-
প্রকল্পের স্থান: নিউ মার্কেট রোড, খুলনা শিক্ষার্থীর নাম: কাজী ফাহিম শাহরিয়ার প্রকল্পের বছর: ২০২৩ ক্লায়েন্ট: খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) সাইট ক্ষেত্রফল: ৮.৩৭ একর গাইড শিক্ষকের নাম: জিয়াউল ইসলাম ও প্রণয় চৌধুরী স্টুডিও সুপারভাইজার: ডঃ নবনীতা ইসলাম বিভাগীয় প্রধান নাম: ডঃ নবনীতা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়: ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক |
খুলনা নিউ মার্কেট সাইট, ব্যস্ততা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে। ‘কেডিএ’ এই ঐতিহ্যবাহী মার্কেটটিকে বড় মল দিয়ে প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে, যা এর অনন্য সংস্কৃতির জন্য একটি সম্ভাব্য হুমকি সৃষ্টি করে, ছোট খুচরা বিক্রেতাদের আর্থিক ক্ষতি সাধন করে এবং শহরের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যকে হ্রাস করে। |
ছবি: প্রকল্পের স্থান ১ |
ছবি: প্রকল্পের স্থান ২ |
এই থিসিস প্রস্তাবটিতে মার্কেটের ইতিহাসের সাথে জড়িত স্মৃতিগুলোকে আলিঙ্গন করার চেষ্টা করা হয়েছে। খুলনা শহরে কেডিএ নিউ মার্কেটের একটি বিশিষ্ট অবস্থান এবং সংযোগ রয়েছে। সাইটের মধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন সামাজিক স্থান আছে যা একীভূত করার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। মূলত, একটি প্রাণবন্ত, সর্বব্যাপী শহুরে স্থান প্রতিষ্ঠা করা যা একটি পুরোনো এবং নতুন মার্কেটকে গতিশীল করার সাথে সাথে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংযোগ ঘটাতে সক্ষম হবে, এমনটাই চেষ্টা করা হয়েছে এই থিসিস প্রকল্পে। |
ছবি: কনসেপ্ট |
নকশা বিবেচনা এবং প্রকল্প আলোচনা : একটি প্রসারিত, স্বল্প উচ্চতার মার্কেট বর্তমান ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের স্থানান্তর করার মোকাবিলায় চার ধাপের উন্নয়ন পর্যায়ে নকশা করা হয়েছে। সাইট এর আশে পাশের সবুজ স্থানগুলি নির্বিঘ্নে সাইটে প্রসারিত হয় এবং বিভিন্ন আকার ও ধরণের সবুজ উদ্যান এবং উঠান তৈরী করে। এই অঙ্গনগুলো বাইরের সাথে সংযোগ বাড়ায় এবং পুরানো সুরক্ষিত বাজার এবং নতুন, খোলা আধুনিক বাজারের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে। |
ছবি: নকশা বিবেচনা ১ |
শহুরে চত্বরগুলো আকর্ষণীয় হিসেবে তৈরী করা হয়েছে যাতে অফিসিয়াল মার্কেট কার্যক্রমের সাথে খুচরা বিক্রেতাদের বিভাজন নিশ্চিত হয়। একটি সুপরিকল্পিত রাস্তার নেটওয়ার্ক সাইটের চারপাশে মানুষের চলাচলকে প্রথম অগ্রাধিকার দেয় এবং মোটর চালিত এবং পায়ে চালিত উভয়ধরণের যানবাহনের জন্য নির্ধারিত বেসমেন্ট পার্কিং সহ ‘অন-স্ট্রিট’ এবং ‘অফ-স্ট্রিট’ পার্কিং এর সুবিধা দেয়। |
ছবি: নকশা বিবেচনা ২ |
ছবি: নকশা বিবেচনা ৩ |
পুরোনো মার্কেটের প্রধান আলোচ্যসূচি: •বাহিরের সুরক্ষা দেয়াল সংরক্ষণ: প্রাথমিক বিবেচনা হলো, কেডিএ নিউ মার্কেটের ঐতিহাসিক বাইরের দেয়াল, রঙ, প্রোগ্রাম, মর্ফোলজি এবং ছাদের অলঙ্করণ সংরক্ষণ করা। চারদিকে কেন্দ্রীয় প্রবেশদ্বারগুলো দ্বিগুণ উচ্চতা দিয়ে প্রশস্ত করা হয়েছে। জনবহুল এলাকায়, এসকেলেটর যোগ করা হয়েছে। বাইরের দেয়ালে বিজ্ঞাপন ভিত্তিক ডিজিটাল স্ক্রিন বা সাংস্কৃতিক ম্যুরাল দিয়ে সক্রিয় করা হয়েছে। •অভ্যন্তরীণ অংশের পুনরায় চিন্তা: অভ্যন্তরীণ অংশের মধ্যে বিদ্যমান দুর্বল কাঠামোগুলো নতুন কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। নিচতলায় কেন্দ্রীয় অংশে আকর্ষণীয় ব্র্যান্ডের দোকান, শোরুম এবং অস্থায়ী দোকান দিয়ে নতুন ভাবে চিন্তা করা হয়েছে। তাপের প্রভাব কমাতে আবশ্যিক অনাচ্ছাদিত স্থানে ‘সফট-পেভ’ ব্যাবহার করা হয়েছে। •অভ্যন্তরীণ ছাদের পুনরুজ্জীবন: ছাদের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য, এ/সি'র ডাক্ট আউটলেটগুলোকে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যার মাদ্ধমে অবসর বিনোদন ক্রিয়াকলাপের জন্য ছাদটি উন্মুক্ত হয়েছে এবং মার্কেটের বর্ধিতাংশের সাথে যুক্ত করা হয়েছে । |
ছবি: পুরনো এবং নতুন মার্কেটের প্রধান আলোচ্যসূচি |
নতুন মার্কেটের বর্ধিতাংশের প্রধান আলোচ্যসূচি: •উন্মুক্ততা এবং স্বচ্ছতার প্রাধান্য: পুরাতন নিউ মার্কেট ও কাঁচা বাজারের বর্তমান অন্তর্মুখী স্থাপত্য উপেক্ষা করে সুন্দর, খোলামেলা মার্কেট নকশা করা হয়েছে যার মাধ্যমে ভিতর ও বাহিরের সংযোগ বাড়ানো হয়েছে। এরকম খোলামেলা স্থাপত্য সংযোজক, বিস্তৃতময়, এবং প্রবেশযোগ্য একটি পরিবেশ তৈরী করে। •পার্কের সাথে প্রতিক্রিয়া: মার্কেটটি পাশের পার্কের সাথে সফলভাবে একটি চাক্ষুষ এবং শারীরিক সংযোগ তৈরি করে। সবুজ লতাপাতা এবং পুকুর আশেপাশের আবহাওয়া ঠান্ডা রাখে, পশু-পাখি-পোকাদের স্বাগত জানায় এবং একটা বিনোদনমূলক জায়গায় পরিণত করে মার্কেটিকে। •কেন্দ্রীয় অক্ষের রূপরেখা: নতুন মার্কেটটি একটি কেন্দ্রীয় অক্ষ বিন্যাস তৈরী করে, যার কাঠামো ধরে পার্কের দিকে মুখ করে মার্কেটের প্রসার ঘটে। •রাস্তার মতো পরিবেশ: পুরোনো মার্কেটের বিদ্যমান কেন্দ্রীয় উঠানের আঙ্গিনার সাথে সংযুক্ত একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ মার্কেট রাস্তা একটি ঐতিহ্যগত কেনাকাটার সংস্কৃতি তৈরি করে। যা ক্রেতা এবং খুচরা বিক্রেতাদের বেচা-কেনা, ঘোরাঘুরি করার জন্য একটি পরিচিত, আকর্ষণীয় এবং হাঁটার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। •সামাজিক সাক্ষাতের স্থানসমূহ: ছাদ, পার্ক, লম্বাকার কলাম সম্বলিত বারান্দা, উঠান, সিঁড়ি, বসার ধাপ এবং সেতু হচ্ছে সামাজিকীকরণের উৎকৃষ্ট স্থান। • পরিবর্তন যোগ্যতা: সুউচ্চ সিঁড়ি, বারান্দা এবং সতুর মতো বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় এবং বহুমুখী হাঁটাচলা এবং আড্ডার জায়গাগুলো মার্কেটকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করার সুযোগ তৈরী করে দেয়। |
প্রধান প্রোগ্রামগুলো: •মার্কেট – ইউনিট শপ, অ্যাঙ্কর শপ, ভেন্ডর কিয়স্ক, ফুড কোর্ট •কাঁচা বাজার – শুকনো বাজার, ভেজা বাজার |
ছবি: মাস্টারপ্ল্যান |
প্রোগ্রামের বিভাজন: • সহায়ক দোকানগুলো প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত এবং ব্র্যান্ডের বড় দোকানগুলো উপরের তলায় অবস্থিত৷ • সবচেয়ে উপরের তলায় মেকারস্পেস, ক্লাউড কিচেন, প্রশিক্ষণ এবং রেকর্ডিং বুথ সহ একটি যুব উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। • নিচ তলায় সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্যের দোকান রয়েছে। যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে কিংবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেকেন্ড-হ্যান্ড বা দিনের পুরোনো পণ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা থাকবে। • রেভিনিউ জেনারেশন ব্লকে সিনেমা, ইনডোর-গেমস, রেস্টিং পড, পার্টি স্পেস, অফিস, হোটেল, বেসমেন্ট, পুলিশ বুথ, ফায়ার ইমার্জেন্সি সার্ভিস, ব্যাঙ্ক, পার্কিং ইত্যাদির মতো একচেটিয়া ভাড়াযোগ্য সুবিধা রয়েছে। স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের জন্য কেনাকাটার সুযোগ তৈরী করে, বড় এবং ছোট খুচরা দোকানগুলোর একটি সমৃদ্ধ মিশ্রণকে উন্নীত করার জন্য প্রোগ্রামগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে। নিউ মার্কেট এবং কাঁচা বাজারের মধ্যে, একই সাথে আশেপাশের মানুষের বিশ্রাম এবং বিনোদনের জন্য যথেষ্ট সক্রিয় খোলা স্থান নকশা করা হয়েছে। |
ছবি: বেসমেন্ট ২ |
ছবি: বেসমেন্ট ১ |
ছবি: ফার্স্ট ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: সেকেন্ড ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: থার্ড ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: ফোর্থ ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: ছেদচিত্র ১ |
ছবি: ছেদচিত্র ২ |
ছবি: ছেদচিত্র ৩ |
জুরি বোর্ডের মন্তব্য: স্থপতি শোয়েব ভূইয়া: আমি শিক্ষার্থীর এই অবস্থানটি প্রশংসা করি যে সে নতুন মার্কেট ডিজাইন করার সময় পুরোনো মার্কেট এবং তার স্মৃতি গুলোকে সংরক্ষণ করেছে। স্থপতি প্রিন্স: সাইট বিশ্লেষণটি বেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে করা হয়েছে। পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপটের সাথে পুরোনো মার্কেটের স্মৃতি এবং বাইরের খোলসটি সংরক্ষিত করার সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয়। স্থপতি এন.আর. খান: প্রকল্পটি বেশ বড় এবং জটিল। অল্প সময়ে এই বড় প্রকল্পটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছেন শিক্ষার্থী। স্থপতি এহসান খান: সাইট বিশ্লেষণ, ইতিহাস এবং প্রোগ্রাম বিশ্লেষণের ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত পদ্ধতি প্রশংসনীয়। মার্কেট ডিজাইনটিতে শিক্ষার্থী একটি আরবান গুণমান এবং প্রাণবন্ত নাগরিক প্রতিক্রিয়া অর্জন করতে সফল হয়েছে। কিন্তু পথচারী এবং যানবাহন প্রবেশের পথগুলো ভিন্নভাবে ভেবে দেখা যেতে পারতো। স্থপতি জারিন হাবিবা ইসলাম: প্রকল্পটি একটি গভীর বিশ্লেষণের ফলাফল। এই বিশ্লেষণকে ধরে কন্সেপচুয়াল ধারণা গঠন, বিশদ অঙ্কন এবং |
সম্পাদনা: স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ |