‘স্থাপত্য ও নির্মাণ’-এ জিন্দা পার্ক প্রকল্পটির মাস্টারপ্ল্যান, এন্ট্রেন্স কোর্ট , প্রাইমারি স্কুল ভবন এবং লাইব্রেরি ভবন সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছিল। এ পর্বে, জিন্দা পার্কের আরও দুটি স্থাপনা - কুসুম বাড়ি এবং ক্যাফেটেরিয়া সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা দেয়া হলো।
প্রকল্পের তথ্যসমূহ: প্রকল্পের নাম: কুসুম বাড়ি প্রকল্পের স্থান: জিন্দা পার্ক, পূর্বাচল ক্লায়েন্ট: জিন্দা পার্ক খরচ: ৫০ লক্ষ টাকা নির্মিত সময়: ২০১৫ ছবি উৎস: City Syntax |
ছবি: কুসুম বাড়ির সামনের দিকের ভিউ |
জিন্দা পার্কের কুসুম বাড়িটি একটি মনোরম আবাসিক দোতলা বাড়ি, যেটি তবারক হোসেন কুসুম -এর জন্য বিশেষভাবে নকশা করা হয়েছে। ইট, মর্টার, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি মনোমুগ্ধকর বাড়িটি পুরো জিন্দা পার্কের একটি বিশেষ আকর্ষণ বলা যায়। একইসাথে কিছু জায়গায় কাঠের ব্যবহার বাড়িটিকে আরোও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কুসুম বাড়িটি পুরনো দিনের গ্রামের বাড়ির আধুনিক রূপ। এতে খোলা উঠোন রয়েছে, হাঁটার পথ রয়েছে। বাড়িটির বাইরের দিকে একটি বড় উঠোন এর মাঝে একটি ছোটো জলাধার আছে, যাকে শাপলা পুকুর বলা হয়। |
ছবি: কুসুম বাড়ির গ্রাউন্ড ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: কুসুম বাড়ির সামনের এলিভেশন |
ছবি: ছেদচিত্র AA |
উঁচু ছাদ, বড় জানালা এবং তার উপরের খড়খড়ি-সবকিছুর সমন্বয়ে নিচতলার বসার ঘরটি এমনভাবে সাজানো যেন, যে কেঊ এখানে একটি আরামদায়ক পরিবেশে সময় কাটাতে পারে। বড় জানালাগুলো বাতাস চলাচলের কাজ করে, একইসাথে বাইরের পরিবেশের সাথে ভেতরের একটি সংযোগ ঘটায়। বড় উঠোন, জলাধার, সবুজের সমারোহ - সবকিছু বাড়িটির ভেতর একটি রূপকথার আবহ তৈরি করে। খাওয়ার জায়গাটি এবং রান্নাঘরটি মূল বাড়ির জায়গাটি হতে একটু আলাদা। একটি বড় গোল কাঠের টেবিল এবং কাঠের তৈরি বসার ব্যবস্থা খাওয়ার জায়গাটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। |
ছবি: কুসুম বাড়ির খাওয়ার জায়গা (ডাইনিং স্পেস) |
ছবি: কুসুম বাড়ির উঠোন |
ছবি: কুসুম বাড়ির শাপলা পুকুর |
ছবি: খাওয়ার জায়গা থেকে ভিউ |
খাওয়ার জায়গার পাশেই রান্নাঘর রয়েছে এবং এক কোণায় একটি শৈল্পিক সিঁড়ি রয়েছে, যা দিয়ে খাওয়ার জায়গা থেকে ছাদে যাওয়া যায়। অভ্যন্তরীণ উঠোন হতে খাওয়ার জায়গাটি কয়েক ধাপ নিচে নামানো, আবার মূল বাসাটি কয়েক ধাপ ওপরে ওঠানো। এইরকম ধাপ-এর উঠানামা - বাড়িটির ভেতর একটি ভিন্ন আকর্ষণ তৈরি করে। ওপরতলার শোবার ঘরের সাথে ছোট একটি বসার জায়গা রয়েছে। ঘরটির বারান্দা থেকে পুরো উঠোনটির খুব সুন্দর একটি ভিউ পাওয়া যায়।মাঝের ম্যাজেনাইন ফ্লোরে আরেকটি ছোট ঘর রয়েছে। উঁচু সিলিং এবং গ্লাসবিহীন প্রশস্ত কাঠের জানালাগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস কক্ষের ভেতর প্রবেশ করতে পারে। সমগ্র বাড়ি জুড়ে অসংখ্য প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে, যা বাড়িটিতে একটি শান্ত-শীতল আবহ ফুটিয়ে তোলে। |
ছবি: শৈল্পিক সিঁড়ি যা দিয়ে ছাদে যাওয়া যায় |
ছবি: স্থপতি সায়েদুল হাসান রানার স্কেচ করা কুসুম বাড়ি |
প্রকল্পের তথ্যসমূহ: প্রকল্পের নাম: ক্যাফেটেরিয়া প্রকল্পের স্থান: জিন্দা পার্ক, পূর্বাচল ক্লায়েন্ট: জিন্দা পার্ক খরচ: ২ কোটি টাকা নির্মিত সময়: ২০১৯ ছবি উৎস: City Syntax |
ছবি: ক্যাফেটেরিয়ার সামনের দিকের ভিউ |
জিন্দা পার্কের ক্যাফেটেরিয়াটি একটি দোতলা ভবন। নিচতলায় খাওয়ার জায়গাটির পাশে একটি ছোট স্ন্যাকস এবং জুসবার রয়েছে। খাওয়ার জায়গার ঠিক মাঝ বরাবর একটি ডাবল-হাইট স্পেস রয়েছে। দোতলায় এই স্পেসটিতে একটি ছোট ব্রীজ কানেকশন রয়েছে। এ ডাবল-হাইট স্পেসটি অনেকটা উঠোন-এর মতো আবহ তৈরি করে। পুরো ক্যাফেটেরিয়াটি কংক্রিট ব্লক দিয়ে তৈরি এবং দেয়ালে প্লাস্টার করা নেই। ডাইনিং হলের চারপাশের দেয়ালটি নিচু হওয়ায় ভেতরের পরিবেশের সাথে বাইরের সবুজ পরিবেশের একটি চমৎকার মিলবন্ধন রয়েছে। |
ছবি: ছেদচিত্র AA' |
ছবি: ক্যাফেটেরিয়ার গ্রাউন্ড ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: ক্যাফেটেরিয়ার ফার্স্ট ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: স্থপতি সায়েদুল হাসান রানার ক্যাফে-এর স্কেচ |
ছবি: জানালা এবং ছাদের ডিটেইল স্কেচ |
ছবি: স্থপতি সায়েদুল হাসান রানার ক্যাফেটেরিয়ার স্কেচ |
নিচতলা হতে দোতলায় ওঠার জন্য কাঠের তৈরি একটি সর্পিলাকৃতির সিঁড়ি রয়েছে। দোতলায় মূলত দর্শনার্থীদের থাকার জন্য কিছু গেস্ট রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্পিলাকৃতির সিঁড়ি বেয়ে উঠে প্রথমে একটি বড় ওয়েটিং লাউঞ্জ রয়েছে এবং এর দু’পাশে দুটি উইংস-এ গেস্ট রুমগুলো রয়েছে। প্রতি উইংস-এ ৬টি গেস্ট রুম রয়েছে, এর মধ্যে ২টি কাপল রুম রয়েছে এটাচ টয়লেট সহ এবং ৪টি গেস্ট রুম রয়েছে, যেগুলো সাধারণত জিন্দা পার্কে ঘুরতে আসা গ্রুপগুলোর থাকার জন্য নকশা করা হয়েছে। দুটি উইংস-এই কমন টয়লেটের জায়গা রয়েছে। গেস্ট রুমগুলো উত্তর-দক্ষিণ বরাবর এবং কমন টয়লেটগুলো পূর্ব-পশ্চিম বরাবর রাখা হয়েছে। কংক্রিট ব্লক এবং কাঠের সমন্বয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে গেস্ট রুমগুলো নকশা করা হয়েছে। |
ছবি: দোতলায় ব্রীজের একপাশ থেকে ভিউ |
ছবি: দোতলায় ব্রীজের অপরপাশ থেকে ভিউ |
ছবি: দোতলায় ওয়েটিং লাউঞ্জ |
ছবি: ক্যাফেটেরিয়ার অভ্যন্তরীণ খাওয়ার জায়গার ভিউ |
'স্থাপত্য ও নির্মাণ' এবং 'নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর' - এর দলের সদস্যরা |
ছবি: দলের সদস্যরা |
সম্পাদনায়: স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ |