচিত, অন্যথায় তাদের জীবনযাত্রার উন্নতির সম্পূর্ণ ধারণা ব্যর্থ হতে পারে। শুরু থেকেই এই হাউজিং ডিজাইন করার পুরো ধারণা ছিল এটিকে টেকসই করা, সুবিধাবঞ্চিতদের আয়ের জন্য সুযোগ তৈরি করা যাতে তারা পরবর্তীতে স্বাধীনভাবে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে। |
ছবি: ধারণাগত অংকন |
ছবি: ধারণাগত অংকন |
স্থানের গুনগত মান: যেই স্থানগুলোর বহুমুখী ব্যবহার আছে, সেগুলো নিম্ন আয়ের ব্যবহারকারীদের জন্য বেশি উপযুক্ত। একাধিক কাজে ব্যবহারযোগ্য স্থানগুলো বেশি সাশ্রয়ী এবং উপযোগী হয়। উদাহরণস্বরুপ, একটি বাড়ির বসার ঘরের বহুমুখী ব্যবহার থাকতে পারে- এটি কাজের জায়গা হতে পারে, ঘুমানোর জায়গা হতে পারে, এমনি রান্নাঘরের বর্ধিত অংশ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। বারান্দাকে আবার অতিরিক্ত স্টোরেজ বা বাগান হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। করিডোর কেবলমাত্র চলাচলের কাজেই নয় বরং নারীদের আলাপচারিতা অথবা শিশুদের খেলাধুলার জন্য নিরাপদ একটি স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। প্লাজা, খেলারমাঠ, আশপাশের রাস্তাঘাট, নিকটবর্তী জলাশয়, চত্বর- এর মত বহিরঙ্গনের স্থানগুলোর বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। রাস্তাঘাটগুলো ইকোনোমিক বেল্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, জলাশয়কে শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে কমিউনিটির জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়। খোলা প্রাঙ্গণ, চত্বর, খেলারমাঠগুলোকে সাপ্তাহিক মেলা, কাচাবাজার হিসেবে ব্যবহার করা হলে এগুলো কেন্দ্রীয় কমিউনিটি হাব হিসেবে কাজ করবে যা পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করবে। |
প্রোগ্রাম: আবাসন সুবিধার পাশাপাশি অন্যান্য সুসজ্জিত কর্মসূচি ডিজাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামগুলি কমিউনিটিকে যথাযথভাবে সেবা দান করবে। আশপাশের দোকানপাট, কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার আবাসনের অন্তর্ভুক্ত। এখানে কেন্দ্রীভূত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। দিনের সময়ে এটি শিশুদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়, পরবর্তীতে এটি কমিউনিটির কার্যক্রমের একটি বর্ধিত অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয় যেমন- মহিলাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের কোর্সের সুবিধা প্রদান করা তাছাড়াও, লাইব্রেরি হিসেবে এবং ডেকেয়ার সেন্টার হিসেবে। |
|
সাইট: এটি শহুরে দরিদ্রদের আবাসিক বসতির জন্য রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) প্রস্তাবিত একটি সাইট। এর অবস্থান উত্তরা, সেক্টর ১৭জে, ঢাকা। উত্তরা ৩য় পর্বের ডিজাইনের সীমানা সংলগ্ন সাইটের আয়তন ১০.৯২ একর। ২০ বছর আগেও এটি বন্যাপ্রবণ এলাকা ছিল। সাইটের রূপরেখাটি অনিয়মিত এবং ছোট আকারের জলাশয় দ্বারা বেষ্টিত। সাইটের বৃহত্তম সম্মুখভাগটি পশ্চিমমুখী এবং সাইটের সংলগ্ন দুটি প্রধান রাস্তা রয়েছে। এই সাইটের চ্যালেঞ্জগুলি এবং একই সাথে সুবিধাগুলি হল এটি উত্তরা কেন্দ্রীয় এমআরটি স্টেশন এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত যা আশেপাশের সাথে মিশে এই প্রকল্পের স্কেল এবং ব্যপকতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। |
ছবি: ল্যান্ডইউস ম্যাপ |
ছবি: সড়ক সংযোগ, আগে এবং পরে |
ছবি: সূর্যের পথ এবং সাইট অক্ষচিত্র |
জোনিং: জোনিং এর সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ৩ টি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছিল: পাবলিক এবং প্রাইভেট ওরিয়েন্টেশন: ডিজাইনের আবাসন অংশটি প্রাইভেট অঞ্চল হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। বাণিজ্যিক ও সামাজিক কাঠামো তুলনামূলকভাবে প্রকাশ্য। প্রাইভেট জোনটি বিভক্ত, কিন্তু একই সাথে একটি পাবলিক প্লাজা দ্বারা সংযুক্ত যার ভিতরে স্কুল কমপ্লেক্স, মসজিদ, ক্লিনিক এবং একটি খেলার মাঠের মতো আরও অন্যান্য সামাজিক কাঠামো রয়েছে। |
ছবি: জোনিং |
|
সংলগ্ন সংযোগ সড়ক: প্রকল্পের বৃহত্তম সম্মুখভাগটি পশ্চিমমুখী, পশ্চিমে সাইটের সাথে সংযুক্ত একটি রৈখিক ৬০ ফুট রাস্তা রয়েছে। সংলগ্ন রাস্তাটিকে আয়ের উদ্দেশ্যে একটি ইকোনোমিক বেল্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ ব্যাচেলর দিনের বেলা বাইরে থাকার সম্ভাবনা বিবেচনা করে বাণিজ্যিক বেল্টের উপরে ব্যাচেলর ক্লাস্টার রাখা হয়েছে। সাইটের রূপরেখা এবং পার্শ্ববর্তী জলাশয়: সেখানে সাইটের রূপরেখা অনিয়মিত। সীমানা সংলগ্ন ২টি জলাশয় রয়েছে। সেই জলাশয়গুলিকে সংযুক্ত করে সাইটের দিকে একীভূত করে একটি বৃহত জলাশয় তৈরি করা হয়েছে, যা আরও কার্যকর হবে এবং একই সাথে অন্য পাশের সাথে একটি বাফার তৈরি করবে। |
ছবি: মাস্টারপ্ল্যান |
ইউনিট টাইপোলজি এই প্রকল্পে তিন ধরনের ইউনিট রয়েছে। ফ্যামিলি ক্লাস্টারের জন্য দুই ধরনের ইউনিট, এক ধরনের ব্যাচেলর ক্লাস্টারের জন্য। ইউনিটের আকারগুলি ডিএপি (বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) অনুসারে এবং অনুরূপ প্রসঙ্গে ব্যবহারকারীর পছন্দের অগ্রাধিকার সংক্রান্ত কেস স্টাডি থেকে। ব্যাচেলর ইউনিট সবচেয়ে ছোট ২৩০ বর্গফুট, ভাগ করা ইউটিলিটিগুলির সাথে ফ্যামিলি ইউনিট ৩০০ বর্গফুট এবং প্রাইভেট ইউটিলিটিগুলির সাথে ফ্যামিলি ইউনিট ৪৫০ বর্গফুট আকারের। ড্যাপের মতে, ঘনত্ব প্রতি একর ২৫০ জন। এফএআর = ৪.৭৫ একর, সর্বোচ্চ এফএআর [ব্লক-ভিত্তিক উন্নয়নের জন্য] =৫.১৯, মোট আয়তন = ১০.৯২ একর সর্বোচ্চ নির্মিত এলাকা [টিবিএ]= ২,২৬০,৭৬৪ বর্গফুট বিএনবিসি ২০০৮ অনুসারে, এমজিসি = ৫০% |
ছবি: ইউনিট টাইপোলজি |
ছবি: ইউনিট ডিটেইল |
ছবি: ইউনিট টাইপোলজি |
ছবি: ক্লাস্টার গঠন |
ক্লাস্টার প্ল্যান: এই পুরো প্রকল্পে চার ধরনের ক্লাস্টার রয়েছে। এই ক্লাস্টারগুলি দুটি ধরণের ইউনিটের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়। ওয়াকওয়ে দ্বারা বেষ্টিত এই প্রতিটি ক্লাস্টার সহ একটি কেন্দ্রীয় উঠোন রয়েছে। |
ছবি: ছেদচিত্র |
সম্পাদনা: স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ |