-
প্রকল্পের স্থান: গোয়াইনঘাট উপজেলা, সিলেট, বাংলাদেশ শিক্ষার্থীর নাম: ফারহা মুন প্রকল্পের বছর: ২০২৩ সপারভাইজার: স্থপতি কৌশিক সাহা, বিভাগীয় প্রধানের নাম: স্থপতি ইফতেখার রহমান বিশ্ববিদ্যালয়: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় |
প্রকল্পের পটভূমি এবং সাইট: গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং আধুনিক শহুরে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি "আমার গ্রাম, আমার শহর" নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছেন। এই প্রকল্পের অধীনে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) আর্থ-সামাজিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য একটি মডেল রূপে পরিবেশনের লক্ষ্যে ১৫টি গ্রামকে পাইলট গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই থিসিস সমীক্ষাটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি ছোট, প্রত্যন্ত গ্রাম, ‘বগাইয়া’ গ্রামে পরিচালিত। পাথর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে পাথর ব্যবসা ও বিছনাকান্দি পর্যটনের সঙ্গে জড়িত এই গ্রামের বাসিন্দারা বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। |
ছবি: সাইট এনালাইসিস |
ছবি: বিদ্যমান দ্বন্দ |
ডিজাইন কনসেপ্ট/ প্রকল্পের উদ্দেশ্য: পর্যটন শিল্পকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সমন্বিত পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে বিকল্প অর্থনৈতিক উৎস তৈরি করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করাই এই থিসিসের লক্ষ্য। এই প্রকল্পটি একাধারে পর্যটকদের জন্য কমিউনিটি-বান্ধব ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এবং গ্রামের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এই প্রজেক্টের চ্যালেঞ্জ ছিল সম্প্রদায়-ভিত্তিক পর্যটনের জন্য একটি উপযুক্ত গ্রামীণ উন্নয়ন কৌশল খুঁজে বের করা এবং এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যাতে পর্যটনের কারণে স্থানীয় অধিবাসীদের পরিবেশগত বা অর্থনৈতিক কোন ক্ষতিসাধন না হয়, বরং পর্যটন শিল্পের মাধ্যমেই তাদের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি করে দেয়া, যা তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। |
ছবি: কৌশলগত ধারণা |
নকশা বিবেচনা: বগাইয়া গ্রামের উপর তৈরীকৃত এই গবেষণাটি পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগত সংঘাত তুলে ধরে। এ সকল সংঘাত সমাধানের জন্য প্রয়োজন গ্রামীণ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে পর্যটন সম্পৃক্ত কিছু বিশেষ বিবেচনা ও পদ্ধতি। গবেষণালব্ধ ফলাফল এই সকল সংঘাতকে মোকাবেলা করতে এবং গ্রামের অধিবাসীদের জীবনযাত্রার সাথে পর্যটনকে সম্পৃক্ত করে সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। |
ছবি: মাস্টারপ্ল্যান |
ছবি: প্রস্তাবিত কাঠামো |
নকশা বাস্তবায়ন: প্রথমত, সাংস্কৃতিক এবং নান্দনিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য অঞ্চল চিহ্নিত করা হয় এবং গ্রামের মানুষদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আলাদা একটি পর্যটন পথ ডিজাইন করা হয়। প্রস্তাবিত মহাপরিকল্পনায় তিনটি স্থাপতিক ইন্টারভেনশন এলাকা প্রস্তাব করা হয়, যার মধ্যে শিক্ষাগত হাব অঞ্চলে গ্রামবাসীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি খাসজমি এবং হায়দারপাড় নোডে পর্যটন-ভিত্তিক ইন্টারভেনশন অঞ্চল রয়েছে। এছাড়াও বিছনাকান্দি পর্যটন এলাকায় প্রাকৃতিক পর্যটনের জন্য একটি পরিবেশগত সংরক্ষণাগার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত শুষ্ক মৌসুমের পথটি সকল ইন্টারভেনশন অঞ্চলকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে পর্যটকদেরকে একটি সুসংগঠিত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। |
ছবি: ডিজাইন টুলস |
ছবি: পর্যটকদের সুবিধা কেন্দ্র |
নকশার প্রথম ইন্টারভেনশন অঞ্চলে, পর্যটকদের পরিবহন ও তথ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য একটি পর্যটন তথ্য কেন্দ্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে দর্শনার্থীরা টিকিট কিনতে এবং পরিবেশ বান্ধব যানবাহন বা নৌকা ব্যবহার করতে পারবেন। দর্শনার্থীদের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা বাড়াতে মানচিত্র, পুস্তিকা ও স্মারকের মতো পরিষেবাও এই কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হবে। |
ছবি: প্রশিক্ষণ এবং উৎপাদন কেন্দ্র |
দ্বিতীয় ইন্টারভেনশন অঞ্চলটি পর্যটন সুবিধা প্রদান করবে, এখানে স্থানীয় পণ্য এবং ফুড-কোর্ট সম্বলিত একটি বাজারের প্রস্তাব করা হয়েছে যার মাধ্যমে স্থানীয় অধিবাসী এবং দর্শনার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি হবে। এছাড়াও স্থানীয় সংস্কৃতি ও মণিপুরী ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের আয়োজন করার জন্যে এখানে একটি অ্যাম্ফিথিয়েটার বা মুক্তাঙ্গনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জলাশয় বরাবর ল্যান্ডস্কেপ হতে মেঘালয় ও বিছনাকান্দির চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যাবে, যেখানে হাঁটার পথ এবং বিশ্রামের জন্য পিকনিক এলাকা রয়েছে। নকশায় মেঘালয়ের মনোরম দৃশ্যের জন্য পর্যবেক্ষণ ডেক এবং ভিউপয়েন্টেরও প্রস্তাবনা রয়েছে। তৃতীয় অঞ্চলটিতে গ্রামবাসীদের দক্ষতা বিকাশ এবং তাদের হাতে বোনা মণিপুরি পণ্য প্রদর্শনের জন্য একটি প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন কেন্দ্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। উৎপাদন কেন্দ্রের কাছাকাছি একটি শিশুযত্ন কেন্দ্রের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে কর্মীদের শিশুদের জন্য চমৎকার ও নিরাপদ পরিবেশের নিশ্চয়তা থাকবে। এই উদ্যোগটি মণিপুরি পণ্যের প্রচার ও বিক্রয় বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকেও সমর্থন করবে এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও আর্থিক স্বাধীনতার সুযোগ প্রদান করার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে। |
ছবি: এরিয়া ১ - পর্যটকদের তথ্য কেন্দ্র |
ছবি: এরিয়া ২ - পর্যটকদের সুবিধা কেন্দ্র |
ছবি: এরিয়া ৩ - প্রশিক্ষণ এবং উৎপাদন কেন্দ্র |
ছবি: ছেদচিত্র AA' |
ছবি: ছেদচিত্র BB' |
নির্মাণ সামগ্রী: প্রকল্পের প্রস্তাবিত ভবনগুলোর স্থাপত্যরীতি মণিপুরী ঐতিহ্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতির মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি করে। প্রকল্পটিতে স্থানীয় ও টেকসই উপকরণ যেমন পাথর, বাঁশ, স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য ইট এবং অন্যান্য হালকা উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনের প্লিন্থ তৈরিতে ব্যবহৃত হবে বালি ও মাটি এবং এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে উপরের স্তর হিসাবে ব্যবহৃত হবে ১০% সিমেন্টের মিশ্রণ। বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য সিমেন্ট ও পাথরের মিশ্রণে তৈরি সেমি-পেইভ টাইলস ব্যবহৃত হবে। নকশায় নান্দনিকতা যুক্ত করার পাশাপাশি এই টাইলসগুলো স্থাপত্য এবং আশেপাশের প্রাকৃতিক এলাকার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখবে, যা আশেপাশের পরিবেশের সাথে সংযোগকে আরো শক্তিশালী করবে। এই প্রজেক্টটি সিলেটের মণিপুরী এবং বাংলা ব্যাটন বাড়ির জালি ও বাঁশের কারুকাজ থেকে অনেকাংশেই অনুপ্রাণিত। নকশাটি মৌলিক ডিজাইন নীতিগুলোকে প্রতিফলনের পাশাপাশি ঐতিহ্য এবং উদ্ভাবনের মিশ্রণে একটি টেকসই ভবিষ্যত তৈরি করতে সাহায্য করবে। |
ছবি: নির্মাণ সামগ্রীর ডিটেইল |
ছবি: পার্সপেক্টিভ ১ - পর্যটকদের সুবিধা কেন্দ্র |
ছবি: পার্সপেক্টিভ ২ - পর্যটকদের সুবিধা কেন্দ্র |
ছবি: পার্সপেক্টিভ ৩ - পর্যটকদের সুবিধা কেন্দ্র |
ছবি: পার্সপেক্টিভ ৪ - প্রশিক্ষণ এবং উৎপাদন কেন্দ্র |
সম্পাদনা: স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ |