প্রকল্পের স্থানঃ ১৪ পশ্চিম শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা ১২১৬ শিক্ষার্থীর নামঃ মাহাবুব জামিল মিশেল স্টুডিওঃ X (থিসিস) প্রকল্পের সালঃ ২০২২ স্টুডিও শিক্ষকঃ জিয়াউল ইসলাম, উম্মে তাহমিনা হক স্টুডিও সুপারভাইজারঃ নাওশাদ এহসানুল হক বিভাগীয় প্রধানঃ ডা. নবনিতা ইসলাম |
ধারণাগত বিবৃতিঃ “আলো এবং ফ্রেমিং এর সাথে মানুষের মিথস্ক্রিয়া একটি ফটোজেনিক স্থানের চূড়ান্ত সারাংশ তৈরি করে।” প্রকল্পের সংক্ষিপ্তসারঃ
|
ছবি: ফটোগ্রাফির সময়কাল |
সাইফুল হক ওমি দাবি করেন যে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই তাদের গোমট/গাম্ভীর্যতা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। এটি ছাত্র বা শুভানুধ্যায়ীদের প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের বলে মনে করতে বাধা দেয়। তার মতে, কল্পনাপ্রসূত চিন্তাভাবনার এমন একটি স্থান তৈরি করা প্রয়োজনীয়, যা জীবনের বিভিন্ন স্তরের ব্যাক্তিদের স্বাগত জানায় বা তাদেরও নিজেদের বলে দাবি করতে উৎসাহিত করে। তিনি আরও বলেন, চলচ্চিত্রসহ সব ধরনের শিল্পকর্ম একই সূত্রে গাঁথা। এগুলোর উন্নতি লাভের জন্য দরকার সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। কউন্টার ফটো এর লক্ষ্য হলো একজন ভালো ফটোগ্রাফার তৈরি করবার ক্ষেত্রে একটি মানদন্ড নির্ধারণ করা। কউন্টার ফটো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এটি সমস্ত ফটো উৎসাহীদের জন্য একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে, যারা শুধুমাত্র আনন্দের জন্য ফটোগ্রাফির চেষ্টা করছে না বরং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। শুরু থেকেই কাউন্টার ফটো বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাষ্ট্র কর্তৃক সংগঠিত সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং তার সাহসী প্রকল্পগুলির মাধ্যমে নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রথম থেকেই কউন্টার ফটোকে তার রাজনৈতিক বিরোধিতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল এবং এটি কাউন্টার ফটোকে তার নিজস্ব শক্তিতে বহমান থাকতে সক্ষম করেছিল। |
আজকাল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ফটোগ্রাফি ক্লাব গড়ে উঠেছে। এটি বর্তমানে একটি অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে চলছে এবং ফলস্বরূপ ফটোগ্রাফির অনুশীলনটি সবার কাছে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং এই প্রেক্ষাপটেই কউন্টার ফটো একটি ইনস্টিটিউট তৈরি করছে, যা ফটোগ্রাফিকে আরও প্রাণবন্ত করতে তরুণদরে উৎসাহকে কাজে লাগাতে চায়। |
ছবি: ফটোগ্রাফির উক্তিসমূহ |
মিরপুর শেওড়াপাড়ায় অবস্থিত কউন্টার ফটো। যা বর্তমানে ৪৩২০ বর্গফুট জায়গায় কাজ করছে। তাদের আরেকটি লক্ষ্য হল মিরপুর শেওড়াপাড়ার মত আবাসিক এলাকায় ফটোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়া, যা ফটোগ্রাফি শিক্ষাকে সাংস্কৃতিক স্থানের কেন্দ্রে না রেখে সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কাজের সুযোগঃ |
ছবি: সাইট লোকেশন |
ধারণা গঠনঃ ফটোগ্রাফি একটি গল্প বলতে পারে, এটি সময়ের একটি মুহূর্ত ক্যাপচার করতে পারে, নথিভুক্ত করতে পারে এবং এটি শিল্প হতে পারে। ফটোগ্রাফির সামাজিক ও সৃজনশীল এর পাশাপাশি অনেক প্রযুক্তিগত ব্যবহার রয়েছে। আমরা কিভাবে ফটোগ্রাফি ব্যবহার করি এবং এর সাথে ইন্টারেক্ট করি তা অত্যন্ত ব্যাক্তিগত এবং এক ব্যাক্তি হতে অন্য ব্যাক্তির মধ্যে আলাদা হবে। |
ছবি: ধারণাগত অংকন |
আসুন ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত তিনটি বিষয়ে মনোনিবেশ করি। প্রথম এবং সর্বাগ্রে, আলো ফটোগ্রাফির একটি গুরুত্বর্পূণ উপাদান। এটি মাথায় রেখে, আমি সর্বদা মনে রেখেছি পুরো প্রতিষ্ঠান জুড়ে আলোর একটি সুসম বিতরণ হওয়া দরকার। পর্যাপ্ত আলো থাকলে শিক্ষার্থীরা যে কোন উপায়ে ফটোগ্রাফি অনুশীলন করতে পারে। তারাও দেখে মুগ্ধ হতে পারে কিভাবে আলো প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়। তদুপরি ফটোগ্রাফে একটি নির্দিষ্ট পরিবেশ তৈরিতে ফ্রেমিং কতটা গুরুত্বর্পূণ সে সম্পর্কে আমরা অবগত। সেই দিক বিবেচনায় স্থাপনার সকল দিক থেকে দৃষ্টিসীমা যাতে এক একটি ফ্রেম তৈরি করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এই ফ্রেমিং দ্বারা যাতে স্থাপনার ভিতরের বেশ কিছু অংশগ্রহণমূলক স্থান তৈরী হয় সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে ফটোগ্রাফির জন্য অন্য আরেকটি গুরুত্বর্পূণ বিষয় হলো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। সেই কথা মাথায় রেখে স্থাপনার বিভিন্ন স্থানে যাতে শিক্ষার্থীরা একে অপরে তাদের অর্জিত জ্ঞান নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলোচনায় সামিল হতে পারে সেই ধরনের স্থান তৈরি করা হয়েছে। |
ছবি: কাজের সুযোগ ১ |
ছবি: কাজের সুযোগ ২ |
নকশা বিবেচনাঃ পুরো স্থানটির সম্মুখভাগের আংশটি ছিল অনেকটাই রৈখিক, আর সেই দিক বিবেচনা করেই ৪৮’ এর রৈখিক অংশকে সমান ১৬’ এর তিনটি অংশে ভাগ করি। এর মধ্য দিয়ে সমান্তরাল কিছু গ্রিড পেয়ে যাই, যা পরবর্তীতে কাজের সুবিধা প্রদান করেছে। পাশাপাশি এই গ্রিডগুলো থেকে পেয়ে যাই এক একটি মডিউল ইউনিট। |
ছবি: নকশা বিবেচনা |
ছবি: ডিটেইল প্রোগ্রাম |
ছবি: FAR ক্যালকুলেশন |
পুরো স্থানটিকে তিনটি বলয়-এ ভাগ করি। সেবা, পরিবেশন এবং সঞ্চালন - এই তিনটি আলাদা অংশ যা পূর্বের ঐ ৪৮’ অংশের বিভাজনকে সমর্থন করে এবং রীতিকেই অনুসরণ করেছে। পুরো স্থানটিকে ভূমি থেকে কিছুটা উপরে তুলে দেবার চিন্তা ছিল, যাতে করে এলাকার লোকজন বাধাহীনভাবে ইনস্টিটিউট-এ প্রবেশ করতে পারে এবং তারা যেন প্রদর্শনীগুলো স্বতস্ফূর্তভাবে উপভোগ করতে পারে। |
ছবি: গ্রাউন্ড ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: বেসমেন্ট ২ |
ছবি: বেসমেন্ট ১ |
ছবি: সেমি বেসমেন্ট |
ছবি: ফার্স্ট ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: সেকেন্ড ফ্লোর প্ল্যান |
ছবি: থার্ড ফ্লোর প্ল্যান |
ভবনটির নিচ দিয়ে চলমান রাস্তার অংশটি উপরের অংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যাতে করে শিক্ষার্থীরা এলাকাবাসীদের চালচলনের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে এবং তাদের অর্জিত জ্ঞানকে এলাকাবাসীর সাথে আদান প্রদান করতে পারে। ভবনটির সামনের অংশটি, অর্থাৎ পশ্চিম দিকের সম্মুখভাগে লেগো এর মতো পিক্যালেটেড করে তৈরি করা হয়েছে যা এক একটি ফ্রেমিং এর মতো দেখায়। তাছাড়া পশ্চিম দিকের তাপকে প্রশমন করতেও এটি ভূমিকা পালন করছে। |
ছবি: ছেদচিত্র AA |
ছবি: ছেদচিত্র BB |
জুরি মন্তব্যঃ পুরো প্রকল্পটির সাথে শিক্ষার্থীর সংবেদনশীলতা, সূক্ষ্ম এবং লেগে থাকার একটি উৎসাহী অনুপ্রেরনা প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকল্পটি ঐ শহরের অনুবন্ধের সাথে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পেরেছে। ভবনটি কাঠামোগত দিক থেকে বেশ দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে, কাঠামোর পাশাপাশি স্পেসগুলো সুন্দরভাবে মানিয়ে নিয়েছে এবং কাঠামোগুলি স্পেস এর স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিতে আরো কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। প্রকল্পটিতে ব্যবহৃত ইট এবং কংক্রিট, এর পারিপার্শ্বিক অনুবন্ধের সাথে মিলে যায়। সর্বোপরি, এই প্রক্রিয়াতে প্রকল্পটি সূক্ষ্ম, সংবেদনশীল এবং আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতার একটি যাত্রা তৈরি করে। |
সম্পাদনা: স্থপতি ফাইজা ফাইরুজ |