প্রকল্পের নাম: আমান মসজিদ
অবস্থান: আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ
ক্লায়েন্ট: আমান গ্রুপ
নির্মাণাধীন এলাকা: ৭৭৮৮.৯৬ বর্গমিটার
প্রকল্পের সূচনা: ২০১৮
প্রকল্পের সমাপ্তি: ২০২০
খরচ: ৪,০০,০০,০০০ টাকা (আনুমানিক)
স্থাপত্য সংস্থার নাম: নকশাবিদ আর্কিটেক্টস
প্রধান স্থপতি: বায়েজিদ মাহবুব খন্দকার
সহযোগী স্থপতি: শিবাজি বাগ্চি,সামিউল আলম
স্ট্রাকচারাল ডিজাইন: মোনায়েম হোসেইন
ইন্টেরিয়র ডিজাইন: নকশাবিদ আর্কিটেক্টস
ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন: নকশাবিদ আর্কিটেক্টস
ফটোগ্রাফার: মারুফ রায়হান
[প্রকল্প তথ্য “নকশাবিদ আর্কিটেক্টস” থেকে সংগৃহীত]
পুরস্কার: ১. বিদেশী দেশগুলির প্রশংসা পুরস্কার প্রাপ্ত “৩১ তম জে. কে সিমেন্ট আর্কিটেক্ট অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ডস”। ২. বর্তমানে, “মসজিদ স্থাপত্যের জন্য আব্দুল্লাতিফ আল ফোজান পুরস্কার”-এ ৪র্থ পর্বের নির্বাচিত প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি হিসেবে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত। |
বাংলাদেশ একটি উষ্ণ আর্দ্র ব-দ্বীপ, যা বিভিন্ন সংস্কৃতি, আচার-আচরণ এবং ধর্মের মিলনভূমি। সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমির মানুষ তাদের নিজস্ব দর্শন, বিশ্বাস এবং জীবনযাপনের কৌশল নিয়ে এই ভূখণ্ডে এসে এখানকার বিদ্যমান সংস্কৃতি ও মানুষের সাথে মিশে গিয়েছে। যার ফলে এ দেশে একটি সমৃদ্ধশালী ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু জটিল এবং পরিবর্তনশীল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি এবং স্থায়ী দালানকোঠার মধ্যে এ অঞ্চলের জলবায়ুর প্রভাব বিশেষ লক্ষ্যণীয়। |
বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি কিছু সাধারণ কাঠামো এই অঞ্চলের স্থাপত্যের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। স্পেস এর বিন্যাসের ক্ষেত্রে দিনের আলো এবং বায়ু চলাচল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রখর রোদকে এড়ানোর জন্য বাড়ির সাথে বারান্দা বা অর্ধ-উন্মুক্ত স্পেস রাখা হত, যাতে বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্পেসটি কিছুটা আড়ালে থাকতে পারে। মসজিদ- প্রতিদিনের প্রার্থনার একটি পবিত্র স্থান। এটি একটি প্রার্থনার জায়গা, যার নিজস্ব পরিচয় এবং আধিপত্য রয়েছে। মসজিদ এমন একটি স্থান যা ব্যক্তিকে স্রষ্টার নিকটবর্তী হওয়ার অনুভূতি দিতে পারে। আমান মসজিদের নকশা প্রক্রিয়াটি শুরু হয় শান্ত ও নির্মল পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে একটি পিউর ফর্ম বেছে নেয়া হয় যা একক ফর্ম হিসেবে কাজ করে এবং একই সাথে এর সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করা হয়। |
ছবি : মাস্টারপ্ল্যান |
ছবি : গ্রাউন্ড ফ্লোর প্ল্যান |
একক জ্যামিতিক ফর্ম ভবনের একটি বিশুদ্ধ ও আনুষ্ঠানিক চেহারা প্রকাশ করে। ফর্মটির ভেতর মূল প্রার্থনা স্থানটির স্কেল এবং বৈশিষ্ট্য মসজিদের নকশায় একটি উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য বহন করে। মসজিদ স্থাপত্যের শুরু থেকেই গম্বুজ তৈরি করা হয়ে আসছে। এ প্রকল্পটির বিশাল ফর্মটি কাঠামোগতভাবে দুটি আড়াআড়িভাবে থাকা আর্চ দ্বারা অবলম্বন করে আছে। যদিও আর্চের ব্যবহার হয়ে আসছে প্রাক্-ইসলামিক যুগ হতে, তবে এ প্রকল্পে প্রার্থনা হলের ওপর আর্চ দুটিকে অদৃশ্য গম্বুজের মতো মনে হয়। একই সাথে আর্চ দুটি প্রার্থনা হলের ভেতর একটি প্রশস্ত জায়গা তৈরি করে দেয়। |
ছবি : প্ল্যান (+৫) |
ছবি : প্ল্যান (+১৫) |
ছবি : ডিজাইনের ধাপসমূহ |
ছবি : পশ্চিম দিকের এলিভেশন |
ছবি : উত্তর এবং দক্ষিণ দিকের এলিভেশন |
ছবি : পূর্ব দিকের এলিভেশন |
মসজিদ স্থাপত্যে প্রাকৃতিক আলো একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ প্রকল্পে প্রাকৃতিক আলো বিভিন্ন প্যাটার্নের মধ্য দিয়ে মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।সম্মুখভাগে ত্রিভুজাকার প্যাটার্নযুক্ত ওপেনিংগুলোর মাধ্যমে সূর্যের আলো প্রার্থনার জায়গাটিতে প্রবেশ করে পুরো পরিবেশকে আরও রহস্যময় করে তোলে। এই ত্রিভুজাকার প্যাটার্ন হল চিরাচরিত ফ্যাসাদ ডিটেইলিং যা খুব সহজে মসজিদটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। ভবনটির চারপাশে অর্ধ-উন্মুক্ত স্পেস রয়েছে। এ অর্ধ-উন্মুক্ত জায়গাটি বৃত্তাকার যা নির্দিষ্ট কোন দিকনির্দেশনা দেয় না। এ জায়গাটি মূল হলের অভ্যন্তরে আলো-বাতাসের প্রধান উৎস। স্পেসটির চারপাশের ল্যান্ডস্কেপ ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে ভবনটিকে এর চারপাশের সাথে একত্রিত করে। এই উত্তলিত ল্যান্ডস্কেপটি একটি অবতল প্রাঙ্গণ তৈরি করে যার ওপর মূল ভবনটি রয়েছে। |
ছবি : ছেদচিত্র AA' ও BB' |
আশেপাশের কারখানাগুলোর কোলাহলপূর্ণ কার্যকলাপের মধ্যে প্রাঙ্গণটি ভবনের চারপাশে শান্ত এবং সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে। কারখানাগুলোর শব্দ হতে মসজিদের ভেতরকার পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে ফর্মের সম্মুখভাগগুলি শক্ত, একশিলা এবং মজবুতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের মূল প্রর্থনার জায়গাটিকে বাইরের পরিবেশ থেকে আলাদা রাখতে বৃত্তাকার অর্ধ-উন্মুক্ত স্পেসটি উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। ভবনটির নীচের স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি অংশটিও বাহির থেকে পরিলক্ষিত নয়, বরং মসজিদ প্রাঙ্গণের অর্ধ-উন্মুক্ত স্পেসটির সাথে যুক্ত, যা গতানুগতিক মসজিদ হতে ভিন্ন প্রকৃতির এবং বিদ্যমান স্থানের জন্য কার্যকরী। অপারেবল কাঁচের দরজাগুলির মধ্য দিয়ে বাতাস চলাচল করে যা অভ্যন্তরীণ স্থানটিকে ঠান্ডা এবং প্রশান্ত রাখে। মসজিদের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো প্রার্থনার মাধ্যমে সকলে একত্রিত হওয়া যা এ প্রকল্পে সফলভাবে আয়োজন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, নির্মিত ফর্মটি মসজিদ স্থাপত্যের একটি নতুন সংযোজন হিসেবে বিবেচনা করা যায়, যা সহজ তবে অনন্য, সপ্রতিভ তবে একই সাথে চারপাশের সাথে মিশে যায়। |
সহকারি সম্পাদনায় : স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ (B. Arch. , SUST) নির্ণয় উপদেষ্টা লিমিটেড, পান্থপথ |